বাজেটে গুরুত্বহীন শিক্ষাখাত

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর পরই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষানীতির লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ছয় শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাবিদরা।

জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে যে অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে তা আগামী বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ।

কিন্তু প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়লেও শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ থাকছে তা গত কয়েক বছর ধরে আনুপাতিক হারে কমেছে। নয় বছর আগে মোট বাজেটের যত শতাংশ শিক্ষাখাতের জন্য দেওয়া হয়েছিল এখন এই খাতে বরাদ্দ সে তুলনায় কম। তখন শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১২.৬ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। আর গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে ৫৩,০৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন যা বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১.৪১ শতাংশ ও জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাজেট বক্তৃতায় বেশি কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এর একটি হলো নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এর জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ থাকে তার বড় একটি অংশই যায় অনুন্নয়ন খাতে। আগামী অর্থবছরে এরকম অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭,৯২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫,৫৬২ কোটি টাকা যাবে শুধুমাত্র শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে।

ঢাকা ঘোষণাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ তার জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউনেস্কোও এই পরিমাণ বরাদ্দের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। কিন্তু গত ১০ বছরের বাজেটের দিকে তাকালে দেখা যায় শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ১০-১২ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ। আর জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে গত ১৫ বছরে শিক্ষাখাতে ব্যয় ছিল মাত্র ২ শতাংশ যা এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম।

পাশ্চাত্যসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি ব্যয় করে। ভারত করে তাদের জিডিপির ৩.৫ শতাংশ থেকে ৩.৭ শতাংশের মতো। পাকিস্তান করে ২.৮ শতাংশ, আমেরিকা করে ৫ শতাংশ, ইংল্যান্ড করে ৫.৬ শতাংশ, ব্রাজিল করে ৫.৬ শতাংশ, ইরান ৪.৭ শতাংশ, নেপাল ৩.৭ শতাংশ আর চীন করে ৪ শতাংশের ওপরে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, গত এক দশক ধরে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে। সেই তুলনায় শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল রয়ে গেছে। তারা বলছেন, শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষাখাতে বিশেষ করে শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বাজেটে শিক্ষাখাতের অবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, নির্বাচনের বছর হওয়ায় যোগাযোগ, অবকাঠামো ও জ্বালানি খাত গুরুত্ব পাওয়া স্বাভাবিক হলেও শিক্ষাখাতকে অবহেলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার বড় অংশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় চলে যাবে।

তিনি মনে করেন, দেশের শিক্ষাখাতের আকার বড় হওয়ায় এর পরিচালন ব্যয় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একই সময়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, পঠন-দক্ষতা বাড়াতে আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, পরিমাণগত দিক থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের সমস্ত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ মানের দিকে। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে জিডিপির ৫-৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের পক্ষে তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Several injured as police disperse JnU protesters in Kakrail

At least 25 students were taken to DMCH after suffering injuries from baton charges or falling ill due to tear gas inhalation

Now