মার্কিন অবরোধ: ইউরোপকে পাশে পাওয়ার বিকল্প নেই ইরানের

ইরানকে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অবরোধের কবলে ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবেই গত ১৫ মে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক ঘোষণায় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ আরেকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে গত ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি: এএফপি

ইরানকে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অবরোধের কবলে ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবেই গত ১৫ মে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক ঘোষণায় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ আরেকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ইসরায়েলের আতঙ্ক শক্তিশালী ‘হিজবুল্লাহ’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি দিতে চায় আমেরিকা। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ভাষায় ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ হিজবুল্লাহকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দেয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে। ইরানের সঙ্গে ক্ষমতাধর ছয় দেশের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন এই পথেই হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিশানা যদিও সরাসরি ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে যায়নি, তারপরও গত ৮ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেশটির উপর অবরোধ আরোপেরই ইঙ্গিত বহন করছে। আর এতে ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক খাতে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ইরান।

ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কারণ নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সকল লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ফ্রান্সের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘টোটাল’ বলছে,যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট যদি তাদের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে না নেয়, তাহলে আগামী নভেম্বরের আগেই তারা ইরান থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন প্রকল্পটি গুটিয়ে নেবে। এছাড়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেলের ট্যাংকার প্রস্তুতকারী ড্যানিশ প্রতিষ্ঠান মায়ের্স্কও ইরানে তাদের সমুদয় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদের সঙ্গে একই সুরে কথা বলছে জার্মান বিমা কোম্পানি এলিয়ানজ ও ইতালীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী কোম্পানি ড্যানিয়েলিও।

শুধু তাই নয়, ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সীমিত করে দেওয়ার ব্যাপারে ইউরোপকে চাপে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে করে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ইরান আমদানি-রপ্তানির কাজ চালিয়ে যেতে না পারে, এমনকি আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ইরানকে সমস্যায় ফেলতে চাইছে তারা।

তবে ইরানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ইউরোপের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক আরও জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা চাইছেন ইউরোপকে পাশে নিয়ে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিটি বহালের চেষ্টা অব্যাহত রাখুক ইরান। তেহরান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এক ঊর্ধ্বতন বিশ্লেষক বলেন, ‘মার্কিন অবরোধ থেকে নিজেদের রক্ষায় ইউরোপকে পাশে পাওয়ার ক্ষেত্রে ইরানকে যাবতীয় প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক ব্যাপারেও বেশি মনোযোগ দিতে হবে ইরানকে।’

সম্প্রতি ইইউ কমিশনার ক্যানেটের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ইইউর রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পরমাণু চুক্তিটির শেষ রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চাইলে ইইউকে আরও শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান নিতে হবে ও ইরানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Cox’s Bazar Rail Station

Cox’s Bazar Rail Station: A modern marvel awaits travellers

The recently constructed Cox’s Bazar rail station aims to attract more tourists to the country’s renowned destination, the Cox’s Bazar sea beach.

17h ago