প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়েছিল যে ছয় চ্যাম্পিয়ন

জার্মানির জালে গোল দেয় দক্ষিণ কোরিয়া

কথায় আছে, বিজয়ের মুকুট অর্জনের চেয়ে সেটা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই কথাটি সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝেছে ছয়টি দল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে মাত্র ছয়টি দলের। গত পাঁচ আসরেই এরকম ঘটনা ঘটেছে চারবার, এর মধ্যে গত তিন আসরে আবার প্রথম রাউন্ড থেকে টানা বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়নেরা। সেই ছয়টি দলের বাদ পড়ার গল্প একটু দেখে নেওয়া যাক।

১৯৫০ বিশ্বকাপ; ইতালি:  

বিশ্বকাপ প্রথমবার এরকম ঘটনার সাক্ষী হয় ১৯৫০ আসরে। ব্রাজিলের মাটিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসেছিল আগের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি। আগের দুই আসরে সরাসরি নক আউট ফরম্যাটে খেলা হলেও বাণিজ্যিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফরম্যাটে বদল আনে আয়োজকেরা। ১৬ টি দলকে শুরুতে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। চার গ্রুপ থেকে একটি করে দল উঠবে পরের রাউন্ডে। তারপর চার গ্রুপের সেই চার দল নিজেদের মধ্যে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলে যে দল সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাবে, তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন। এটাই ছিল এই বিশ্বকাপের ফরম্যাট।

চার গ্রুপের মধ্যে গ্রুপ ‘সি’ তে সুইডেন, প্যারাগুয়ে ও ভারতের সাথে পড়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি। ভারত অংশ না নেয়ায় তিন দল নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলে। গ্রুপের সব ম্যাচ শেষে সুইডেনের পয়েন্ট দাঁড়ায় ৩, ইতালির ২ ও প্যারাগুয়ের ১। অর্থাৎ ফরম্যাট অনুযায়ী এই গ্রুপ থেকে পরের পর্বে উঠে যায় সুইডেন। আর প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে।

১৯৬৬ বিশ্বকাপ; ব্রাজিল:

ইতালির মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ব্রাজিলকেও। ১৯৫৮ ও ১৯৬২, টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতেই ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছিল ব্রাজিলিয়ানরা। চারটি গ্রুপের মধ্যে গ্রুপ ৩ এ পর্তুগাল, হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়ার গ্রুপ সঙ্গী হয় ব্রাজিল।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেলে ও গারিঞ্চার গোলে বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারালেও পরের দুই ম্যাচে হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ফলে তিন ম্যাচ শেষে মাত্র দুই পয়েন্ট নিয়েই সেবার বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। এই গ্রুপ থেকে পরের পর্বে উঠেছিল পর্তুগাল ও হাঙ্গেরি।

২০০২ বিশ্বকাপ; ফ্রান্স

এরপর মাঝে বেশ অনেক বছর বিরতির পর এমন ঘটনা ঘটে ২০০২ বিশ্বকাপে। ১৯৯৮ আসরের ফাইনালে ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে দিয়ে ঘরের দর্শকদের সামনে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ যেতে ফ্রান্স। ২০০২ আসরের জন্যেও তারা ছিল অন্যতম ফেভারিট। মাঝে ২০০০ ইউরো জিতেছে, ২০০১ কনফেডারেশন্স কাপও জিতেছে। কিন্তু এশিয়ার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ যেন দুঃস্বপ্নই উপহার দিলো ফরাসিদের।

ডেনমার্ক, সেনেগাল ও উরুগুয়ের সাথে গ্রুপ ‘এ’ তে পড়েছিল ফ্রান্স। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে জিততে পারেনি একটিও। আরও আশ্চর্যের বিষয়, তিন ম্যাচে খেলেও তারা একটি গোলও করতে পারেনি! ফলাফল, গ্রুপে চার দলের মধ্যে সবার তলানিতে থেকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ফ্রান্সকে।

২০১০ বিশ্বকাপে প্যারাগুয়ের কাছে ধরাশায়ী ইতালি। ছবিঃ এএফপি (ফাইল)

২০১০ বিশ্বকাপ; ইতালি:

আগের আসরে ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারানো ইতালি এই বিশ্বকাপে ছিল ‘এফ’ গ্রুপে। স্লোভাকিয়া, নিউজিল্যান্ড ও প্যারাগুয়ের সাথে এক গ্রুপে পড়ায় বেশ সহজেই গ্রুপ পার হয়ে যাবে ইতালি এমনটাই ভেবেছিলেন সবাই। কিন্তু গ্রুপে তিন ম্যাচ খেলে ইতালি জিততে পারেনি একটিও, দুই ড্রয়ের পাশাপাশি হেরেছিল একটি ম্যাচ। ফলে ফ্রান্সের মতই গ্রুপে সবার তলানিতে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছিল আজ্জুরিদের।

২০১৪ বিশ্বকাপে বির্পযস্থ স্পেনের অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস। ছবিঃ এএফপি (ফাইল)

২০১৪ বিশ্বকাপ; স্পেন:

বিশ্ব ফুটবলে তখন স্প্যানিশদের জয়জয়কার। চার বছর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে, ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জেতা একমাত্র দল হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছে। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে চূড়ান্ত অপমানের সম্মুখীন হতে হয় ইকার ক্যাসিয়াসের দলকে। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৫-১ গোলে বিদ্ধস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে চিলির কাছেও ২-০ গোলে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় স্পেন। শেষ ম্যাচে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের সান্ত্বনার জয় জুটেছিল তাদের।

২০১৮ বিশ্বকাপ; জার্মানি:

টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ফেভারিট হিসেবেই রাশিয়ায় এসেছিল জার্মানি। কিন্তু আগের দুই আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ১৯৩৮ সালের এমন প্রথম রাউন্ড থেকে কখনো বাদ পড়েনি তারা। গ্রুপ পর্যায়ে দুই ম্যাচ হারার বিব্রতকর রেকর্ডও এবার সঙ্গী হয়েছে জায়ান্ট জার্মানির।

Comments

The Daily Star  | English

Iran fires back at Israel after onslaught targets nuclear facilities

Air raids sirens and explosions rang out across Israel after Prime Minister Benjamin Netanyahu took to the airways to issue a word of caution, saying he expected "several waves of Iranian attacks" in response

14m ago