অলরাউন্ডার ইয়ামাহা এফজেড এস ২.০

ট্রাফিক জ্যামে বসে জানালার ফাঁক দিয়ে গাড়ির চকচকে শরীরেও ওপর ইয়ামাহা এফজেড – এস ২.০ বাইকটার প্রতিফলন দেখতে আসলেই খুব ভালো লাগে। দৃশ্যটি আমার এতই পছন্দের, মাঝে মধ্যে তখন জ্যামটাকেও তেমন একটা খারাপ লাগে না। গাড়িটা সত্যিই চমৎকার!
Yamaha

ট্রাফিক জ্যামে বসে জানালার ফাঁক দিয়ে গাড়ির চকচকে শরীরেও ওপর ইয়ামাহা এফজেড – এস ২.০ বাইকটার প্রতিফলন দেখতে আসলেই খুব ভালো লাগে। দৃশ্যটি আমার এতই পছন্দের, মাঝে মধ্যে তখন জ্যামটাকেও তেমন একটা খারাপ লাগে না। গাড়িটা সত্যিই চমৎকার!

ইয়ামাহার এফডেজ সিরিজের, বিশেষ করে প্রথম প্রজন্মের বাইকগুলো ঢাকা শহরে সব জায়গাতেই দেখা যায়। এই গাড়িগুলো এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে প্রায় যেকোন ট্রাফিক সিগনালে অন্তত একটা এফজেড দেখা যাবেই।

কিন্তু ম্যাট ফিনিশিং, সামনে ঝুঁকে থাকা ডিজাইন আর ছোট ক্লাস্টারসহ অভিনব ফিচারগুলো আপডেটেড মডেলের এই ইয়ামাহা বাইকগুলোকে সত্যিই অসামান্য করে তুলেছে।

Yamaha

শুধুই ঢং?

এফজেড – এস ২.০ এর সমমানের প্রচুর মোটরসাইকেল বাজারে আছে। কিন্তু নতুন ফুয়েল ইঞ্জেক্টেড ইঞ্জিন-চালিত এফজেড – এস ২.০ চালিয়ে যে আরাম পাওয়া যায়, তা সত্যিই একে প্রতিযোগিতার ভিড় থেকে আলাদা করে ফেলেছে। তবে, নতুন এই ইঞ্জিন তুলনামুলকভাবে কম শক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু বিচার করলে, এই ১ বিএইচপি-র (ব্রেক হর্স পাওয়ার) বিনিময়ে ইঞ্জিনটিতে যে অসাধারণ সংশোধনী ইয়ামাহা এনেছে– আমি একে খুবই পর্যাপ্ত মনে করি। এই ইঞ্জিন ক্ষমতার বিনিময়ে ইয়ামাহা গাড়ির ওজন ঝড়িয়েছে অন্তত তিন কেজি। এক কথায়, পুরাতন মডেলের এফজেড – এস যা ছিল, নতুন মডেলের গাড়িগুলো তার থেকে অনেক বেশি।

১৫০ সিসির বাইকের তালিকায় মুল প্রতিদ্বন্দ্বী হোন্ডা সিবি ট্রিগার অথবা বাজাজ পালসারগুলো থেকে এই ২.০ গাড়িগুলো তুলনামুলকভাবে অনেক হালকা।

Yamaha

পিঠের ব্যথা?

যতটা খারাপ মনে করছেন, ততটা খারাপ কিন্তু এটা না।

দুই ঘণ্টা একটানা মোটরসাইকেল চালানোর পর মেরুদণ্ডের কি হাল হয় তা আমাদের প্রায় সবারই জানা – তাও আবার আমাদের শহরগুলোর ভাঙা-চোরা রাস্তা দিয়ে। এফজেড – এস ২.০-এর চমৎকার সাসপেনশন ব্যবস্থা রাস্তার উঁচু-নিচু ভাঙা-চোরাগুলোকে অনুভব করতে দেবেনা বললেই চলে। প্রশস্ত ফেন্ডার ক্লিয়ারেন্স সাসপেনশন নড়াচড়া করার সময় চাকার জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখে। আর তাই সাসপেনশনকে মনে হয় মসৃণ।

তবে, আসলেই সাসপেনশনটি আমাদের ঢাকার রাস্তায় টিকে থাকবে কী না তা পরীক্ষা করে দেখতে আমাদের শিফট-এর ইন-চার্জ শায়ের বাইকটি ঢাকার রাস্তায় নামিয়েছিল। এখানে বলে রাখা উচিত, খেতে খেতে শায়েরের ওজন ১০০ কেজি ছাড়িয়ে গেছে বলে আমরা ধারণা করি, আর সে পেছনে একজন পিলিয়ন নিয়ে বাইকটি চালিয়েছে।

এর ফলাফল ছিল সত্যিই অসাধারণ। এমনকি, কিছু বিভীষিকাময় রাস্তাগুলোতেও ওর কখনও মনে হয়নি ড্যাম্পারগুলোতে তেমন চাপ পড়ছে।

Yamaha

ভারবাহী হওয়া সত্বেও, এফজেড – এস ২.০ নিয়ে আমরা জ্যাম ঠেলে খুব সহজেই এঁকেবেঁকে যেতে পেরেছি। আর টান দেওয়ার ক্ষেত্রে, খুব সহজেই টয়োটা করোলা অথবা নিসান সানিগুলোকে পেছনে ফেলেছি। প্রশস্ত হ্যান্ডেলবারগুলো এলোপাথাড়ি পথচারী অথবা এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকা গর্ত এড়িয়ে চলার জন্য বিশেষ উপযোগী বলে মনে হয়েছে। আরামের ক্ষেত্রে, অবশ্যই অন্যান্য সাধারণ স্পোর্টি মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় উন্নতমানের।

এখানে বলে রাখা উচিত, পুরোপুরি সোজা হয়ে একমাত্র ক্রুজারগুলো ছাড়া অন্য কোন মোটরসাইকেল চালানো যায় না বললেই চলে।

Yamaha

কনফিডেন্সের প্রতিটি মুহূর্ত

পুরাতন মডেলের এবং একই গোত্রের অন্যান্য মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় এফজেড – এস ২.০-এর উভয় চাকাতেই আছে ডিস্ক ব্রেক। যদি খুব জোরে ব্রেকগুলো টানার প্রয়োজন পড়ে, তখনই বুঝবেন সেগুলো কতটা কার্যকরী। সমসাময়িক কোন মোটরসাইকেলে আমরা এরকম চমৎকার ব্রেকিং সিস্টেম দেখিনি। তবুও, ভবিষ্যতের জন্য আমরা আশা করতে পারি ইয়ামাহা তার মোটরসাইকেলগুলোতে এ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে আসবে।

Yamaha

ধীর গতিতেও চমৎকার হ্যান্ডলিং

ইয়ামাহা এফজেড – এস ২.০ দেখতে বড় হওয়ায় মনে হতে পারে ধীর গতিতে হ্যান্ডলিংয়ে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিষয়টা মোটেই তেমন নয়। যানজটে বাস-গাড়ির মাঝ দিয়ে খুব সাবলীলভাবেই এঁকেবেঁকে যাওয়া সম্ভব। বাস্তবে, ওজনে এই গাড়ি অন্য ১৫০ সিসির মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় হালকা এবং চালাবার সময় আরো হালকা মনে হয়। এর মূল কারণ এর অসাধারণ হ্যান্ডলিং। তবে, সত্যি বলতে, আমাদের মনে হয়েছে যদি সিটটা আরেকটু নিচু হতো তবে ফাঁক-ফোঁকর গলে টান দিয়ে চলে যাওয়াটা আরো সুবিধাজনক হতো।

ইয়ামাহার এফজেড সিরিজের ১০ বছর পূর্তিতে নতুন মডেলের উন্নত ফিচারগুলো তরুণ ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি ভক্তদেরও মন জয় করবে বলে আমাদের দৃঢ় ধারণা। ভারসাম্য, সক্ষমতা এবং দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের অভূতপূর্ব এই সংমিশ্রণে বাইকটি সব মিলিয়ে এক কথায় অসাধারণ। প্রতিযোগিতার বাজারে একটি ১৫০ সিসির বাইক যেরকম হওয়া উচিৎ, ঠিক সেরকম।

 

আরমাডা ব্লু রংয়ের ডাবল ডিস্কওয়ালা ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ১৫০সিসি। দাম ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

12h ago