অনন্য ডিজাইনের এক অন্যরকম বাইক সুজুকি ইন্ট্রুডার ১৫৫
এক কথায় অন্যরকম। অন্তত সুজুকির লেটেস্ট মডেলের এই ক্রুজার বাইকটার সাথে তুলনা করার মতো আর কিছু আমরা পাইনি। তবে এতটুকু নিশ্চিত, বাইকটার লুক নিয়ে বাজারে নানান ধরনের মতামত রয়েছে। অনলাইন গ্রুপে বা ফোরামে, কিংবা অভিজ্ঞ বাইকারদের সাথে সরাসরি কথা বলে যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি তা হলো বাইকটা নিয়ে সব মহলেই বিশেষ কৌতুহল আছে।
সামনে থেকে দেখতে বাইকটাকে খুব শক্তিশালী মনে হয়। ইন্ট্রুডার নামটা যেন একেবারে যুৎসুই। বড় হেডলাইটটা যেভাবে পুরো বডিটার সাথে মসৃণভাবে মিশে গেছে তা দেখেই বাইকটাকে আয়তনের দিক থেকে অনেক বড় লাগে। ডিজাইনের দিক থেকে দেখতে অনেকটা ১৭৮৩ সিসির এম১৮০০আর এর মতো, যা কী না ১২৭ হর্স পাওয়ার উৎপাদন করতে সক্ষম।
ইন্ট্রুডারের ডিজাইনের আগাগোড়াই ফিউচারিস্টিক ধরনের। গোটা বাইকে ক্রোম একেবারেই কম, শুধু সামান্য কিছু আছে সাইড ভিউ মিরর, সামনের ফর্ক আর ট্যাঙ্কের ওপর লোগোটুকুতে।
বিশালাকৃতির ফুয়েল ট্যাঙ্কটা ঝুঁকে পড়ে মিশে যায় ড্রাইভিং সিটের সাথে, দেয় আরামদায়ক ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা। ডান পাশে খুব চৌকসভাবে লাগানো এক্সস্ট বাইকের ফাটাফাটি লুকটাকে একেবারে পরিপূর্ণ করে। পেছনে যেতেই চোখে পড়বে পেছনের চাকায়। দেখে মনে হবে প্যাসেঞ্জার সিটটা চাকার থেকে একটু বেশিই বের হয়ে আছে। তবে, আমার মনে হয় পেছনের চাকাটা ১৪০-সেকশনের চাইতে একটু পুরু হলেও হতে পারত। তখন বাইকটা দেখতে আরও আকর্ষণীয় হতো।
বাইকের সারা বডি জুড়ে প্লাস্টিকের ফিনিশংটা খুবই চমৎকার। প্যানেল, গাঁট, লিভার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশের তৈরিতে উচ্চমানের উপকরণ ব্যবহার হয়েছে বলে অনুভূত হয়। দেখেই মনে হয়, বাইকটার কোয়ালিটি একেবারেই উচ্চদরের। তবে মজার বিষয় হলো, এতোসব কিছুর নিচে ব্যবহৃত হয়েছে সুজুকি জিক্সারের গিয়ারিং, চ্যাসিস আর সাসপেনশন, যা কী না ক্রুসিংয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিমার্জিত করে নেয়।
বাংলাদেশে সুজুকি ইন্ট্রুডারের যে মডেল পাওয়া যায় তা হলো ৫-স্পিড কারবুরেটেড মডেল। অন্যান্য জায়গায় ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিনের আরেকটি মডেল পাওয়া যায়। ১৫৫ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতায় ৮০০০ আরপিএম-এ উৎপাদন হয় ১৪.৬ হর্স পাওয়ার (অথবা ১৪.৮ পিএস) এবং ৬০০০ আরপিএম-এ ১০.৩ পাউন্ড পার ফিট (১৪ এনএম) টর্ক। বাইকটির অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম, যার কারণে অত্যন্ত হার্ড ব্রেক কষলেও স্টিয়ারিংয়ের ওপর আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
সুজুকি ইন্ট্রুডারের সিটটি বেশ চওড়া আর নরম। অনেকক্ষণ চালানোর জন্য নিঃসন্দেহে আরামদায়ক। দেখে অনেক বড় গাড়ি মনে হলেও, বাস্তবে এটি বেশ হালকা এবং সাবলীল। বাইকটা ধরে মনে হয় হ্যান্ডলিং বেশ চমৎকার হবে, কিন্তু রাস্তায় চালিয়ে দেখার আগে এটি নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সুজুকির এই ইন্ট্রুডার ডিজাইনের বাইকটি দেখলেই মনে হয় এর উপযোগিতা ভিন্ন। এর উদ্দেশ্যই হলো আরামদায়ক কায়দায় অলস গতিতে রাইড করা।
এর সিটের উচ্চতা মাটি থেকে ২৯ ইঞ্চির একটু বেশি হবে। তবে, জিক্সার বাইকের উচ্চতা থেকে একটু নিচে। পেছনের চাকার ওপর নিচু ঢাল থাকার কারণে অনেক সহজেই প্যাসেঞ্জার উঠতে ও নামতে পারবেন। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে সোজা হয়ে বসে থাকার কারণে মেরুদণ্ডে চাপ পড়বে খুবই কম। প্রাথমিক অভিজ্ঞতায়, বাইকটি আমাদের কাছে বেশ সংবেদনশীল আর সাবলীল মনে হয়েছে।
কেন কিনবেন?
বাইক কেনার বিষয় যখন আসে তখন নানামুখী বিবেচনা চলে আসে, এর মধ্যে বিশেষভাবে আসে ক্রেতার চাহিদা আর পছন্দ। ইন্ট্রুডার বাইকটা চাইলে অবশ্যই ক্ষিপ্র হতে পারে। যেহেতু এর নিচে একটা জিক্সার লুকিয়ে আছে, সেহেতু বোঝাই যায় একটু জোর দিলেই বাইকটা সাড়া দেবে। তবে, সাধারণভাবে, এই বাইক একটি আরামদায়ক রাইডের জন্য করে তৈরি করা হয়েছে।
আর শেষ হিসেব অবশ্যই এর ডিজাইন। এদিক দিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যেখানেই যাবেন এই বাইকটি নজর কাড়বেই।
সিঙ্গেল চ্যানেল অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম সমৃদ্ধ সুজুকি ইন্ট্রুডার ১৫৫ সিসি। দাম তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা।
Comments