ঈদের দিন কলকাতায় কেমন কেটেছে আটকে পড়া বাংলাদেশি পর্যটকদের?

Bangladeshi tourists in Kolkata
কলকাতায় কাজে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ঈদ উদযাপন। ছবি: স্টার

কলকাতায় প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে আসেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি পর্যটক। এসব পর্যটকদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। খুব প্রয়োজন না থাকলে দুটি ঈদের কোনও ঈদেই হিন্দু-প্রধান কিংবা অবাঙালি অধিক্যে ভারাক্রান্ত কলকাতা শহরে থাকেন না এই পর্যটকরা।

তবে যারা নিতান্তই প্রয়োজনে থাকেন, পবিত্র এই উৎসবে তারা সময় কাটান নিজেদের মতো করেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দভাগ করার চেষ্টা করেন।

ঈদের দিন (১৬ জুন) সকালে ধর্মতলা লাগোয়া রেড রোড এবং টিপু সুলতান মসজিদে এমন অনেক বাংলাদেশি পর্যটকদেরই পাওয়া গেল, যারা প্রয়োজনের কারণে আটকে পড়েছিলেন কলকাতায়। আটকে গেলেও ঈদের একটু আনন্দ খুঁজতে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন। কলকাতার বাংলাদেশি সঙ্গী নিয়েই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

Bangladeshi tourists in Kolkata
কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় পরিবার-পরিজনদের নিয়ে একজন বাংলাদেশি পর্যটকের ঈদ। ছবি: স্টার

নিউমার্কেটের সামনে একটি ডাব বিক্রির দোকানে ঢাকার যাত্রাবাড়ির এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ রনি বসেছিলেন তার স্ত্রী শিউলি বেগম, সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে। কচি ডাবে স্ট্র লাগিয়ে পানিতে চুমুক দিতে দিতে রনি বলছিলেন, “দেখুন, ঢাকার মতো এখানে ঈদের আনন্দ পাবো না সেটা জানি। কিন্তু, এখানে শুধু ঈদের নামাজটাই সবাই একসাথে আদায় করেছি। এরপর মনে হচ্ছে যে যার মতো যার যার পরিবার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।”

“কোনও দোকান খোলা নেই- তাই বাধ্য দিয়েই ঈদের সকালে ডাবের পানির পান করছি,” বললেন মহম্মদ রনির স্ত্রী শিউলি বেগম। “বাংলাদেশকে খুব মিস করছি। তবে নতুন শহর তাই ঘুরে দেখতে মজা পাচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।

নিউমার্কেটের ভেতর দিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই সামনে পড়বে হার্টফোর্ড লেন। ওই গলিতে বিখ্যাত কয়েকটি চায়ের দোকান আছে। আছে তেলে-ভাজার দোকানও। অন্যদিন সকাল দশটায় থেকে খোলা থাকলেও এদিন হাতে গোনা মাত্র দুটি দোকান খোলা পাওয়া গেল। সেখানে বসে আছেন মিরপুরের বাসিন্দা রুবেল মিয়া। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে ডাক্তার দেখাতেই কলকাতায় এসেছেন। সকালে রেড রোডের ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। যেহেতু এই সময় বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় প্রায় আসেন না, সে কারণেই বড় খাবারের দোকানগুলো বন্ধ। এমনকি, বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকানও এই কদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। “তবে, চিকিৎসার করার ফাঁকে কলকাতায় জীবনের একবার হলেও ঈদের আমেজটা কেমন তা বোঝা গেল,” মন্তব্য রুবেলের।

এই লেনের পাশে রয়েছে টডি লেন। সেখানেও প্রায় একই অবস্থা। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পর্যটক নতুন জামাকাপড় পড়ে বসে আছেন। কলকাতায় কোথায় কোথায় বেড়াবেন সেটা ঠিক করতে পারছিলেন না। ওই দলে ছিলেন একজন সংবাদকর্মীও। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বললেন, “এই শহরে এসেছি শুধুই ঈদ উদযাপন করতে। ঐতিহাসিক রেড রোডে নামাজ পড়তে। আজ সারা দিন মুভি দেখবো, রাতে ক্লাবে ঘুরবো।”

বাবার ক্যান্সার হওয়ায় তাকে নিয়ে একমাস ধরে কলকাতায় রয়েছেন আব্দুল জব্বার মোড়ল। টিপু সুলতান মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে ফেরার পথে কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি বললেন, “বিপদে পড়েই থাকছি। বাবাকে সকালে নাস্তা করিয়ে জামাত থেকে ফিরছি হোটেল রুমে। ঈদের আমেজ নেই শহরে। মনেও শান্তি নেই। তবুও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।” বললেন, “আপনার পত্রিকার মাধ্যমে আমার জন্য সবার কাছে একটু দোয়া চাইবেন। যেন আমার আব্বা ভালো হয়ে যান”- এই বলেই দ্রুতই হেঁটে চলে গেলেন প্রতিবেদককে পাশ কাটিয়ে।

খুশির ঈদের দিনে অনেকেই অভিযোগ করছিলেন যে. বাংলাদেশি হোটেল-পাড়া বলে পরিচিত নিউমার্কেট এলাকার খাবারের দোকানগুলোতে ঈদের দিনে কোনও বিশেষ খাবারের আয়োজন ছিল না। তাই পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের মুখে অনেকেই দিতে পারেননি একটু সেমাই বা মিষ্টি জাতীয় কোনও খাবার।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা শ্যামলী বেগম বললেন, “আর যাই হোক এখানকার খাবারে হোটেলগুলোতে যদি ঈদের দিন সকালে একটু সেমাই-পায়েসের ব্যবস্থা করতো তা হলে ভালো হতো।” তার সঙ্গে নিয়ে আসা পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে হিমাতুল আরা মিমুর হাতে বাধ্য হয়ে একটি ঠান্ডা পাণীয় তুলে দিয়েছেন বলেও আক্ষেপ করেন সেই পর্যটক গৃহবধূ। একই বিষয়ে তীব্র অভিযোগ শোনা গেল তার স্বামী মহম্মদ ওয়াসীরের কণ্ঠেও।

Bangladeshi tourists in Kolkata
ঈদের দিনে কলকাতার হার্টফোর্ড লেন। ছবি: স্টার

ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা আবু সিনহা এবং তার স্ত্রী ফারহানা রশীদকে পাওয়া গেল সদর স্ট্রিটের ভোজ অ্যান্ড কোম্পানী নামের বিখ্যাত বাংলাদেশি খাবারের দোকানে। দ্য ডেইলি স্টারকে তারা জানালেন, সকালের নাস্তা খাবেন এমন দোকান তারা পাচ্ছেন না এক ঘণ্টা ধরে। কিন্তু, যা পাওয়া গেল তা গতানুগতিক, রোজকার মেনু।

আবু সিনহা বললেন, “শুনেছি এই দোকানটা ভাল। সারা বছরই তো এরা বাংলাদেশি পর্যটবকদের নিয়ে ব্যবসা করেন। তবে কেনো ঈদের দিন সকালে একটু সেমাই কিংবা ফিরনি জাতীয় কোনও মিষ্টি আইটেম তারা তৈরি করেন না? আমরা তো এখানে ফ্রিতে খাবো না।”

ঐদিন ভোজ অ্যান্ড কোম্পানীর ম্যানেজার এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে উল্টো তাদের দোকানে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলতেই নিষেধ করেন।

কলকাতার নিউমার্কেট ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশো ছোট-বড় আবাসিক হোটেল রয়েছে। বছরের দুটি ঈদের সময় বাদ দিলে প্রায় সারা বছর বাংলাদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে মধ্য-কলকাতার এই কথিত বাংলাদেশি হোটেল-পাড়া।

তবে অনেক বাংলাদেশি পর্যটক এখন প্রশ্ন তুলছেন, অদৌ কি নিউমার্কেট এলাকা বাংলাদেশি পর্যটক-বান্ধব হতে পেরেছে? এ ক্ষেত্রে কি সরকারের কোনও সুদৃষ্টি পৌঁছেছে? নাকি কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসও এসব সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনও দিন কথা বলেছেন?

সম্প্রতি, রাজ্যের পর্যটনবিষয়কমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে টেলিফোনে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেননি। আর কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের এখতিয়াওে নেই, তাই এ বিষয়ে তেমন কিছু করারও নেই তাদের।

Comments

The Daily Star  | English
anti terrorism law amendment approved

Advisory council clears anti-terrorism law amendement

Draft includes provision to ban an entity's activities, restrict terrorism-related content online

2h ago