‘কথা দাও উন্মাদ হবে’

প্রদর্শনী গ্যালারির দরজা ঠেলে ঢুকতেই হাতের বামে একটি শিল্পকর্মে চোখ পড়লো। দেখা গেলো সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে পৃথিবীর অবস্থা। কার্টুনশিল্পী রোমেল বড়ুয়ার ‘যুগে যুগে উন্মাদ’ শিরোনামের এই চিত্রকর্মটিতে তুলে ধরা হয় বিবর্তনের বিভিন্ন সময়ে ‘উন্মাদদের’ ভিন্ন ভিন্ন চেহারা।
Unmad
ছবি: স্টার

প্রদর্শনী গ্যালারির দরজা ঠেলে ঢুকতেই হাতের বামে একটি শিল্পকর্মে চোখ পড়লো। দেখা গেলো সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে পৃথিবীর অবস্থা। কার্টুনশিল্পী রোমেল বড়ুয়ার ‘যুগে যুগে উন্মাদ’ শিরোনামের এই চিত্রকর্মটিতে তুলে ধরা হয় বিবর্তনের বিভিন্ন সময়ে ‘উন্মাদদের’ ভিন্ন ভিন্ন চেহারা।

অপর কার্টুনশিল্পী রাজীব মাহবুব তার শিল্পকর্মটিতে দেখিয়েছেন কীভাবে বিভিন্ন পেশার মানুষেরা উদযাপন করছেন ‘উন্মাদ’-এর ৪০ বছর। ম্যাগাজিনটির দীর্ঘ চলার পথে শিল্পীদের অবদান উঠে এসেছে সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়ের চিত্রে।

Unmad
ছবি: স্টার

রোমেল, তন্ময়ের মতো ‘উন্মাদ’-ভক্তরা নিজ নিজ ভাবনা থেকে তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন ম্যাগাজিনটির বিবর্তনও। তবে ‘উন্মাদ’ যে আর আগের মতো নেই সে কথা অকপটে জানিয়ে দিয়েছেন ঐশিক জাওয়াদ তার ‘উন্মাদ আর আগের মতো নাই’-এ। এই চিত্রকর্মটিতে এমন দাবি বা মতামত প্রকাশ করেছে এক শিশু- যাকে কী না অনেক বিরক্তি নিয়ে ম্যাগাজিনটির পাতা উল্টাতে দেখা যায়।

তবে ‘উন্মাদ’-এর সমকাল ভাবনার যুৎসই উপস্থাপনা সবাইকেই আকৃষ্ট করে। তাই জটলা দেখা গেল একটি চিত্রকর্মের সামনে। এই ‘সুবর্ণ সুযোগ’ শিল্পকর্মটিতে ল্যান্ড ফোনের একটি রিসিভার ঝুলিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, “এই ফোন- এ সেলফি তুলতে পারলে উন্মাদ ১২ সংখ্যা ফ্রি ফ্রি আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে…!”

Unmad
ছবি: স্টার

ফান ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর ৪০ বছর উপলক্ষে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছে পাঁচদিনের একটি কার্টুন প্রদর্শনী। আজ (৯ জুলাই) প্রদর্শনীর শেষ দিন। এটি খোলা থাকবে দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনীটিতে নতুন-পুরনো ৮০ জন কার্টুনশিল্পীর ২০০টি কাজ শোভা পাচ্ছে।

১৯৭৮ সালের মে মাসে ইস্তেয়াক হোসেন ও কাজী খালেদ আশরাফ-এর হাত ধরে যাত্রা শুরু করা ‘উন্মাদ’-কে দেশেরতো বটেই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ফান ম্যাগাজিন বলা হচ্ছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

Unmad
ছবি: স্টার

এদিকে, প্রদর্শনী উপলক্ষে এক ‘উন্মাদকীয়’ বার্তায় ম্যাগাজিনটির সম্পাদক-প্রকাশক আহসান হাবিব তুলে ধরেন এর প্রথম দিনগুলোর কথা। তিনি বলেন, “উন্মাদ তখন ত্রৈমাসিক পত্রিকা হিসেবে বের হত। নবম সংখ্যা থেকে আমি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেই। অন্যরা তখন অন্যান্য পেশায় ঢুকে যায়, আর আমি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে এই পত্রিকার দায়িত্ব নেই। কিছুদিন পর পুরোপুরি সম্পাদক প্রকাশক হিসেবে পত্রিকাটিকে মাসিক পত্রিকা হিসেবে বের করতে শুরু করি। অচিরেই এই পত্রিকা সর্বোচ্চ ২৮,০০০ সার্কুলেশনে উন্নীত হয়।”

ম্যাগাজিনটি এর জন্মলগ্ন থেকে নিজেকেই শুধু ‘উন্মাদ’ মনে করে। আর খবর নেয় অন্যদের সুস্থতার। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে কার্টুনশিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা এবং ব্যক্তি মানুষের আপন বাসনাগুলো নিয়ে কৌতুক করার কৌশলটি ‘উন্মাদ’-কে এনে দিয়েছে পাঠকপ্রিয়তা।

Unmad
ছবি: স্টার

শিল্পী এষার ‘এবার থামবি?’ কার্টুনে উঠে এসেছে সমকালীন বাস্তবতা। একটি পিস্তল ও একজন আর্ত মানুষের ছবি খুবই সহজভাবে জানিয়ে দেয় সমাজে চলমান নিষ্ঠুরতার ইতি টানা প্রয়োজন।

‘উন্মাদ’ যেন সর্বকালীন বা সার্বজনীন। তাই, এবারের প্রদর্শনীতে দেখা গেল মহাকাশেও ‘উন্মাদ’-এর উপস্থিতি। আরিফ আহমেদের কার্টুনচিত্রে মহাকাশে উন্মাদের মাছ ধরার আনন্দ দেখে যেন দর্শকরাও আনন্দিত হন।

এছাড়াও, বর্তমানে বিশ্বমানবতার লাঞ্ছিত হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে প্রদর্শনীটিতে। শিল্পী মোর্শেদ মিশু তার ‘দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’ সিরিজে আটটি শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ায় নির্যাতিত মানুষের ছবি। সেই ছবিগুলোর সঙ্গে দেশের বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট তুলে আনলে এই অঞ্চলে মানবতার বিপর্যয়ের চিত্রটিও দর্শকদের সামনে তুলে ধরা যেত।

Unmad
ছবি: স্টার

ম্যাগাজিনটির এখনকার সার্বিক অবস্থা নিয়ে ‘উন্মাদ’-এর নির্বাহী সম্পাদক মেহেদী হক দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “ম্যাগাজিনটির বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে- তা সত্য। তবে এটি কোনো লস প্রজেক্ট না। যে কারণেই এটি এখনো টিকে আছে।”

মেহেদীর মতে, কম পাঠকের এই ম্যাগাজিনটির টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো তরুণরা এখানে এসে কাজ করছেন বেশ কৌতুহল নিয়ে। “তরুণরাই ‘উন্মাদ’-এর শক্তি। মূল দলে তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে বলেই দেখা যায় ‘উন্মাদ’ সবসময়ই তরুণ। তার বয়স বাড়ছে না। শুধু তাই নয়, যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও ম্যাগাজিনটি টিকে রয়েছে এর আপন মহিমা নিয়ে।”

প্রদর্শনী গ্যালারি থেকে বের হওয়ার আগে একটি কার্টুনচিত্রের দিকে চোখ আটকে গেল। শিল্পী জাকারিয়া মাহফুজ পরাগের ‘কথা দাও উন্মাদ হবে’ শিল্পকর্মটিতে যে আহ্লাদ ও আবেদন রয়েছে তার আবেশ নিয়েই যেন পাঠক-দর্শক বা ভক্তরা ‘উন্মাদ’-কে নিয়ে যাবেন আরও বহু দূর।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago