আসামের ঘটনায় মমতার বিরুদ্ধে আরও মামলা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ভারতজুড়ে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে। হুমকি, উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে গতকাল (২ আগস্ট) দফায় দফায় আসামে তিনটি মামলা রেকর্ড হয় তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে।
Assam NRC
কলকাতায় ‘আসাম ভবনের’ সামনে নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতা করে স্লোগান দিচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা। ছবি: স্টার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ভারতজুড়ে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে। হুমকি, উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে গতকাল (২ আগস্ট) দফায় দফায় আসামে তিনটি মামলা রেকর্ড হয় তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে।

ওই মামলা নিয়েও মমতা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জানান, তিনটি কেন একশ মামলা করলেও তাকে থামানো যাবে না। আসামের ঘটনাকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির প্রমাণ বলেও অ্যাখায়িত করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

গতকাল আসামের নর্থ লখিমপুর থানা, পানবাজার থানা এবং বৈশিষ্ট থানায় তিনটি এফআইআরকে মামলায় রেকর্ড করে আসাম পুলিশ। মামলাগুলোতে মমতার বিরুদ্ধে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘উস্কানি,’ ‘হুমকি’ এবং ‘সম্প্রীতি বিনষ্ট’।

এদিকে, গতকাল মমতা ব্যানার্জির পাঠানো তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের আট সদস্যকে আসামের শিলচর বিমানবন্দরে আটক করা হলে সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

১৪৪ ধারার মধ্যেই শিলচরে একটি নাগরিক কনভেনশনে যোগ দিতে সেদিন সকালের ফ্লাইটে আসামের শিলচর পৌঁছায় ছজন সাংসদ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী এবং একজন বিধায়কের দলটি।

প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ডাক্তার কাকলী ঘোষ দস্তিদার টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শিলচর বিমানবন্দরে নামার পর তাদের সেখানে আটকে দেওয়া হয়। পুলিশের নজরবন্দি হতে দেখে তারা প্রতিবাদ জানালেই তাদের ওপর আসাম পুলিশ চড়াও হয় এবং ব্যাপক মারধরও করে। এক পর্যায়ে রাতের দিকে ১৫১ ধারায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের আটক করে আসাম পুলিশ।

গতরাত বিমানবন্দরে আটক থাকার পর আজ (৩ আগস্ট) শুক্রবার সকালে ব্যক্তিগত বন্ডে স্বাক্ষর করে মুক্তি পান প্রতিনিধি দলের আট সদস্য।

আজ সকালে কলকাতায় বিমানবন্দরে নেমে আসামের এই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে ওই প্রতিনিধি দলেরও আরেক সদস্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আসামের এই ঘটনা প্রমাণ করে বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে। সেখানে যদি স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকতো তবে আমাদের কেন বাধা দেওয়া হলো, আটকে দেওয়া হলো এবং মারধর করা হলো।”

এই ঘটনা নিয়ে গতকাল দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে তীব্র প্রতিবাদ জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, আসামের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে দেশে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে। তিনি এও বলেন, আসাম নিয়ে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না।

মমতার ভাষায়, “যদি আমার বিরুদ্ধে একশটা মামলাও করা হয় তবুও আমি কথা বলবো। কারণ আসামের সব ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর মানুষের পাশে আছি আমি।”

তবে বিজেপি আসামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করে উল্টো সেখানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকেই দায়ী করেছে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ গতরাতে বলেন, বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে এতো মানুষ খুন করল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যজুড়ে খুনোখুনি অব্যাহত রয়েছে। সেদিকে নজর নেই। তিনি আসাম নিয়ে চিন্তিত। এটি মমতার ভোটের রাজনীতি বলেও মন্তব্য করেন ওই বিজেপি নেতা।

দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে গত সন্ধ্যায় একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে দেখা করে আসাম ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকার অভিযোগ জানায়।

সেদিন বিকালে বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতার ধর্মতলায় এক প্রতিবাদ মিছিলেও হাজার হাজার বিজেপি নেতা-কর্মীকে তৃণমূলবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সভায় হাতে মাইক নিয়ে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা এনে, অনুপ্রবেশ করিয়ে ভোটব্যাংক বাড়াতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যজুড়ে যত সহিংসতা হচ্ছে সবই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা করছে। আর যত চাঁদাবাজি, অমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত তারা। তৃণমূলের সুবিধার জন্যই তারা অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু সেটি বেশি দিন চলবে না। বিজেপি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবেই।”

এসময় তিনি আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি সংশোধনের দাবি জানান। বলেন, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে। বিজেপির এটিই এজেন্ডা।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago