‘বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে ভারতীয় হাত’
ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই সাফল্যের পেছনে দুজন ভারতীয়ের হাতকে বড় করে দেখছে দেশটির গণমাধ্যম। যদিও বিসিবির নারী ক্রিকেট কমিটির গেম ডেভলেপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতে উন্নতির শুরুটা আরও আগে।
বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ অনুজ জৈন ভারতের সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটার। টাইগ্রেসদের সহকারী কোচ দেবিকা পালশিখরও ভারতীয়।
এশিয়া কাপে অপ্রতিরোধ্য ভারতকে দুবার হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অনুজের কৃতিত্বকে বড় করে দেখছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তারা ‘দ্য ইন্ডিয়ান হ্যান্ডস ইন বাংলাদেশ সাকসেস’ শিরোনামে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যদিও অনুজের আগে বাংলাদেশ দলে যুক্ত হন দেবিকা।
মেয়েদের এশিয়া কাপে এর আগে ভারত ছাড়া কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এমনকি এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে কখনো কেউ ভারতকে হারাতে পারেনি। এবার গ্রুপ পর্ব ও ফাইনাল দুই দেখাতেই হারমানপ্রিত কাউরদের হারিয়ে দেয় সালমা খাতুনের দল। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, এশিয়া কাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টালমাটাল বাংলাদেশের মেয়েদের ভোজবাজির মতো পাল্টে দিয়েছেন অনুজ। নিজেদের প্রতিবেদনে তারা লিখেছে, ‘মাত্র তিন সপ্তাহ অনুশীলন করিয়ে অনুজ একটা পুচকে দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিয়েছেন।’
এবার এশিয়া কাপ দিয়েই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ শুরু করেন অনুজ। আর দেবিকা বাংলাদেশ দলে যুক্ত হন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের খানিক আগে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ ছিলেন ডেভিড ক্যাপল। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পাঁচ ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টির সবগুলোই হারে বাংলাদেশ।
তবে কোন কিছুই ভোজবাজির মতো হয়নি বলে মনে করেন বিসিবি নারী ক্রিকেট কমিটির গেম ডেভলেপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম। এশিয়া কাপের আগে কেবল তিন সপ্তাহের অনুশীলনে নয়, বাংলাদেশের উন্নতি শুরু হয়েছে তারও আগে। ফল খারপ হলেও বাংলাদেশের উন্নতি শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে।
সোমবার সকালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপ জয়ী মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে বেরুচ্ছিলেন ফাহিম। ব্যস্ততার মধ্যেও মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেবল ফলাফলটাই দেখেন। দক্ষিণ আফ্রিকাতে মেয়েরা হারলেও প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছিল। সেই উন্নতির প্রকাশ পাওয়া গেছে এশিয়া কাপে।’
ফাহিম জানান, এই সময়ে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং নিয়েই ভুগতে হতো সালামা-রুমানাদের। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করায় পাওয়া গেছে এশিয়া কাপের সাফল্য। তবে ফাহিমের মতে বাংলাদেশের মূল উন্নতি হয়েছে মানসিকতায়, ‘ব্যাটিং নিয়ে কাজ করা হয়েছে, সেটাই মূল কারণ না। ওদের মানসিকতা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। আমি আবারও বলব দক্ষিণ আফ্রিকাতেই কিন্তু আমরা ক্রমাগত উন্নতি করছিলাম সেটা স্কিলের দিক থেকে এবং মানসিকতায়। স্কিলের প্রয়োগ ঠিকভাবে করতে পারা বা না পারা কিন্তু মানসিকতার ব্যাপার।’
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে মানসিকতায় উন্নতির কথা বলেন অনুজও, ‘বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েই দ্রুত একটা উন্নতি করার চাহিদা ছিল। দলটি একটি খারাপ অবস্থায় ছিল। আমি চেষ্টা করেছি তাদের মনোবল দৃঢ় করতে।’
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৬৩ রানে অলআউট হয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই বদলে গেছে চিত্র। একে একে পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, মালোয়েশিয়া ও ফাইনালে আবার ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই বাংলাদেশের কোন দলের শিরোপা জেতার ঘটনা এটাই প্রথম।
Comments