যে পাঁচ কারণে জার্মানির এমন বিদায়

যে পাঁচ কারণে জার্মানির বিদায়
বিপর্যস্থ জার্মানি। ছবিঃ রয়টার্স

৩২ দলের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী স্কোয়াড, অতীত ইতিহাস, কোচ হিসেব জোয়াকিম লোয়ের মতো মেধাবী মাস্টার, সবই ছিল জার্মানির পক্ষে। কিন্তু তারপরেও অপ্রত্যাশিতভাবে টুর্নামেন্টের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু কেন এমন বিদায় জার্মানদের? দেখা যাক জার্মানির এমন বিদায়ের পেছনের পাঁচ কারণ।

১) জয়ের ক্ষুধা শেষ হয়ে যাওয়া

জেতার চেয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যে অনেক বেশি কঠিন, সেটা কে না জানে। এই কঠিন কাজটিই এতদিন ধরে নিমেষে করে আসছিল জার্মানি। এই বিশ্বকাপে আসার আগের পরিস্থিতির দিকেই তাকানো যাক। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ২০১৭ সালে উয়েফা অনূর্ধ্ব ২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন্স কাপও জিতেছে। ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এই এক যুগে প্রত্যেকটি মেজর টুর্নামেন্টে অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে দলটি। সাফল্যের প্রায় সব শিখরেই ওঠা হয়ে গেছে দলটির। তাহলে কি জয়ের ক্ষুধাটা হারিয়ে গিয়েছিল এই জার্মান দলের মধ্য থেকে?

শুধু তাই নয়, জার্মানির এই স্কোয়াডের ২৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর হয়ে শিরোপার স্বাদ নিয়ে এসেছেন। এত এত সাফল্যের পর তাই জয়ের ক্ষুধা হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মেক্সিকোর বিপক্ষে হারের পর ম্যাচ পরবর্তী সাক্ষাৎকারে এমন ইঙ্গিত মিলেছিল জোয়াকিম লোয়ের কথাতেও। জার্মান কোচ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল যে মেক্সিকো ম্যাচের আগে দলের মধ্যে একটা দাম্ভিকতা কাজ করেছে। মাঠে নামব, আর পলকের মধ্যে ম্যাচ জিতে ফেরত আসব, এমন মানসিকতা দলের জন্য খুব ক্ষতিকর।’ গত বিশ্বকাপের স্বাদ পাওয়া জুলিয়ান ড্র্যাক্সলারও যেন দলের মধ্যে সেই তাগিদটা দেখতে পাননি, ‘আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, ২০১৪ এর দলের মধ্যে যে আগুন ছিল, এই দলে সেটা নেই।’  

২) কৌতূহলী স্কোয়াড নির্বাচন:

লোয়ের স্কোয়াড নির্বাচন নিয়েও বেশ কথাবার্তা হয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দারুণ মৌসুম কাটানো লেরয় সানে, বায়ার্ন মিউনিখের সান্দ্রো ওয়াগনারের বদলে সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা মারিও গোমেজের অন্তর্ভুক্তি, আগের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ও ফাইনালে গোল করা দুই খেলোয়াড় আন্দ্রে শুরলে ও মারিও গোটশেকে দলে না রাখা, গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করা লেফট ব্যাক ফিলিপ ম্যাক্সকে দলে বিবেচনা না করা- এরকম বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে লোয়ের।

৩) দলের মধ্যে বিভক্তি?

শুনতে আশ্চর্য শোনালেও সত্য, জার্মান দলে বিভক্তির গুঞ্জন বেশ জোরেশোরেই শোনা গেছে এবার। এবারের স্কোয়াডের ২৩ জনের মধ্যে ৯ জন ছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপজয়ী দলে, আর ১৩ জন ছিলেন গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন্স কাপ জয়ী দলে। কেবল জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার ও ম্যাথিয়াস গিন্টার ছিলেন এই দুই দলেই। গুজব রটেছে, এই দুই শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ বড় আকারের বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে।

৪) অতীত ইতিহাস:

গত পাঁচ বিশ্বকাপের মধ্যে এই নিয়ে চারবার আগের আসরের চ্যাম্পিয়নেরা বিদায় নিলো প্রথম পর্ব থেকেই। ১৯৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ২০০২ এর প্রথম রাউন্ড থেকে, ২০০৬ এর চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ এর প্রথম রাউন্ড থেকে, ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২০১৪ এর প্রথম আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল। কেবল ২০০২ এর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলই ২০০৬ এ গ্রুপ পর্বের গন্ডি পেরোতে পেরেছিল। এছাড়া ইতালি ও ব্রাজিল ছাড়া আর কোন দলই টানা দুইবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এসব অতীত ইতিহাসই কি তাড়া করে ফিরলো জার্মানিকে? 

৫) জার্মান ফুটবল সম্পর্কে বাইরের ফুটবলারদের জ্ঞান বৃদ্ধি:

প্রথম ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন মেক্সিকোর কার্লোস সালসেদো। তিনি ক্লাব ফুটবল খেলেন জার্মানিরই ক্লাব ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়ে। পরের ম্যাচে উজ্জ্বল সুইডেনের এমিল ফোর্সবার্গ খেলেন জার্মান ক্লাব আরবি লেইপজিগের হয়ে, লুডভিগ অগাস্টিনসন খেলেন আরেক জার্মান ক্লাব ভের্ডার ব্রেমেনের হয়ে। এভাবে জার্মান ফুটবলের সংস্কৃতি ও ধরন সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা তৈরি হচ্ছে বাইরের ফুটবলারদের, যা কি না জার্মানির বিপক্ষেই কাজে লাগাচ্ছেন তারা। 

Comments

The Daily Star  | English

Supernumerary promotion: Civil bureaucracy burdened with top-tier posts

The civil administration appears to be weighed down by excessive appointments of top-tier officials beyond sanctioned posts, a contentious practice known as supernumerary promotion.

8h ago