প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ভাসমান বাড়ি

প্রতি বছর বন্যায় বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। নিরসনের উপায় হিসেবে গত ৪০ বছরে বেড়ি বাধ, সাইক্লোন শেল্টারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি (জি.আর.পি)-এর অর্থায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়র্মেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর) এর একদল গবেষক বন্যা প্রতিরোধে উদ্ভাবন করেছেন বাঁশ, কাঠ আর প্লাস্টিকের ড্রামের সমন্বয়ে নির্মিত প্রায় তিন কাঠার ভাসমান বাড়ি।

২০১৬ সালে গ্লোবাল রেজিলিয়েন্স পার্টনারশিপ আয়োজিত বন্যা ব্যবস্থাপনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে আড়াই লাখ ডলারের তহবিল দিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুলার চরে স্থানীয়দের নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করেন দলটি। এ বছর ৩০ জুলাই তিনটি ভাসমান বাড়ি নির্মাণের মধ্যদিয়ে সফলভাবে শেষ হয় ‘একটি স্বপ্নের বাড়ি’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ। গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডক্টর আইনুন নিশাত।

বাড়িটি বন্যা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সহনীয় বলে জানান ডক্টর নিশাত।

টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সকল আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে বন্যায় টিকে থাকার পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দাদের জন্য রাখা হয়েছে আয়-রোজগারের ব্যবস্থা। কৃষি, মৎস্য ও পোল্ট্রি এই তিন ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থাই রয়েছে বাড়িটিতে। ভার্টিক্যাল ফারমিং মেথড প্রয়োগ করে হাইড্রোপনিক ও অ্যাকুয়া কালচারের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার হাজার গাছ ও এক হাজার মাছ চাষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে এটিতে। এছাড়াও বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছে ২১৬টি মুরগি পালনের ব্যবস্থা।

সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এ বাড়ির এক ফোটা বর্জ্যও নদীর পানিতে ফেলা হবে না বলে জানান প্রকল্প-প্রধান ও মূল নকশাকার যুক্তরাজ্যের ড্যান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষক নন্দন মুখার্জি। ২১৬টি মুরগির বিষ্ঠা, মনুষ্য বর্জ্য ও রান্নাঘরের সকল জৈব বর্জ্যকে বায়ো-ডাইজেস্টারের মাধ্যমে গ্যাসে পরিণত করে রান্নার কাজে ব্যাবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে বাড়িটিতে।

সোলার প্যানেল, সোলার কন্সেন্ট্রেটর, উইন্ড মিল ও মেকানিক্যাল এনার্জির সমন্বয় ঘটিয়ে কম খরচে টেকসইভাবে সমাধান করা হয়েছে বাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও তা সরবরাহের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বাড়িটিতে। ১৬৭ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি না হলেও যাতে খাবার পানি ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির সঙ্কট না হয় সে জন্য বাড়ির নিচে রাখা হয়েছে ১৭ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার একটি রিজার্ভ ট্যাঙ্ক।

দল-প্রধান ডক্টর আইনুন নিশাত বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে পরিবেশবান্ধব ভাসমান এই বাড়িটিতে রয়েছে সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানি ও রান্নার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাসের ব্যবস্থা। বাড়িটি একইসাথে নিজের খাবার ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। তাই দুর্যোগের সময় এই বাড়ির বাসিন্দাদের কোন ধরণের সঙ্কটে পড়তে হবে না।’

বাড়ির নির্মাণ ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাড়ি বানাতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে গড়ে ১০ লাখ টাকা। তবে এখন তা পাঁচ লাখ টাকায় বানানো সম্ভব।’ যে কেউ যাতে এ ধরনের বাড়ি বানাতে পারে সেজন্য অতি শিগগিরই  (জি.আর.পি)-এর ওয়েবসাইটে বাড়ির নির্মাণকৌশল ও নকশা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলেও জানান ডক্টর আইনুন নিশাত।

Comments

The Daily Star  | English

Govt calls for patience as it discusses AL ban with parties

Taken the initiative to introduce necessary amendments to the ICT Act, says govt

1h ago