একটি আন্দোলন: যেভাবে শুরু এবং শেষ
জুলাই ২৯
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে মিরপুর-বিমানবন্দর উড়ালসেতুর কাছে অপেক্ষারত যাত্রীদের একটি বাস চাপা দিলে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয় এবং আহত হন নয়জন, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস রেষারেষি করছিলো।
কয়েকশ শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে জাবালে নূরের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শতাধিক গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, “কয়েকদিন আগে ভারতের মহারাষ্ট্রে একটা গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে ৩৩ জন মারা গেল।… আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, এগুলো কি উনারা কথা বলেন?”
৩০ জুলাই
রেষারেষি করা জাবালে নূর পরিবহনের বাস দুটির চালকের শাস্তি দাবি করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
র্যাব তিনজন চালকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।
জাবালে নূর পরিবহনের বাস দুটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিআরটিএ।
জাবালে নূর পরিবহনকে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার প্রতি পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
৩১ জুলাই
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের লাঠিচার্জে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়।
নৌপরিবহনমন্ত্রীর মন্তব্যের জন্যে তার পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকায় পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। পুলিশের একটি গাড়িসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
নৌপরিবহনমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে আসার কারণে শিক্ষার্থীরা বাণিজ্যমন্ত্রীর গাড়ি আটকায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ না করার নির্দেশ দেন।
আগস্ট ১
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রকম্পিত হয় ঢাকা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী চতুর্থ দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে রাখে।
গণপরিবহনের অভাবে অসুবিধায় পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
শিক্ষার্থীরা চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং আবারও দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে তিনজন মন্ত্রী নিশ্চয়তা দেন।
সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।
আগস্ট ২
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। বিএনপির ওপর আন্দোলনে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ আনেন ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতা।
ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা।
পুলিশের একজন ডিআইজির কাগজ ছাড়া গাড়ি রাস্তায় পেয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
আগস্ট ৩
আন্দোলন চলাকালে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের একজন সাংবাদিককে পেটানোর অভিযোগ উঠে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের বিরুদ্ধে।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা এবং অন্যান্য জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বাস মালিকরা।
আগস্ট ৪
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগ উঠে। সেই হামলায় অন্তত ১৫০ জন আহত হন।
ছাত্রলীগের সদস্যরা দ্য ডেইলি স্টারের তিন সাংবাদিককে পেটায় এবং একজনের ওপর চালায় নির্যাতন।
ডিএমপি যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের কঠোর হাতে দমনের হুমকি দেয়।
আগস্ট ৫
সব শিক্ষার্থীকে স্কুল-কলেজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালালে অন্তত ১২ জন সাংবাদিক আহত হন। কয়েকজনকে ছবি না তোলার হুমকি দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে পুলিশ ও ‘ছাত্রলীগের’ কর্মীরা। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়।
আগস্ট ৬
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষ হলে অন্তত ৪০ জন আহত হয়।
মিডিয়া পেশাজীবীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকরা।
আগস্ট ৭
ভাঙচুরের অভিযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
হামলাকারীদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেন সাংবাদিকরা।
Comments