এমন ম্যাচও হারল বাংলাদেশ!

বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে ম্যাচ
হতাশ মাশরাফি

শেষ দুই ওভার থেকে জেতার জন্য দরকার ছিল কেবল ১৩ রান। হাতে উইকেট আছে ছয়টি,  ক্রিজে তখন মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমানের মতো দুই ব্যাটসম্যান। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে না পারাই বিস্ময়কর।  অদ্ভুতুড়ে ভাবে খেই হারিয়ে সেটাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ।  

গায়ানায় দিবারাত্রীর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ রানে জিতে তাই তিন ম্যাচ সিরিজে ফিরে এলো ক্যারিবিয়ানরা। শিমরন হেটমায়ারের সেঞ্চুরিতে স্বাগতিকদের করা ২৭১ রানের জবাবে মাশরাফি মর্তুজার দল থেমেছে ২৬৮ রানে।

২৭১ রানের লক্ষ্যে সাকিব-তামিম-মুশফিকের তিন ফিফটিতে অনায়াস জেতার পথেই ছিল বাংলাদেশ। ব্যাখ্যাতীত পা হড়কানোয় শেষ হয়েছে সব।

ম্যাচ শেষে হয়ত চিমটি কেটে দেখেছেন জেসন হোল্ডাররা। এমন ম্যাচ জিতবেন তারাও কি ভেবেছিলেন! শেষ ওভারে দরকার ছিল ৪০ রান, তখন উইকেট হাতে ৭টি। খেলা তো শেষই ধরে নেওয়া যায়। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিম যখন উইকেটে থিতু, আর চিন্তা কি বাংলাদেশের। অথচ অনেকটা ভিন্নভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচ যেন ফিরিয়ে আনলেন তারা। মাহমুদউল্লাহর রান আউটে শুরু। অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে ৩৯ রানে থামে তার ইনিংস।

তবু চিন্তা ছিল না। মুশফিকুর রহিমের দারুণ ব্যাটিং আস্থা দিচ্ছিল সহজ জয়েরই। কিন্তু শেষ ওভারে গিয়ে হোল্ডারের বলে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ ওই ওভার থেকে নিতে পারেনি প্রয়োজনীয় ৮ রান। শুরুতে এনামুল হক বিজয়ের ঝড়ে ২০ রান দেওয়া হোল্ডার শেষের ওভারের নাটকীয়তায় বনে যান হিরো।

তার আগে দায়টা আছে সাব্বির রহমানের। ফর্ম হারানো এই ব্যাটসম্যান নিজের জায়গা আরও প্রশ্নবিদ্ধ করলেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের দাবি না মেটানোয়। দ্রুত রান তুলার চাহিদার সময় নেমে ১১ বলে ১২ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে সাব্বিরের বিদায়ের পর ৫০তম ওভারের প্রথম বলে আউট হন মুশফিক। পরে মোসাদ্দেক-মাশরাফিরা আনতে পারেননি বাকি রান।

রান তাড়ায় ওপেনার এনামুলের ঝড়ে শুরুটা ছিল মাতানো। হোল্ডারকে আক্রমণ করে এক ওভারেই ২০ রান তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তবে অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়েই হয়েছে মরণ। ৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস থামে আলজেরি জোসেফের বলে বেরিয়ে এসে বোল্ড হয়ে।

তবে ওটা চিন্তার কারণ হয়নি তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের আরও এক জুটিতে। দুজনের ৯৭ রানের জুটি ভাঙে তামিমের বিদায়ে। ৫৪ রান করে দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্টাম্পিং হয়েছেন তামিম। মাথা খাটিয়ে ব্যাট করতে থাকা সাকিব ফেরেন আরেক স্পিনার অ্যাশলে নার্সের বলে। তারপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ৮৭ রানের জুটি ও তীরে এসে তরি ডোবানোর আরও এক গল্প।

এর আগে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগে ব্যাট করতে পাঠান মাশরাফি।  হেটমায়ারের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে শেষ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৭১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গায়ানার লোকাল হিরো হেটমায়ার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেন ৯৩ বলে ১২৫ রান।

 বোলিং ঠিকঠাক হলেও সেই ফিল্ডিংই হয়নি জুতসই। হাত ফসকে বেরিয়েছে একাধিক ক্যাচ। তার সুবিধা নিয়ে শক্ত চ্যালেঞ্জ দাঁড় করাতে পেরেছেন হেটমায়াররা।

এদিনও শুরুটা মনমতো এনে দেন অধিনায়ক মাশরাফিই। এভিন লুইসকে ফাঁদে ফেলেন এলবিডব্লিওর। ২৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দেখেশুনে ব্যাট করার চেষ্টায় ছিলেন ক্রিস গেইল। দারুণ  আটসাটো বল করতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ তাকে আগাতে দেননি বেশি। সুইপ করতে গিয়ে এলবডব্লিও হন উইন্ডিজের সবচেয়ে বড় তারকা।

খানিক পর আবার সাফল্য। বল করতে এসে উইকেট পেতে সময় নেননি সাকিব আল হাসান। তার বলে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন শাই হোপ। বল করতে এসে প্রথম ওভার এদিনও উইকেট পেয়েছেন রুবেল হোসেন। জেসন মোহাম্মদকে আউট করে ম্যাচের লাগাম এনেছিলেন বাংলাদেশের দিকেই। কিন্তু আবারও দাঁড়িয়ে যান শিমরন হেটমায়ার। গায়ানিজ বলে স্পিনটা ভাল খেলতে জানেন, ঘরের মাঠে সব ফায়দাই তুলেছেন তিনি। রোবম্যান পাওয়েলের সঙ্গে তার পঞ্চম উইকেটে শতরানের জুটিতেই আসে শক্ত স্কোরের ভিত।

তাদের জুটির সময় অবশ্য বেশ গাছাড়া ছিল বাংলাদেশের ফিল্ডিংও। ক্যাচ উঠিয়েও বেঁচেছেন হেটমায়ার। হাত ফসকে বেরিয়েছে রানও। ৪০ ওভারের পরে আবার বল করতে এসে জুটিটি ভেঙ্গেছেন রুবেলই। সোজা বলে চালাতে গিয়ে বোল্ড হন ৪৪ রান করা পাওয়েল। হেটমায়ারকে থামাতে না পারায় বড় স্কোর ঠেকানো যায়নি। পরে সেটিই গড়েছে ব্যবধান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৯.৩ ওভারে ২৭১ (গেইল ২৯, লুইস ১২, হোপ ২৫, হেটমায়ার ১২৫, জেসন ১২, পাওয়েল ৪৪, হোল্ডার ৭, নার্স ৩, পল ৪, বিশু ০, জোসেফ ১*; মাশরাফি ১/৪৪, মিরাজ ১/৪০, মুস্তাফিজ ২/৪৪, মোসাদ্দেক ০/৩১, সাকিব ২/৪৫, রুবেল ৩/৬১)।

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৮/৬ (তামিম ৫৪, এনামুল ২৩, সাকিব ৫৪, মুশফিক ৬৮, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, সাব্বির ১২, মোসাদ্দেক ৩*, মাশরাফি ১*; জোসেফ ১/৫৫, হোল্ডার ১/৬৬,নার্স ১/৩৪, পল ১/৪৩, গেইল ০/২৬, বিশু ১/৩৯)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: শিমরন হেটমায়ার

Comments

The Daily Star  | English
government bank borrowing target

Govt to give special benefits to employees, pensioners from July 1

For self-governing and state-owned institutions, the benefit must be funded from their budgets

1h ago