বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: পরিচালকরা কে কোথায়
একটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য যাদের ওপর দায়িত্ব থাকে তারাই যে লুণ্ঠনকারী হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি।
৪৫০০ কোটি টাকার বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া বলতে ব্যাংকটির পাঁচ জন কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ।কিন্তু এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রয়েছেন যারা শুধুমাত্র উচ্চ পর্যায়ের আদেশ তামিল করেছিলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধারে কাছেও ছিলেন না তারা। ২০০৯ সাল পর্যন্ত লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি ডুবতে বসলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের প্রায় সবাই।
বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠন নিয়ে যতগুলো তদন্ত হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই বলা হয়েছে আব্দুল হাই বাচ্চু আক্ষরিক অর্থেই পরিচালনা পর্ষদের সহায়তায় লুটপাট চালিয়েছেন।
বেসিক ব্যাংকে যখন সাধারণ আমানতকারীদের টাকা লুট হচ্ছিল বাচ্চু তখন ১৫০ কোটি টাকা দিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ১১টি ট্রলার ভাসিয়েছিলেন। শুধু বাচ্চুই নন, তার সহযোগী ও পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্যদের পুরস্কৃত করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পদোন্নতি দিয়ে বসানো হয়েছে।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বসুকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছিল। এবছর জানুয়ারি মাসে তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। মার্চ মাসে সচিবের দায়িত্ব নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে শ্যাম সুন্দর শিকদারকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়। সেসময় তিনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনেরও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসে তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব করা হয়। গত বছরের ১৯ মে তাকে টেলিযোগাযোগ সচিব করা হয়।
কামরুন নাহারকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আনার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে সেখানেই অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখন তার দায়িত্বে রয়েছে বিশেষাতিয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ।
নীলুফার আহমেদ বেসিক ব্যাংকের পর্ষদে আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক-২ এর দায়িত্ব পালন করছেন।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সময় পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এআরএস লুব বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি এখন ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই এন্ড কো. (ডেসকো) এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
বেসিক ব্যাংকের বোর্ডে ছিলেন ইসলাম আফতাব কামরুল এন্ড কো. এর একেএম কামরুল ইসলাম। তিনি এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
বেসরকারি সেক্টর থেকে আরও যাদের বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিলেন আনিস আহমেদ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মুখপত্র উত্তরণ-এর এসিস্ট্যান্ট এডিটর ছিলেন তিনি। এখন তিনি মাসিক পত্রিকাটির নিউজ এডিটর।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী আক্তার হোসেন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন।
বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান থাকাকালে ফখরুল ইসলামকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে তাকে সচিব করা হয়। সম্প্রতি তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব রাজিয়া বেগম বেসিক পর্ষদের সদস্য ছিলেন। টুঙ্গিপাড়ায় একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে তারা দুর্ঘটনায় নিহত হন।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব একেএম রেজাউর রহমান পর্ষদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন।
Comments