যেভাবে পেনাল্টি ভাগ্য বদলালো ইংল্যান্ড
এর আগে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে তিনবার পেনাল্টি শুটআউটে গিয়েছে, তিনবারই হেরে বাড়ি ফিরেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু গতকাল এর ব্যতিক্রম দেখলেন ফুটবপ্রেমীরা। কলম্বিয়াকে পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে থ্রি লায়ন্সরা। কিন্তু কীভাবে নিজেদের পেনাল্টি ভাগ্য বদলালো ইংল্যান্ড?
ইংল্যান্ডের এই ভাগ্য বদল হঠাৎ করেই আসেনি। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট ও এফএ’র দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফসল এই ফলাফল। ১৯৯০, ১৯৯৮ ও ২০০৬- এই তিন বিশ্বকাপেই পেনাল্টি শুটআউটের ব্যর্থতার কারণে বিদায় নিতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরো থেকেও তিনবার বিদায় নিতে হয়েছে পেনাল্টিতে হেরে। এর মধ্যে ১৯৯৬ ইউরোতে ঘরের মাঠে জার্মানির কাছে হেরে ফাইনালে ওঠা হয়নি ইংলিশদের। সেবার পেনাল্টি মিস করেছিলেন বর্তমান দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও। সেই স্মৃতি অনেকদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। নিজের অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এবার তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন ইংল্যান্ড কোচ।
বিশ্বকাপের আগেই এবার একজন মনোবিদ নিয়ে এসেছিলেন সাউথগেট। সেই মনোবিদের সাহায্য নিয়ে দলের খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তিমত্তার একটা তালিকা তৈরি করেছেন তিনি। সেই তালিকা অনুযায়ীই ঠিক করেছেন, কার পরে কে নেবেন পেনাল্টি! স্কোয়াডের ২৩ জন সদস্যের জন্যই একটি সিরিয়াল নম্বর ঠিক করে রেখেছেন তিনি, সেই সিরিয়াল অনুযায়ীই পেনাল্টি নেবেন ইংলিশ খেলোয়াড়েরা। গতকাল কলম্বিয়ার বিপক্ষেও সেই সিরিয়ালই মেনে চলেছেন তিনি। রাশিয়া আসার আগেই সেন্ট জর্জেস পার্কে সব খেলোয়াড়দের দিয়ে পেনাল্টি মারিয়েছেন তিনি, তারপর সেই অনুযায়ী সিরিয়াল নম্বর ঠিক করেছেন।
শুধু সাউথগেট নন, পেনাল্টিতে ইংলিশদের এমন দুরবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিল খোদ এফএ ও। পেনাল্টি শুট আউটে ইংল্যান্ডের চেয়ে খারাপ রেকর্ড নেই আর কোন দলের। ইংল্যান্ডের পুরুষ ও মহিল জাতীয় দল এবং অনূর্ধ্ব ২১ দল মিলে শেষ ১৪ টি পেনাল্টি শুট আউটের মধ্যে জিততে পেরেছে মাত্র দুটিতে। শোচনীয় এই রেকর্ড বদলানোর জন্য এবার তাই সাউথগেটকে সম্ভাব্য সবরকম সহযোগিতা করেছেন এফএ।
এফএ’র কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্বকাপের আগে পেনাল্টি নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা নিয়ে কাজ করেছেন সাউথগেট। আগের ফুটেজগুলো দেখে দেখে প্রচুর বিশ্লেষণ করেছেন, আর সেই বিশ্লেষণ থেকেই খুঁজে বের করেছেন অদ্ভুত এক বিষয়। আগের ইংলিশ খেলোয়াড়েরা পেনাল্টি নেয়ার সময় খুব বেশি তাড়াহুড়ো করতেন, আর এতেই শট নেয়ার সময় ভজকট পাকিয়ে ফেলতেন তারা। এবার তাই খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে সাউথগেটের নির্দেশ, যতটা সম্ভব সময় নিয়ে পেনাল্টি মারতে হবে। এ কারণেই মাঝমাঠ থেকে পেনাল্টি নিতে যাওয়ার সময় হেলেদুলে যাচ্ছেন ইংলিশ খেলোয়াড়েরা, যেন শান্ত মাথায় শট নিতে পারেন।
পেনাল্টি নিয়ে এমন প্রস্তুতির বিষয়ে কথা বলেছেন সাউথগেট নিজেও, ‘আমরা প্রথমে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত টেকনিক দেখেছি, তারপর দলগতভাবে কীভাবে ভালো করা যায় সেটির দিকে নজর দিয়েছি। আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছি পুরো প্রক্রিয়াটাই যেন খুব শান্তভাবে সম্পন্ন হয়, মুহূর্তের চিন্তা ভাবনায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি আমরা। এই ম্যাচের আগেও আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’
পেনাল্টিকে অনেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে চাইলেও সাউথগেট তাতে রাজি নন। ইংলিশ কোচের মতে, ভাগ্য নয়, দক্ষতা দিয়েই নির্ধারিত হয় পেনাল্টি শুটআউটের ফলাফল, ‘অবশ্যই এটি ভাগ্যের বিষয় নয়, সুযোগের বিষয়ও নয়। পেনাল্টি মানেই হলো চাপের মুখে পারফর্ম করার দক্ষতা। ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে খেলোয়াড়দের। আমরা এই বিষয়ে প্রচুর কাজ করেছি। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় আছে যারা অনুশীলনে নিয়মিত পেনাল্টি নেয়। যারা নিয়মিত পেনাল্টি নেয় না, তাদেরকেও একটি দুটি পেনাল্টি নিতে হয় অনুশীলনে, যেন দরকারের সময় তারা এগিয়ে আসতে পারে।’
আরও পড়ুন ঃ পেনাল্টি মিস করায় প্রাণনাশের হুমকি!
Comments