প্রকাশ্য দিবালোকে অপহরণের ৯ ঘণ্টা পর আওয়ামী লীগ নেতা উদ্ধার
রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাড়ির সামনে থেকে অপহরণের প্রায় ৯ ঘণ্টা পর গতকাল উদ্ধার হয়েছেন কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি পারভেজ হোসেন। আগ্নেয়াস্ত্র ও ওয়াকি-টকি সমেত অজ্ঞাতপরিচয় চার জন তাকে অপহরণ করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মিনার মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে ফেরার পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে পারভেজকে একটি কালো গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এর প্রায় ৯ ঘণ্টা পর পূর্বাচলের একটি দোকান থেকে তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মির জানান, ফোন পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে পারভেজকে উদ্ধার করা হয়। ওসি আরও জানান, সেসময় ঘুমের ঘোরে ছিলেন পারভেজ। তাই তার সঙ্গে তিনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেননি।
বিস্তারিত না জানিয়ে ওসি গতরাত সোয়া ১টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অপহরণকারীরা পারভেজকে অজ্ঞান করেছিল। লালমাটিয়ায় তিনি তার বাড়িতে ঘুমাচ্ছেন।’
কুমিল্লা-২ আসন থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যাশী পারভেজ তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। তার খালাতো ভাই ফাহাদ ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্দুকের মুখে চার জন পারভেজকে একটি কালো রঙের গাড়িতে নেয়। তাদের হাতে ওয়াকি-টকি ছিল। গাড়িটির নম্বর প্লেটে লেখা ছিল ‘ঢাকা মেট্রো ঘ ১৪-২৫৭৭’।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, অপহরণকারীদের সবার বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে।
পারভেজকে যেখান থেকে অপহরণ করা হয় লালমাটিয়ার সি ব্লকে তার পাশের একটি বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায় পারভেজের ভাড়া বাড়ির গেটের সামনে টি-শার্ট ও জিন্স পরিহিত এক যুবক দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাড়ির সামনে যেতেই তিনি পারভেজের সঙ্গে করমর্দন করেন। এসময় লম্বা চুলের এক ব্যক্তি তাকে পেছন থেকে শক্ত করে ধরে ফেলেন। তারা দুজনে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যান। তবে ক্যামেরার অবস্থানের কারণে ও ঘটনাস্থল বেশ খানিক দূরে হওয়ায় অন্যান্য অপহরণকারী ও গাড়িটিকে ভিডিওতে দেখা যায়নি।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিতাস উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন পারভেজ। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। চেয়ারম্যান থাকাকালে উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল। গত বছর সোহেল ও তার লোকেরা পারভেজের ওপর বন্দুক হামলা চালায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অপহরণের সঙ্গে সোহেল জড়িত থাকার সন্দেহের কথা জানিয়ে ফাহাদ বলেন, গাড়িতে বন্দুক হামলার ঘটনায় পারভেজ অক্ষত ছিলেন। পরে তিতাস থানায় এ নিয়ে একটি মামলা করা হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি কখনোই পারভেজের ওপর হামলা চালাননি। গতকালের অপহরণ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
তার দাবি, পারভেজের সঙ্গে তার রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ তাদের হাতে এসেছে। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে পারভেজকে দুজন গাড়িতে তুলছেন ও অন্য একজন বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করছেন। বিআরটিসি থেকে তথ্য নিয়ে তারা জেনেছেন গাড়ির নম্বর প্লেটটি ভুয়া।
অপহরণকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ওয়াকি-টকি থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বিবরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Comments