ফুটবলের সেরা ১০ ‘হাইজ্যাকিং’

ফুটবলের সেরা ১০ হাইজ্যাকিং

রোববার রাত নয়টার বিমানে ইতালি পৌঁছানোর কথা ছিল ম্যালকমের। পরদিন শারীরিক পরীক্ষা। কিন্তু হঠাৎ পটভূমি গেল পাল্টে। শেষ মুহূর্তের বিডে রোমাকে পেছনে ফেলে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে কিনে নিল বার্সেলোনা। তাতে উত্তেজিত ফুটবল বিশ্ব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটাকে হাইজ্যাক আখ্যায়িত করে ফলাও করে ছাপাচ্ছে। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে এটা কি নতুন কোন ঘটনা?

এমন অনেক নজির আছে ক্লাবের সঙ্গে চূড়ান্ত কথাবার্তা শেষে ভিন্ন মত দিয়েছেন খেলোয়াড়েরা। এমনকি ক্লাবে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করার পরও মত পাল্টেছেন অনেক খেলোয়াড়। অনেক নাটকীয় ট্রান্সফারে শেষ মুহূর্তে খেলোয়াড় কিনে নিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো। তার উল্লেখযোগ্য ১০টি ট্রান্সফার তুলে ধরা হলো-

উইলিয়ান

রাশিয়ান ক্লাব আনঝি মাখাচকালা থেকে উইলিয়ানকে উড়িয়ে এনেছিল টটেনহ্যামই। স্পার্সের ডেরায় হয় তার শারীরিক পরীক্ষাও। ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডে চুক্তিপত্র প্রায় সম্পন্ন। ঠিক ওই সময় রাশিয়ায় আনঝির মালিক ওলিগার্চ সুলেম্যান কেরিমোভকে কল করেন রোমান আব্রামোভিচ। আলোচনা শেষে ক্লাব থেকে উইলিয়ানকে বলা হয় স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চলে যেতে।

পার্ক চু-ইয়ং

ফরোয়ার্ড নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ তালগোল পাকিয়ে ফেলছে মোনাকো। ২০১১ সালেও একই ঘটনা করেছিল দলটি। প্রতিভাবান পার্ক চু-ইয়ংকে পেয়েও তাকে লিলের কাছে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল তারা। লেনদেন সংক্রান্ত সব আলোচনা শেষে তার শারীরিক পরীক্ষার অর্ধেক শেষও করে লিলে। বাকি কাজ শেষ করতে গিয়ে তাকে আর হোটেলে পায়নি। গানারদের সঙ্গে চুক্তি করতে ততক্ষণে লন্ডনের পথ ধরেছেন পার্ক। তবে তিন বছরে মাত্র সাত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়ায় পরে ক্রুর হাসি হেসেছিল লিলেই।

পল গেসকোয়েন

১৯৮৮ সালে নিউক্যাসেল থেকে টটেনহ্যামে যাওয়ার পথটা মসৃণ ছিল না পল গেসকোয়েনের। স্পার্সরা তাকে পেতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছিল। স্যার আলেক্স ফার্গুসনের কাছে গেসকোয়েন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে গ্রীষ্মের দলবদলে ম্যানইউতে সাক্ষর করবেন। কিন্তু স্পার্সরা তাকে পেতে বড় অফার দিয়ে তার পরিবারকে রাজি করিয়ে ফেলে। তাতেই দলটির সঙ্গে চুক্তি করেন গেসকোয়েন। পরে জানিয়েছিলেন পরিবারের বিশেষ করে বোনের চাপেই টটেনহ্যামে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। 

রবিনহো

‘আমি শুধু চেলসিকে নিয়েই ভাবি এবং সেখানেই খেলতে চাই’ রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ইংলিশ লিগে নাম লেখানোর আগে এমনটাই বলেছিলেন রবিনহো। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ তাকে চেলসিতে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। অনেকটা জোর করেই ম্যানচেস্টার সিটিতে বিক্রি করে দেয়। বলা হয়ে থাকে, চুক্তিতে যত দেখানো হয়েছিল আবদ্ধ ঘরে তার চেয়ে বেশিই দিয়েছিল ম্যানসিটি। আর নতুন ক্লাবে গিয়ে সহজেই সুর বদল করে রবিনহো বলেছিলেন, চেলসি নয় আমি ম্যানচেস্টারের কথা বলেছিলাম।

মাইকেল লাউড্রুপ

সাবেক জুভেন্টাস, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও আয়াক্স তারকা মাইকেল লাউড্রুপ ক্যারিয়ারে বড় বড় ক্লাবেই খেলেছেন। এ তালিকায় থাকতে পারত লিভারপুলের নামও। সিরিএ’তে যাওয়ার আগে তরুণ লাউড্রুপ তিন বছরের চুক্তিতে লিভারপুলে নাম লেখানোর খুব কাছে ছিলেন। কাগজপত্র হাতে নিয়ে সাক্ষর করবেন, কিন্তু তাতে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বেশি থাকায় বেঁকে বসেন লাউড্রুপ। পরে জুভেন্টাসে যোগ দেন তিনি।

এমানুয়েল পেতিত

১৯৯৭ সালে ইংলিশ লিগে টটেনহ্যামে তাঁবু গাড়তে ফ্রান্স থেকে উড়ে আসেন পেতিত। চুক্তির খুব কাছেও চলে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যালান সুগারের সঙ্গে দেখা করে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করতে ক্লাবেও যান এ ফরাসী। আলোচনা শেষে সুগার পেতিতকে ট্যাক্সি ভাড়া পরিশোধ করে হোটেলের উদ্দেশ্যে উঠিয়ে দেন কোচ। কিন্তু সেখান থেকে হোটেলে না গিয়ে আর্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। এবং আর্সেনালের সঙ্গে চুক্তি করেই ফিরেন। 

ডেভিড ব্যাকহাম

স্যার আলেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ২০০৩ সালের গ্রীষ্মে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন ডেভিড ব্যাকহাম। তবে দলবদলে শুরুতে ছিল না রিয়াল। শেষ মুহূর্তে তাকে চেয়েছিল তারা। আগেই ক্লাব থেকে বার্সেলোনার সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করেছিল ম্যানইউ। কিন্তু বেঁকে বসেন ব্যাকহাম। তার পছন্দ রিয়াল। তাই বাধ্য হয়েই পরে রিয়ালের কাছেই বিক্রি করে দলটি। তবে এতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি বার্সেলোনার। তার জায়গায় দলে এনেছিলেন রোনালদিনহোকে। আর ওই দিকে রিয়ালের হয়ে সুপার ফ্লপ ছিলেন ব্যাকহাম। 

দিমিতার বার্বাতভ

২০০৮ সালে দলবদলের বাজারে বেশ নাটক তৈরি করেছিলেন বার্বাতভ। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে তার চুক্তি চূড়ান্তই ছিল। বেতন সংক্রান্ত আলোচনায় রাজি হয়ে খুশি মনেই ফিরেন তিনি। জিনিসপত্র গুছিয়ে ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে তাকে চুক্তি সাক্ষর করার জন্য উঠিয়ে দেয় টটেনহ্যাম ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। ম্যানসিটিতে না গিয়ে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে যোগ দেন তিনি। ফেরার পর জানান, ম্যানইউতে যোগ দিতে চান। পরে বাধ্য হয়েই রেড ডেভিলদের কাছে তাকে বিক্রি করে স্পার্সরা। 

জন ওবি মিকেল

আরও একটি এলোমেলো দলবদল। ২০০৫ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয় তাদের সর্বশেষ সংযুক্তি জন ওবি মিকেল। এমনকি তার নাম লেখা জার্সিও উন্মোচন করে ক্লাবটি। কিন্তু নরওয়েতে ম্যাচের আগে অনুশীলনে সে অনুপস্থিত। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। নয়দিন পর তার হদিশ মিললে জানান, তিনি চেলসিতে খেলতে চান চেলসির সঙ্গে তার চুক্তিও হয়ে গেছে।

রোনালদিনহো

নিঃসন্দেহে ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন রোনালদিনহো। পিএসজিতে দুই মৌসুম কাটানোর পর তরুণ ব্রাজিলিয়ান দেখেন তার জন্য ইউরোপের বাঘা বাঘা ক্লাবগুলো চেকবুক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাকে কেনার খুব কাছাকাছি গিয়েছিল। তবে ডেভিড ব্যাকহামকে না পেয়ে হুট করেই রোনালদিনহোর জন্য বড় অফার দেয় বার্সেলোনা। এরপর বাকিটা ইতিহাস। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় পার করেন স্প্যানিশ জায়ান্টদের হয়েই। দুটি লালিগা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়সহ ব্যালন ডি’অরও পান এ সময়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh at a historic crossroads: Dr Kamal Hossain

Eminent jurist Dr Kamal Hossain today said Bangladesh stands at a turning point of history following recent mass uprisings

59m ago