নেইমারের ঝলকে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল
নেইমার নিজে গোল করলেন, গোল করালেন। পুরো মাঠ জুড়ে ছন্দময় ফুটবল খেললেন উইলিয়ান। প্রথম দিকে সাহসী প্রেসিং ফুটবল খেলা মেক্সিকোর আক্রমণ দারুণ ভাবে সামাল দিল ব্রাজিলের রক্ষণ। জার্মানিকে ভড়কে দেওয়া মেক্সিকোর দৌড় থামিয়ে শেষ আটে উঠেছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
সোমবার সামারা এরিনায় ব্রাজিলের ২-০ গোলের জয়ের নায়ক নেইমার আর শেষ দিকে নামা রবার্তো ফিরমিনো। তবে একটা পর্যায় পর্যন্ত সমান তালে লড়ে মেক্সিকো বারবার কাঁপন ধরায় ব্রাজিলকে। সব সামলে শেষ পর্যন্ত হাসিটা সেলেসাওদেরই।
প্রথমার্ধে গোল না আসায় হতাশা বাড়া ব্রাজিল স্বস্তি ফিরে পায় বিরতির পর। ৫১ মিনিটে দল কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দেন নেইমার। এর আগে বারবার মেক্সিকো ডিফেন্সে ভীতি ছড়ানো নেইমার বা দিকে বল পেয়ে তীব্র গতিতে বক্সে ঢুকে ব্যাক হিল করে দেন উইলিয়ানকে। উইলিয়ান পায়ের কারিকুরিতে ক্রস করেন, তা থেকে পা লাগিয়ে গোল দেন ব্রাজিলের পোস্টার বয়।
তার আগে মেক্সিকো খেলেছে সমান তালে। গতি আর ছন্দ পড়তে দেয়নি কোন দল। আক্রমণ, পালটা আক্রমণে ম্যাচ হয়ে উঠে উপভোগ্য।
খেলার শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলা শুরু করে মেক্সিকোই। ২ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল তারা। ১২ মিনিটের ভেতর মেক্সিকো আদায় করে ৩টি কর্নার। তবে ব্রাজিলের রক্ষণে সব আক্রমণই শেষ পর্যন্ত প্রতিহত হয়।
ডানদিকে হার্ভিং লোজানো, গোয়ের্দেদো ওয়ান টু ওয়ান খেলে ১০ মিনিটে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন। গোলবারে সদা তটস্থ অ্যালিসন বেকারের পাঞ্চ হতাশ করে তাদের। ২০ মিনিটে মেক্সিকো পেয়েছিল আরেক সুযোগ। বক্সের ভেতর বল পেয়ে যায় ভিক্টর হেরেরা। তবে একসঙ্গে ব্রাজিলের চার ডিফেন্ডার ঝাঁপিয়ে সেই আক্রমণ নষ্ট করে দেন।
ব্রাজিলের সত্যিকারের সুযোগ আসে ২২ মিনিটে। বা দিকে দুজনকে কাটিয়ে নেইমার বল নিয়ে বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন। গিলার্মো ওচোয়া তা ফিরিয়ে দেন। এই আক্রমণ চলে আরও চার মিনিট। বা দিকে পাওয়া ফ্রি কিক তাও গোলে পরিণত হতে পারত। ফিলিপ কৌতিনহোর শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে।
৩২ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন গ্যাবব্রিয়েল জেসুস। বক্সের ভেতর বল পেয়ে শট না নিয়ে কাটাতে গিয়েই সময় নষ্ট হয়ে যায়। শট নেওয়ার আর জায়গা পাননি। দুই মিনিট পরে কৌতিনহোর শট বাধা পড়ে মেক্সিকোর রক্ষণে। ৩৯ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক উড়ে যায় বারের উপর দিয়ে। প্রথমার্ধে তাই আর গোল পায়নি ব্রাজিল। বিরতির খানিক আগে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ঝলক দেখিয়েছিলেন মেক্সিকোর হার্ভিং লোজানো। কিন্তু ব্রাজিলের বক্সের ঢুকার আগেই প্রতিহত হন তিনি।
বিরতির পর কর্নার থেকে নেইমারের পাস নিয়ে গোল পেতেই পারতেন কৌতিনহো। দারুণ দক্ষতায় তাকে হতাশ করেন অচোয়া।
৫১ মিনিটেই আসে চোখ ধাঁধানো সেই মুহূর্ত। এক গোলে এগিয়ে যাওয়া ব্রাজিল থিতু হতেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে মেক্সিকোকে হতাশ করেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন। ৬৩ মিনিটে ব্রাজিলকে আবার হতাশ করেন অচোয়া। দারুণ খেলতে থাকা উইলিয়ান বক্সে ঢুকে ডান পায়ে নিয়েছিলেন জোরালো শট। তা পাঞ্চ করে মেক্সিকোকে রক্ষা করেন অচোয়া। অচোয়া আরও অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বাঁচান মেক্সিকোকে।
গোল শোধে মরিয়া মেক্সিকো শেষ মিনিট দশেক চালায় অল আউট আক্রমণ। তাতে রক্ষণ যায় আলগা হয়ে। ৮৮ মিনিটে বদলি নামা ফার্ন্দান্দিহো দারুণ এক বল বাড়ান নেইমারকে।তা সুযোগ লুফে নেন নেইমার। আবারও গতির ঝলক দিয়ে বক্সে ঢুকে যান বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই ফুটবলার। তার ক্রস থেকে টোকা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন ফিরমিনো।
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম-জাপান ম্যাচের জয়ী দল।
Comments