যারা বলে ‘নৌকা ঠেকাও’ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যারা বলে ‘নৌকা ঠেকাও’ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাহলে কি তারা ওই রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকেই আবার ক্ষমতায় বসাতে চান?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মাননা পত্র পাঠ করেন। তিনি পরে সেই সম্মাননাপত্র প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যারা বলে ‘নৌকা ঠেকাও’ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাহলে কি তারা ওই রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকেই আবার ক্ষমতায় বসাতে চান?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আবার একটা শ্রেণি রয়েছে যাদের কোন উন্নয়নই চোখে পড়ে না। আবার কেউ কেউ বলেন, নৌকা ঠেকাতে হবে। আমার প্রশ্ন নৌকা কেন ঠেকাতে হবে। নৌকা ঠেকিয়ে কি ওই রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদেরকেই আবার ক্ষমতায় আনবেন?’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার সম্মানে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় একথা বলেন।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড অর্জন এবং আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আওয়ামী লীগ এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে পৌঁছলে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা হাত নেড়ে, পতাকা উঁচিয়ে মুহুর্মুহু শ্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

তার লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা মনে করেন প্রবৃদ্ধি অর্জন ভালো নয়, দেশ উন্নয়নশীল হলে ভালো নয়, তাদেরকে আমার সন্দেহ হয়, তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কি না বা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না। নাকি তারা ওই স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহনকারী সেটাই আমার প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে, এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এই নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে এবং আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হতে পেরেছি।’

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে বন্যা আসার সময় হচ্ছে। এই শ্রাবণ মাস শেষে ভাদ্র মাসেই আবার পানি আসতে পারে। তখন তারা কি নৌকায় চড়বে না, তাদেরকেও তো নৌকায় চড়তে হবে। অন্তত রাজনৈতিক নেতা যারা তাদের ত্রাণ বিতরণ করতে গেলেও নৌকাতেই যেতে হবে। তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকার অপরাধটা কি?

তিনি বলেন, যারা নৌকা ঠেকাতে চায় তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন?

সরকার প্রধান বলেন, যারা ওই সামরিক শাসকদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করেছে বা বড় হয়েছে তাদের মুখেই একথা মানায়। কিন্তু যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের মুখে এ কথা মানায় না।

দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন,স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশী নির্বাচন-উপনির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। গণতন্ত্র যদি দেশে নাই থাকবে, তাহলে মানুষ ভোট দিয়ে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো কিভাবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপির ভাঙচুর, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা এবং নৈরাজ্যের সমালোচনা করে জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জনগণ প্রতিহত করেছিল বলেই তারা ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই জনগণ কিছু পায়। দেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘৭৫ থেকে ৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের মানুষ দেখেছে যে কী হয়েছে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছে সেখান থেকে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য ।

প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, তার সরকার এই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-বরিশাল, পায়রাবন্দরসহ বিভিন্নস্থানে বুলেট ট্রেন চালু করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘মৃত্যু যখন আসবে তখন মৃত্যু আসবেই। কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই। তার আগে যতক্ষণ জীবন আছে বাংলার মানুষের সেবা করে যাবো।’

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে আগত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, চাকরিজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago