উচ্ছেদ হয়ে গেল শেষ ছয় মারমা পরিবার

মারমা পরিবারগুলোকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদের পর গত জানুয়ারি মাসে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেছে ভূমি দস্যুরা

বান্দরবানের সায়িঙ্গা মারমা পাড়ায় একসময় ৪২টি পরিবারের বসবাস ছিল। ভূমিদস্যুদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাড়াটির ছয়টি পরিবার টিকে ছিল। কিন্তু জীবনের ওপর হুমকির মুখে এ বছরের জানুয়ারি মাসে শেষ পরিবারটিও ভিটে-মাটি ছেড়ে চলে গেছে।

সরকারের বরাদ্দ দেওয়া জুম চাষের জমির ওপর ভূমিদস্যু প্রভাবশালীদের নজর পড়ায় বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উচ্ছেদ হওয়া পাড়াটির পাশের সায়িঙ্গা ত্রিপুরা পাড়ার ২২টি পরিবারকেও এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মারমা পাড়াটির হেডম্যান পিনাছা থৈ মারমা জানান, গত জানুয়ারি মাসে তার গ্রামের শেষ পরিবারটিও চলে গেছে। তিনি নিজেই এখন দালু পাড়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছেন।

মারমাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদের পর তাদের ১০০ একর জুম চাষের জমি এখন সিলভান ওয়াই রিসোর্ট এন্ড স্পা লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টুর দখলে। পাড়াটির হেডম্যান বলেন, যুগ যুগ ধরে বসবাস করা পৈত্রিক জমি তারা ছাড়তে চাননি। কিন্তু প্রতিবাদ করতেই বান্দরবান থানায় তাদের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে পুলিশ তার সঙ্গে তার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। আরও যারা উচ্ছেদ হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার এখন গ্রাম থেকে ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা অসহায়। জোর করে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা জমির অধিকার ফিরে পেতে চান।

হিল ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল এক্ট ১৯৮৯ ও চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট রেগুলেশন ১৯০০ অনুযায়ী এই অঞ্চলের কোনো জমি ইজারা, ক্রয়, বিক্রয় বা হস্তান্তরের পূর্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট জুমলিয়ান আমলাই বলেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় ১৮০টি পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাঙালি সেটেলার ও বেসরকারি রাবার বাগান মালিকরা এই উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত।

বান্দরবানে কয়েকটি গ্রামকে একসঙ্গে মৌজা বলা হয়। প্রত্যেকটি মৌজায় একজন করে হেডম্যান। হেডম্যান কে হবেন তা সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জেলাটিতে এরকম মোট ১০৯টি মৌজা রয়েছে। হেডম্যানরাই নির্ধারণ করে দেন কোন জমিতে কে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন।

তবে জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে জসিম বলছেন, তিনি বান্দরবান মৌজায় ১৫০ একর জমি ক্রয় করেছেন। জসিম চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই।

জসিমের দাবি, জমির বিনিময়ে ছয়টি পরিবারকেই তিনি বড় অংকের টাকা দিয়েছেন এবং তারা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে দিয়েছেন। পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের জন্য তিনি এই জমি কিনেছেন।

টাকার ব্যাপারে উচ্ছেদ হওয়া একজন ভুক্তভোগী মং বা ইউ বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফায় তিনি জসিমের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। তিনি এই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে তিন দফায় ধার নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জমি নিয়ে জসিমের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা একটি নথিতে দেখা যায়, দখল করা .১৮৩৭ একর জমি বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. জাকের হোসেন মজুমদারকে দান করেছেন জসিম। জমি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই এলাকায় পুলিশের ক্যাম্প স্থাপনের জন্য তিনি জমি নিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম কাউন্সিলের সদস্য কেএস মং মারমা বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। প্রাথমিকভাবে আমরা স্থানীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছি। তার মতে, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা থামবে না। তবে বান্দরবান মৌজার হেডম্যান উ চাউ প্রু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago