‘বাড়াবাড়ি নয়’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও আক্রমণে ছাত্রলীগ

প্রধানমন্ত্রীর ‘বাড়াবাড়ি’ না করার নির্দেশনার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটে।
ছবি: রাশেদ সুমন

প্রধানমন্ত্রীর ‘বাড়াবাড়ি’ না করার নির্দেশনার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটে।

গতকাল রোববার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ছাত্রলীগকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে যেন কোনো বাড়াবাড়ির অভিযোগ আর তিনি না পান; পরিষ্কারভাবে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’ কাদের বলেন, শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা শেষে তার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কাদের এমন কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

গতকাল বিকেলে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন জন যুগ্ম আহ্বায়ককে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান উজ্জ্বল এই হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হামলার শিকার নিয়াজি সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিকেল ৫টা ১০মিনিটের দিকে সমাবেশ শেষ করে অটোরিকশায় বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তার সঙ্গে যে আর দুজন হামলার শিকার হয় তারা হলেন রাতুল সরকার ও সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ থেকেই চারটি মোটরসাইকেলে করে তাদের অটোরিকশার পিছু নেয়। কাঁটাবন মোড়ে তারা তাদের থামিয়ে টেনে বের করে মারধর করে। রাতুলের সঙ্গে এক পর্যায়ে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সোহরাবকে তারা বেদম প্রহার করে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

ছাত্রলীগ নেতা সাইদুর বলেন, বাটা সিগনাল দিয়ে যাওয়ার সময় একটি সিএনজি অটোরিকশা আমার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে আমরা সেটিকে থামাই। অটোরিকশার চালকের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার দাবি, ভেতরে কে ছিল তারা সেটা দেখেননি, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি।

তবে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এই ঘটনার ভিডিও ভিন্ন কথা বলে। সেখানে আমির ও সাইদুরসহ ছাত্রলীগের সাত থেকে আটজন নেতাকর্মীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। তারা প্রথমে তাদের ‘ছিনতাইকারী’ আখ্যা দেয়। এসময় আমির রাতুলকে ধরে ছিল ও অন্যরা তাকে কিল-ঘুষি মারছিল। অন্য দুজনকেও একইভাবে মারতে দেখা যায় ভিডিওটিতে।

এসময় দুজন পুলিশকে তাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিফল হন।

অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম লেমনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত একজনকে মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলার শিকার ছেলেটি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার পরিচয় জানা যায়নি।

গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র ফেডারেশনের একজনকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করায় তার ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের ১০-১২ জন মিলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রাকিবুল রাকিবকে মারধর করে। ক্লাস শেষে বের হয়ে আসার সময় বিবিএ ভবনের সামনে তার ওপর হামলা করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago