ক্যারিবিয়ান ঝড়ের সামনে পেরে উঠল না বাংলাদেশ

টেস্ট বিভীষিকার পর ওয়ানডেতে প্রত্যাশিত জয়। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে রচিত হয় নয় বছর পর বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের গল্প। কিন্তু প্রিয় সংস্করণ শেষ হতে সেই মাঠেই পুরনো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে টাইগাররা হেরেছে বড় ব্যবধানেই। উইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের হারে ০-১ এ সিরিজে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ।

টেস্ট বিভীষিকার পর ওয়ানডেতে প্রত্যাশিত জয়। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে রচিত হয় নয় বছর পর আবার বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের গল্প। কিন্তু প্রিয় সংস্করণ শেষ হতে সেই মাঠেই পুরনো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে টাইগাররা হেরেছে বড় ব্যবধানেই। উইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হেরে ০-১ এ সিরিজে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ।

নির্ধারিত ২০ ওভারে টাইগাররা করেছিলেন ১৪৩ রান। বৃষ্টির কারণে ১১ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৯১। স্বল্প পূঁজিতে টাইগারদের প্রয়োজন ছিল শুরুতেই উইকেট। তা আসে মুস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে। দ্বিতীয় ওভারে জোড়া উইকেট এনে দেন কাটার মাস্টার। কিন্তু সে ধারাটা ধরে রাখতে পারেননি টাইগাররা। ডাবল উইকেট মেইডেন নেওয়া মুস্তাফিজুরই নিজের দ্বিতীয় ওভারে খেয়েছেন বেদম পিটুনি। মাঝে একটি উইকেট আসে রুবেলের বলে। বাংলাদেশের সাফল্য এই টুকুই।

দলে নেই ক্রিস গেইল, ডুয়াইন ব্রাভো ও সুনীল নারিনের মতো টি-টোয়েন্টির পরীক্ষিত পারফর্মাররা। কিন্তু তাতে সামান্য প্রভাব পড়েনি ম্যাচে। হেসে খেলেই জয় পেয়েছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টি-টোয়েন্টিতে তারা কতোটা শক্তিশালী ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিল উইন্ডিজ। শুরু ধাক্কা সামলে মারলন স্যামুয়েলসকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। স্যামুয়েলস ফিরে গেলেও উইন্ডিজের জয়ে বাধা পড়েনি। রভম্যান পাওয়েলকে নিয়ে রাসেল বাকি কাজটা সেরেছেন সহজেই। ২১ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন রাসেল।

ম্যাচের মাঝের মতো ম্যাচের শুরুতেও হয়েছিল বৃষ্টি। তাতে কিছুটা দেরিতে শুরু হয় ম্যাচে। তবে প্রকৃতির বৃষ্টি থামার পর শুরু হয় টাইগারদের উইকেট হারানোর বৃষ্টি। ওয়ানডেতে অবিস্মরণীয় সিরিজ জয়ের মূল নায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টিতেও তাই তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ধীর গতিতে ব্যাটিং করার ঘাটতিটা হয়তো পুষিয়ে টি-টোয়েন্টির মেজাজের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে শুরুতেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। দারুণ ফর্মে থাকা এ ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন অনিয়মিত বোলার অ্যাশলে নার্সের বুদ্ধির কাছে হার মেনে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রথম বলেই স্টাম্পিং হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান এখন তামিম।

ছন্দ হারানো সৌম্য সরকার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন ব্যর্থতারই। সামনে এগিয়ে খেলার বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড। এই প্রথম টি-টোয়েন্টি প্রথম দুই ব্যাটসম্যান আউট হন প্রথম বলেই। দুর্ভোগটা আরও বড় হতে পারতো। আন্দ্রে রাসেলের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই মারলন স্যামুয়েলস টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সহজ ক্যাচ না ছাড়তেন। তবে বাংলাদেশের দুর্ভোগটা হয়তো খুব একটা পছন্দ হয়নি উইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েটের। তা না হলে প্রথম ওভারে জোড়া উইকেট নেওয়া নার্সকে কেন পরের ওভারেই সরিয়ে দিবেন?

জোড়া ধাক্কা খাওয়ায়র পর লিটন কুমার দাসকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগ্রাসী ঢঙে ব্যাট চালিয়ে দ্রুতই ৩৮ রানের জুটি গড়েন। তবে কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি। দুই সেট ব্যাটসম্যানকেই কিমো পল কাবু করেন শর্ট বলে। ডিপ স্কয়ারে সহজ তুলে সাজঘরমুখী হন লিটন। পরের বলে সাকিব। অবশ্য টাইগার অধিনায়কের আউটে মূল কৃতিত্বটা কেসরিক উইলিয়ামসের। সীমানায় দারুণ এক ক্যাচ ধরেন এ পেসার। 

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই চার উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নেমেই টানা তিনটি বল ডট দিয়ে বুঝিয়ে দেন ধীরে লয়েই কাজটা করতে চান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু স্যামুয়েল বদ্রির পরের ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারি মেরে বুঝিয়ে দেন আলগা বল পেলে ছেড়ে কথা বলবেন না তিনি।

রানের চাকা সচল রেখেই এগিয়ে যান দুই অভিজ্ঞ সেনানী। ৪৭ রানের জুটিও গড়েছিলেন। কিন্তু এরপর আগাতে পারেননি আরও একবার শর্ট বলে কাবু হয়ে। উইলিয়ামসের বলে মুশফিক আপার কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন সীমানায়। ১০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই নেই দলের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান। তারপরও নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে গেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১১ ওভারেই আসে দলীয় শতরান। কিন্তু হারাতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট।

হতাশ করেছেন সাব্বির রহমানের জায়গায় একাদশে ঢোকা আরিফুল হকও। এক প্রান্তে স্বপ্নটা ধরে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ২৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটি শেষ হয় উইলিয়ামসের স্লোয়ার বলে বোকা বনে। কার্যত তখনই শেষ হয় টাইগারদের বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন। এরপর লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা কোন মতে টেনে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৪৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

উইন্ডিজ : (লক্ষ্য ১১ ওভারে ৯১) ৯.১ ওভারে ৯৩/৩ (ফ্লেচার ৭, লুইস ২, রাসেল ৩৫*, স্যামুয়েলস ২৬, পাওয়েল ১৫*; মিরাজ ০/৯, মুস্তাফিজ ২/১৮, সাকিব ০/২৭, অপু ০/২৪, রুবেল ১/১৩)।

বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (তামিম ০, সৌম্য ০, লিটন ২৪, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫, আরিফুল ১৫, মিরাজ ১১, অপু ৭, রুবেল ২, মুস্তাফিজ ৩; নার্স ২/৬, রাসেল ১/২৭, বদ্রি ০/৩৫, পল ২/২৪, ব্রেথওয়েট ০/২১, উইলিয়ামস ৪/২৮)।

ফলাফল : উইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আন্দ্রে রাসেল।

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

40m ago