বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা একাদশ
শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের ২১তম আসর। পুরো এক মাস মাঠে আলো ছড়াবেন সেরা তারকারা। এর আগের ২০ আসরে ফুটবলের এই মহা উৎসবকে রাঙিয়েছেন আরও অনেকে। তাদের মধ্যে থেকে ইতিহাসে স্থায়ী আসন পাওয়া ফুটবলারের সংখ্যাও অনেক। বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা একাদশ বানানো তাই ভীষণ ঝক্কির কাজ। কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া যায় এই চিন্তায় চলে যায় বিস্তর সময়। তাতেও এড়ানো যায় না বিতর্ক। আমাদের করা এই একাদশও সবার পছন্দ হবে না। থাকবে বিতর্ক। এই বিতর্কও আসলে প্রমাণ করে ফুটবলের ব্যাপকতা।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, আমাদের মতে বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা একাদশ-
লেভ ইয়াসিন : লেভ ইয়াসিনকে মনে করা হয় ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে চারবার বিশ্বকাপে অংশ নেন। পুরো ক্যারিয়ারে ১৫১টি পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন তিনি। জিয়ানলুইজি বুফন বা অলিভার কান শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও খানিকটা এগিয়ে প্রথম পছন্দে থাকছেন ইয়াসিন।
কাফু : সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক। ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪২টি ম্যাচও খেলেছেন তিনি। জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ। ওভার ল্যাপ করে যখন তখন দলের আক্রমণে সহয়তা করতে পারতেন। তবে এ পজিশনে জিজাওমা সান্তোস বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
ববি মুর : অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। অধিনায়ক হিসেবেই জিতেছেন ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ। ইংলিশদের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের মূলনায়কই ছিলেন তিনি। তবে এ পজিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটু বেশিই। ইতালির ফ্রাঙ্কো বারোসি, ফ্যাবিও ক্যানেভারো ও আর্জেন্টিনার ড্যানিয়েল প্যাসেরেলাও ছিলেন প্রতিযোগিতায়। নেতৃত্ব গুণে খানিকটা এগিয়ে মুর থাকছেন সেরা তালিকায়।
পাওলো মালদিনি : সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারই মানা হয় তাকে। লেফট ব্যাকে ছিলেন অদম্য। দলের আক্রমণে যেমন সহয়তা করতেন তেমনি ডিফেন্সও আগলাতেন প্রাচীর হয়ে। চারটি বিশ্বকাপ খেললেও শিরোপাটা অধরাই থেকে যায় তার। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোস। কিন্তু অতিরিক্ত ওভার ল্যাপ করে মাঝে মধ্যেই দলকে বিপদে ফেলে দেওয়ায় এ পজিশনে মালদিনিই প্রথম পছন্দ।
ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার : জার্মানির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বলা হয় তাকে। পরিচয়টা ডিফেন্ডার কিন্তু মিডফিল্ডেও সাবলীল। ১৯৭৪ বিশ্বকাপটা জার্মানি পেয়েছিল তার হাত ধরেই। তবে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে তার সঙ্গে শক্ত লড়াই হতে পারে স্বদেশী লোথার ম্যাথিউজের। কিন্তু সেন্ট্রাল ব্যাক একজন নেওয়ায় এগিয়ে রাখা হয়েছে বেকেনবাওয়ারকেই। এই পজিশনে বিবেচনায় ছিলেন নেদারল্যান্ডসের ফ্রাংক রাইকার্ড ও ব্রাজিলের দুঙ্গাও।
জিনেদিন জিদান : গত শতাব্দীর সবচেয়ে সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার এই ফরাসী। ফ্রান্সকে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। প্রায় একক নৈপুণ্যে ২০০৬ সালে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। মাঝমাঠে কারিকুরি তো ছিলই, জিদান কাঁধ আর মাথা ঝাঁকিয়েও খেলতেন অনিন্দ্য সুন্দর ফুটবল।
জোহান ক্রুয়েফ : ১৯৭০ সাল থেকে ফুটবল বিশ্বে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসেন এ খেলোয়াড়। টোটাল ফুটবলের জনক বলা হয় তাকে। জিতেছেন তিনটি ব্যলন ডি’অর – ১৯৯৭১, ১৯৭৩ এবং ১৯৭৪। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দারুণভাবেই থাকতে পারেন ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, ব্রাজিলের জিকো হতে শুরু করে হালের আন্দ্রে পিরলো পর্যন্ত। ক্রুয়েফ এগিয়ে থাকছেন নতুন ধারার ফুটবলের জন্যে।
দিয়াগো ম্যারাডোনা : পৃথিবীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। বিতর্কিত খেলোয়াড়ও বটে। সাদামাটা একটি দল নিয়ে প্রায় একাই জিনিয়েছেন ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালেও তুলেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন ফুটবল ইতিহাসের সেরা গোলটি।
গারিঞ্চা: গারিঞ্চা মানে ছোট্ট পাখি। পাখির মতই যেন মাঝমাঠে উড়তেন তিনি। অসাধারণ ড্রিবলিং ক্ষমতার জন্য পেলে থেকেও অনেকে এগিয়ে রাখেন তাকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুই বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন দেশকে। ১৯৬২ বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই চোটে পড়ে পেলে ছিটকে পড়ায় ব্রাজিলকে একাই চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন গারিঞ্চা।
পেলে : ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড় জিতেছেন তিন তিনটি বিশ্বকাপ। স্ট্রাইকার পজিশনে অটো চয়েজ তিনি। ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার পেলে অফিসিয়ালি গোল করেছেন ৭৬০টি। সব মিলিয়ে ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮১ গোল।
ফেরেঙ্ক পুসকাস : ভাগ্যটা নেহায়েত খারাপ না হলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিটা পেয়েই জেতেন। হাঙ্গেরির সোনালী সময়ের অধিনায়ক জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৮৫ ম্যাচে করেছেন ৮৪ গোল। হাঙ্গেরিয়ান ও স্প্যানিশ লিগে ৫১৪ গোল করেছেন ৫২৯ ম্যাচ খেলে। তবে ব্রাজিলের রোনাল্ডো নাজারিও, জার্মানির গার্ড মুলার কিংবা আর্জেন্টিনার আলফ্রেদো দি স্তেফানোও ছিলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
ফুটবল বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা একাদশ : (৩-৫-২) লেভ ইয়াসিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন), পাওলো মালদিনি (ইতালি), ববি মুর (ইংল্যান্ড), কাফু (ব্রাজিল), ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার (পশ্চিম জার্মানি), গারিঞ্চা (ব্রাজিল), জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), জোহান ক্রুয়েফ (নেদারল্যান্ডস), দিয়াগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা), ফেরেঙ্ক পুসকাস (হাঙ্গেরি), পেলে (ব্রাজিল)
Comments