ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞী

রহিমা বেগমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার গেন্ডারিয়ার ছোবা পট্টি বস্তিতে। প্রায় দুই দশক আগে ছোট ছোট পুরিয়ায় গাঁজা ও হেরোইন বিক্রির মাধ্যমে মাদক ব্যবসা শুরু করেছিলেন। নোংরা বস্তিতে বড় হয়ে তিনি এখন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি বাড়ির মালিক। চলাফেরা করেন দামি গাড়িতে। ব্যাংকেও রেখেছেন অঢেল টাকা।
ঢাকার মাদক সম্রাজ্ঞী রহিমা বেগম
রহিমা বেগম

রহিমা বেগমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার গেন্ডারিয়ার ছোবা পট্টি বস্তিতে। প্রায় দুই দশক আগে ছোট ছোট পুরিয়ায় গাঁজা ও হেরোইন বিক্রির মাধ্যমে মাদক ব্যবসা শুরু করেছিলেন। নোংরা বস্তিতে বড় হয়ে তিনি এখন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি বাড়ির মালিক। চলাফেরা করেন দামি গাড়িতে। ব্যাংকেও রেখেছেন অঢেল টাকা।

বছরের পর বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে রহিমা (৪৭) এখন ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হয়ে উঠেছেন। অন্তত পুলিশ তাকে সেভাবেই চেনে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকাতেও রয়েছে তার নাম। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার শীর্ষ পাঁচ জন মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রহিমা অন্যতম।

এর পরও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ডিএনসি’র পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রহিমার নামে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যার অভিযোগে মামলা। তার স্বামীর নাম হজরত। সেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী।

তিনি আরও জানান, ২০০০ সালে হজরতের সঙ্গে রহিমার প্রথম সাক্ষাৎ। তখন থেকেই দুজনে মিলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, রহিমার মাদক ব্যবসায় অন্তত ৩৫ জন যুক্ত রয়েছেন। এই বিশাল চক্রটি প্রতি মাসে মাদক থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে।

চক্রটির বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও রহিমা বরাবরই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে থেকে গেছেন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই রহিমার বাড়ি, গাড়ি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন: প্রশ্নবিদ্ধ বন্দুকযুদ্ধ

রাজধানীর গেন্ডারিয়া ও শনির আখড়া এলাকায় রহিমার তিনটি বাড়ি রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব জানলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কিছুই করতে পারেননি। ডিএনসি’র পরিদর্শক হেলাল উদ্দিনের ভাষ্য, ‘আত্মীয়দের নামে থাকায় রহিমার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।’

রহিমার মাদক সাম্রাজ্যের খোঁজে চলতি সপ্তাহে গেন্ডারিয়ায় গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে প্রায় সবাই রহিমার সম্পর্কে জানেন। তবে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়।

এলাকার লোকজন মুখ না খোলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, রহিমার বিরুদ্ধে কথা বলেছিল এরকম কয়েকজনের হাত পা ভেঙে দেওয়া এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

এরকমই একজন আসলাম শিকদার (৫৫)।

জানা যায়, মাদক ব্যবসায় আসলাম একসময় রহিমার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। কিন্তু বিশ্বাসভঙ্গ করে সে রহিমাকে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। আসলামের গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে তাকে ‘খুন’ করিয়ে দেয় রহিমা। ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর দনিয়া এলাকায় বাড়িতে আসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রহিমার স্বামী হজরতসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আসলাম হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয় বলে পুলিশ ও ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে সবাই বলেছেন, রহিমার নির্দেশে তারা আসলামকে হত্যা করে। এর পর গত বছর জানুয়ারি মাসে রহিমাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ঢাকার একটি আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।

ওই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মইনুল ইসলাম বলেন, রহিমা কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তার পরিকল্পনামাফিক আসলামকে হত্যা করা হয়েছিল।

এই হত্যার ঘটনা ছাড়াও জহির নামের একজন রহিমার একটি ইয়াবা চালানের কথা পুলিশের কাছে ফাঁস করে দিয়েছিল। রহিমা তার হাত পা ভেঙে দিয়েছিল।

ডিএনসির পরিদর্শক হেলাল বলছিলেন, রহিমাকে ধরার জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। ‘সে অন্তত ৬০টি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে। একটি নাম্বার টানা দুই মাসের বেশি ব্যবহার করে না। এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা কঠিন, তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও রহিমার লোকজন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দনিয়া ও গেন্ডারিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা দিনের বেলা গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই মাদক বিক্রি শুরু করে। এই প্রতিবেদক নিজেও গত বুধবার রাত দেড়টায় গেন্ডারিয়া বস্তিতে মাদক বিক্রি হতে দেখেছেন।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
Electricity price hike

40MW electricity import from Nepal gets govt nod

The government approved the purchase of 40 megawatts of electricity from Nepal using the power grid of India.

1h ago