সবাইকে খুশি করার বাজেট

দশমবারের মত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতে এই বাজেটে সমাজের সব স্তরের মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করবে সরকার।

দশমবারের মত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতে এই বাজেটে সমাজের সব স্তরের মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করবে সরকার।

অর্থমন্ত্রী আগামীকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করবেন তার আকার হবে ৪৬৪,৫০০ কোটি টাকা যা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বড়।

আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে জনকল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে চলেছে সরকার।

তবে এটিকে ‘নির্বাচনকালীন বাজেট’ স্বীকার নারাজ অর্থমন্ত্রী। সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব সরকারই ভোটারদের কথা মাথায় রাখে। প্রত্যেকটি বাজেটই হয় সবাইকে খুশি করতে।

আগামী অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহে বাজেটে বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এর জন্য নতুন করে কোনো করারোপ হচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, সুসংবাদ হলো সীমিত পর্যায়ে করের হার বাড়বে। এটাই সবচেয়ে বড় খুশির খবর।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে জনগণের ওপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়াতে চায় না সরকার। এ কারণে আগামী বাজেটে আয়করের হার বাড়বে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই কর কমানো হতে পারে।

আগামী বাজেটে ১১৯,২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এনবিআরকে ২৯৬,২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে। সে হিসাবে এনবিআরকে চলতি বাজেটের লক্ষ্য থেকে ৭১ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্য থেকে তা প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।

এর অর্থ হলো মোট রাজস্বের প্রায় ৯০ শতাংশ আসবে এনবিআর থেকে। কিন্তু এনবিআর কখনোই রাজস্ব আদায়ে এমন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরে এনবিআর-এর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ শতাংশ।

মুহিত মনে করেন, কর দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও করদাতাদের হয়রানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় এই পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে এনবিআর আগের চেয়ে দক্ষ হয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।

অন্যদিকে করপোরেট কর কমাতে চলেছে সরকার। ব্যাংকের করপোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। রাজস্ব কর্মকর্তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণে সুদের হার কমবে। ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বেসরকারি বিনিয়োগে।

আগামী বাজেটেই পণ্য ও সেবার ভ্যাট হারে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে নয়টি ভ্যাট হার আছে। এটি কমিয়ে পাঁচটি হারে নামানো হতে পারে। তবে ভ্যাট বাড়ানো হবে না বলেই জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে নির্বাচনের আগে ভোটারদের কথা বিবেচনা করে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কথা বলা যায়। আগামী অর্থবছরে এসব কর্মসূচির আওতায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় সরকার। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে না।

সরকারের এসব প্রকল্পের আওতায় যারা খাদ্য সহায়তা পায় তাদের সংখ্যা ১০ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯৬ লাখের আশপাশে করা হবে। চলতি অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে মোট বাজেটের ১৩.৫৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল টাকার অঙ্কে যা তা ৫৪,২০৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ হবে ৬৫,০০০ কোটি টাকা।

এছাড়াও আগামী বাজেটে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল লিংক ও মেট্রোরেল প্রকল্পের মতো নয়টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে বিশেষ নজর থাকবে সরকারের। এর জন্য বরাদ্দ থাকবে ৩২,৫৫৫ কোটি টাকা যা প্রক্কলিত উন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশ। সেইসঙ্গে বেসরকারি প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের অবসরকালীন পেনশনের আওতায় আনার জন্যও একটি রূপরেখা দিবেন অর্থমন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago