হাসপাতাল থেকেও ‘তাড়ানো’ হলো তরিকুলকে

লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হাড় ভেঙ্গে দেওয়া তরিকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) থেকে ‘জোর করে বের করে দেওয়ার’ অভিযোগ করেছেন তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম।
Toriqul Islam
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত তরিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হাড় ভেঙ্গে দেওয়া তরিকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) থেকে ‘জোর করে বের করে দেওয়ার’ অভিযোগ করেছেন তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম।

গত ২ জুলাই জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দশ বারো জন নেতাকর্মী কিল-ঘুষি-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে মাস্টার্সের ছাত্র তরিকুলকে। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন লোহার হাতুড়ি দিয়ে তাকে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। যার ভিডিওচিত্র দ্য ডেইলি স্টারের কাছে রয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর এবং এক্স-রে রিপোর্টে তার পায়ের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ছবি প্রথম প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। যে ছবি ভাইরাল হয়েছে।

তরিকুলের ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও, হামলাকারীরা তরিকুলকে লাঠি দিয়ে পেটানোয় তার মাথা ফেটে যায়। এতে আটটি সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়।

তরিকুলের ভাই জানান, রামেক কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল থেকে তার ভাইকে ছাড়পত্র দিলে তাকে শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় বেসরকারি রয়েল হসপিটাল এ ভর্তি করা হয়।

তৌহিদ বলেন, “তরিকুলের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সে শরীর নাড়াতে পারছে না এবং ব্যথায় চিৎকার করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু, কর্তৃপক্ষ আমাদের জোর করে বের করে দিয়েছে।”

রামেকের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার প্রামাণিক এই অভিযোগ অস্বীকার করে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা চিকিৎসকরা কোনো রোগীকেই জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেই না।”

“আমরা তরিকুলকে ছাড়পত্র দিয়েছি কারণ আমরা মনে করি যে সে বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারবে,” যোগ করে প্রামাণিক।

তার মন্তব্য, “আমাদের ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ রয়েছে এবং আমরা সব রোগীকে পুরোপুরি চিকিৎসা দিতে পারি না। আরও খারাপ অবস্থার রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্যে আমরা অপেক্ষাকৃত সুস্থ রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে থাকি।”

তরিকুলকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর কোনো মহল থেকে চাপ ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, দুই সপ্তাহ পর তরিকুলের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এর আগ পর্যন্ত তার বিশ্রাম দরকার।

তরিকুলের ভাই তৌহিদ বলেন, “গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যখন চিকিৎসকরা তরিকুলকে দেখতে এসেছিলেন তখন তার পাশে থাকা সবাইকে চলে যেতে বলেন। এরপর, চিকিৎসকরা তরিকুলকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি জানান। পরে, আমরা একথা শুনে তাজ্জব হয়ে যাই।”

তরিকুলের ছাড়পত্র দেওয়ার খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তৌহিদ চিকিৎসকদের কাছে ছুটে যান।

x-ray report
হাতুড়ির আঘাতে ভেঙে যাওয়া তরিকুলের ডান পায়ের দুই হাড়ের এক্স-রে ছবি। ছবি: স্টার

এরপর, দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের একজন কর্মী এসে তৌহিদের হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেয় এবং কখন হাসপাতাল ছাড়বে সে বিষয়ে জানতে চান। কয়েক মিনিট পর সেই হাসপাতাল কর্মী সেই ছাড়পত্রটি তার হাত থেকে নিয়ে যান এবং বলেন তা পুলিশের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে।

আধ ঘণ্টা পর একজন পুলিশ সদস্য তৌহিদের হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দিয়ে জানতে চান কখন তারা হাসপাতাল ছাড়বেন।

“হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেওয়ার পর থেকেই হাসপাতাল কর্মীরা বারবার আমাদের কাছে জানতে চায় কথন আমরা হাসপাতাল ছাড়বো। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কি থাকা সম্ভব?” প্রশ্ন তৌহিদের।

তৌহিদ বলেন, “আমরা চাই তরিকুলের চিকিৎসা হোক। তাই আমরা তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি।”

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইন-চার্জ উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের চাপে হাসপাতাল থেকে রোগী বের করে দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র না দিলে আমরা কীভাবে তাকে হাসপাতাল ছাড়ার জন্যে চাপ দেই?”

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, তরিকুলের নিরাপত্তার জন্যে হাসপাতালের পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে। হামলায় আহত তরিকুল পুলিশি হেফাজতে নেই বলেও উল্লেখ করেন ওসি।

আরও পড়ুন:

হাতুড়ির আঘাতে ‘জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া’ তরিকুল!

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago