ফেভারিটদের এ কী দশা!
বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেভারিটদের তালিকায় ব্রাজিল, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনা- এই পাঁচটি নামই ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। অথচ এক ফ্রান্স বাদ দিলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি আর কেউ। ফ্রান্সের জেতাটাও যে অনায়াস, তাও নয়। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি তো হেরেই বসল মেক্সিকোর কাছে।
এই পাঁচ ফেভারিটদের মধ্যে মন ভরাতে পেরেছে কেবল স্পেনের খেলা। প্রথম ম্যাচে তারাই খেলেছে সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের দাপট রেখেও ফর্মের সেরা অবস্থায় থাকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর জন্য জিততে পারেনি স্পেন।
বাকিদের খেলায় সমর্থকরাও খুশি নন। তারকারা হতাশ করেছেন। তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা দলগুলোর শরীরী ভাষার সঙ্গে কেমন যেন ধারহীন মনে হয়েছে লিওনেল মেসি, নেইমার, মুলারদের অ্যাপ্রোচ।
গ্রুপ চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই অনেকে ধারণা করেছিলেন, আর্জেন্টিনার জন্য এবারের বিশ্বকাপ খুব একটা সহজ হবে না। বরাবরের মতো গ্রুপ পর্বের চিরসঙ্গী নাইজেরিয়া আছে এবারও, আছে ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দারুণ স্কিলফুল কিছু খেলোয়াড় সম্পন্ন ক্রোয়েশিয়া। গত ইউরোতে চমক দেখানো আইসল্যান্ডও যে ছেড়ে কথা বলবে না, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের শঙ্কা ছিল এমনটাও। অন্তত প্রথম ম্যাচে সত্যি হয়েছে সেই শঙ্কা। আইসল্যান্ডের কাছে পয়েন্ট খুইয়েই ৩২ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর মিশন শুরু করেছে হোর্হে সাম্পাওলির শিষ্যরা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো একই পরিণতি ব্রাজিলেরও। এমনিতে সুইজারল্যান্ড সমীহ করার মত দল। তাই বলে তারকায় ভরা ব্রাজিল তাদের হারাতে পারবে না! সুইসদের বিপক্ষে সহজ জয় পাওয়ার ধারণা করলেও জয় পাওয়া হয়নি সেলেসাওদের। ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। বাছাইপর্বে দারুণ ফর্মে থাকা গ্যাব্রিয়েল জেসুস কিংবা সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা নেইমার, গোলের দেখা পাননি কেউই। কেবল নিজের ছন্দে ছিলেন ফিলিপ কৌতিনহো, একমাত্র গোল তারই।
পুরো গ্রুপ পর্বেরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জমজমাট ম্যাচ বলে মানা হচ্ছে স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচকে। পর্তুগাল দলে একজন রোনালদো থাকলেও শক্তিমত্তার বিচারে স্পেনের জয়ের পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। সেই পূর্বানুমানও মিথ্যা প্রমাণ করেছে ‘আন্ডারডগ’ পর্তুগাল। ২০১০ এর পর আবারো বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে আসা স্পেনের সাথে সমানতালে খেলে জয়বঞ্চিত করেছে লা ফুরিয়া রোজাদের।
বাকি তিন দল তবুও এক পয়েন্ট করে নিয়ে ফিরতে পেরেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সেই সৌভাগ্যও হয়নি। স্পেন-পর্তুগালের পর দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে মেক্সিকো-জার্মানি ম্যাচ। তাতে শেষ হাসি মেক্সিকানদের।
গতির সঙ্গে ট্রানজিকশন ফুটবলের কৌশল দিয়ে এতদিন রাজত্ব করছিল জার্মানি। তাদের শেখানো বিদ্যা তাদের উপরই প্রয়োগ করেছে মেক্সিকো। জার্মান রক্ষণে ত্রাস ছড়িয়ে এবার বিশ্বকাপে মাঝারি দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নজর কেড়েছে মধ্য আমেরিকার দেশটি। মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়ায় প্রথম পর্ব পার হওয়া নিয়েই এখন শঙ্কায় জোয়াকিম লোর শিষ্যরা।
তাদের গ্রুপে থাকা সুইডেন আর দক্ষিণ কোরিয়া যে কাজটা জার্মানির জন্য সহজ করবে না, তা বলাই যায়।
ক্লাব ফুটবলে ফর্মের তুঙ্গে থাকা এক ঝাঁক তারকা নিয়ে বিশ্বকাপ এসেছে ফ্রান্স। তাদের রিজার্ভ বেঞ্চেও বিশ্বকাপ জেতার মতো। কিন্তু প্রথম ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ের ৩৬ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পুরো ম্যাচ ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে ধুঁকেছে তারা। জিততে পেরেছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সুবিধা থাকায়।
ফেভারিটদের এই গলদঘর্ম অবস্থার মধ্যে তুলনামূলক ছোট ও মাঝারী শক্তির দলগুলো বিশ্বকাপ শুরু করেছে দারুণ উজ্জীবিতভাবে। স্বাগতিক রাশিয়া সৌদি আরবকে উড়িয়ে দিয়েছে পাঁচ গোলে। মেক্সিকো হারিয়ে দিল জার্মানিকে, আইসল্যান্ড-সুইজারল্যান্ডও কঠিন ম্যাচ থেকে তুলে নিয়েছে এক পয়েন্ট করে।
ফাড়া কাটিয়ে ফেভারিটরা আপন চেহারায় ফিরতে পারবে নাকি রাশিয়ায় উড়বে নতুনের কেতন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Comments