আফগানিস্তানের স্পিনেই কাবু বাংলাদেশ
মাথা খাটিয়ে বল করতে না পারায় মন্থর উইকেটে লক্ষ্যটা হয়ে গিয়েছিল বড়। তবে ছিল নাগালের মধ্যেই। দরকার ছিল বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং। তা আর হয়নি। আফগানদের স্পিনে কাবু হয়ে খেলাই জমাতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে বড় ব্যবধানে।
রোববার ভারতের দেরাদুনের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের কাছে ৪৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগানদের করা ১৬৭ রানের মুক্ষোম জবাব দেওয়ার মতো ব্যাট করেছেন কেবল লিটন দাস আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাকিদের ব্যর্থতায় এক ওভার বাকি থাকতে সাকিব আল হাসানের দল গুটিয়ে যায় ১২২ রানে।
আফগান তিন স্পিনারের ১১ ওভার থেকে ৬ উইকেট দিয়ে মাত্র ৫৪ রান নিতে পেরেছে বাংলাদেশে। অনুমিতই ভাবেই সবচেয়ে বিষাক্ত ছিল লেগ স্পিনার রশিদ খানই। ৩ ওভারে বল করে ১৩ রান দিয়ে রশিদ নেন ৩ উইকেট। মুজিব-উর-রহমান ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। মোহাম্মদ নবীর ৪ ওভার থেকে ২১ রান উঠাতে দিয়ে ২ উইকেট খোয়ায় টাইগাররা।
আফগানিস্তানের আলোচিত দুই স্পিনার মুজিব আর রশিদ নিজেদের প্রথম বলেই পান উইকেট। রশিদ তার প্রথম দুই বলেই ফেরান মুশফিক ও সাব্বিরকে।
১৬৮ রানের লক্ষ্য নেমে প্রথম বলেই উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। মুজিবের বল দুনোমনো করে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিও হন তামিম ইকবাল। ওয়ানডাউনে নেমে ১৫ রান করে এলেবেলে শটে উইকেট ছুঁড়ে দেন সাকিব। আরেক ওপেনার লিটন ছিলেন চনমনে। খেলেছেন চমৎকার কিছু শট। মুজিবের বলে ব্যাট করছিলেন স্বচ্ছন্দে। তার ইনিংস দেখাচ্ছিল আশা। কিন্তু তাকে থামিয়েছেন আসলে আম্পায়ার। মোহাম্মদ নবীর বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন, ব্যাটে লাগাতে পারেননি। তবে ছিলেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। রিভিউ না থাকায় আম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি লিটন। তার ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংসটাই পরে থেকেছে সর্বোচ্চ হয়ে।
লিটনের আউটের আগের বলেই জীবন দিয়েছিলেন মুশফিক। তা আর কাজে লাগাতে পারেননি। একাদশ ওভারে বল করতে আসা রশিদের প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২০ রান করে। ঠিক পরের বলেই রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে কাবু সাব্বির রহমান। অনেকদিন পর দলে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে জুতসই জুটি গড়ে উঠেছি। মোসাদ্দেক ফেরেন ১৪ রান করে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদউল্লাহর ২৯ রানের ইনিংস থেমেছে শাপুর জাদরানের বলে।
এমনিতে মার খাওয়া এই পেসার শেষ দিকের উইকেটগুলো টপাটপ তোলে নিয়েছেন।
ব্যাটসম্যানদের বেহাল দশার দিনে অবশ্য আড়ালে পড়ে যাচ্ছে দলের কৌশল আর বোলারদের অবস্থা। ধীর গতির উইকেট দেখে আফগানরা খেলিয়েছেন অলরাউন্ডারসহ পাঁচ স্পিনার। বাংলাদেশ একাদশে ছিলেন তিন পেসার। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে উইকেটের চরিত্র আরও বুঝিয়েছিলেন সাকিবই। তবে তিনিই বল করতে এসে দারুণ দুই ওভার করা মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেককে এক ওভারের বেশি দেননি। নিজের এক ওভারে মাত্র ১ রান খরচায় ২ উইকেট মাহমুদউল্লাহর। মোসাদ্দেক তার ওভারে দিয়েছিলেন ৩ রান। অথচ পেসাররা খেয়েছেন বেদম মার। শুরুতে অবশ্য দারুণ বল করে রুবেলও পরে গিয়ে হারিয়েছেন খেই।
৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়েছেন আবু জায়েদ রাহি, ৩ ওভারে ৪০ দিয়ে দেন আবুল হাসান রাজু।
টস হেরে ব্যাটিং পেয়েও তাই সমস্যা হয়নি আফগানদের। মোহাম্মদ শেহজাদ ও উসমান গনির এনে দেওয়া ভালো শুরু ষোলআনা কাজে লাগান সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও শফিকুল্লাহ। ৩৭ বলে ৪০ করে থামেন শেহজাদ। তার বিদায়ের পর মাঝের ওভারে খেলায়ও ফিরেছিল বাংলাদেশ। তবে শেনওয়ারি ১৮ বলে ৩৬ আর শফিকুল্লাহ ৮ বলে ২৪ করে দলের সংগ্রহ নিয়ে যান ১৬৭ রানে। রান তাড়ায় যা বাংলাদেশের কাছে স্পর্শের বাইরেই থেকে যায়।
আন্তর্জাতিক অভিষেকে দেরাদুনের মাঠের পুরো গ্যালারিই ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। চার-ছয় বা উইকেট পড়ায় সব কিছুতেই উল্লাস। আফগানিস্তানের হোম ভেন্যু হলেও তারা তো আর সেখানকার স্থানীয় নয়। তাই তালি পেয়েছে বাংলাদেশও। বড় তালিটা আফগানদেরই। কেন টি-টোয়েন্টির র্যাঙ্কিংয়ে তারা এগিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রথম ম্যাচেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ১৬৮) ১৯ ওভারে ১২২ (তামিম ০, লিটন ৩০, সাকিব ১৫, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ২৯, সাব্বির ০, মোসাদ্দেক ১৪, হাসান ৫, নাজমুল ৪*, রুবেল ০, আবু জায়েদ ১; মুজিব ১/২০, শাপুর ৩/৪০, নবি ২/২১, করিম ১/২৭, রশিদ ৩/১৩)
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৭/৮ (শাহজাদ ৪০, গনি ২৬, স্টানিকজাই ২৫, নাজিবুল্লাহ ২, নবি ০, শেনওয়রি ৩৬, শফিকুল্লাহ ২৪, রশিদ ৬*, করিম ০, মুজিব ০*; আবু জায়েদ ১/৩৪, নাজমুল অপু ০/৩২, রুবেল ১/৩২, সাকিব ১/১৯, আবুল হাসান ২/৪০, মোসাদ্দেক ০/৩, মাহমুদউল্লাহ ২/১)।
ফল: আফগানিস্তান ৪৫ রানে জয়ী
Comments