সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মারা হচ্ছে: কেট ব্লাঞ্চেট
নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন অস্কার বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী ও শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর শুভেচ্ছা দূত কেট ব্লাঞ্চেট।
ইউএনএইচসিআর এর আমন্ত্রণে গত বছর বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের মুখ থেকেই তাদের দুর্দশা ও নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছেন কেট ব্লাঞ্চেট। গতকাল মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে গিয়ে তিনি যা দেখেছেন তার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না ‘যে ভয়াবহ মাত্রায় নির্যাতন হয়েছে তা শোনার জন্য কোনোভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। নারীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চলেছে। মানুষের চোখের সামনেই প্রিয়জনকে হত্যা করা হয়েছে।’
নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে লর্ড অব দ্য রিংসের এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি নিজেও একজন মা। রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে আমি আমার নিজের সন্তানকেই দেখেছি। প্রত্যেক অভিভাবকের মাঝে আমাকেই খুঁজে পেয়েছি।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মারা হচ্ছে-কোনো মা কি করে এই দৃশ্য দেখার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে?’
সোমবার জাতিসংঘের একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিশন প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রমাণ রয়েছে এবং এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়া উচিত।
জেনেভায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পেজগুলো তারা মুছে ফেলবে। এই ব্যক্তিরা যেন ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করে জাতিগত ঘৃণা ছড়াতে না পারে সে জন্যে তাদেরকে ‘ব্যান’ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের ভয়াবহতা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন একে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের অকাট্য উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবের পর এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীকে গণহত্যার অভিযোগে কাঠগড়ায় নিতে বলা হলো। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীর রাশ টানতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি তার ক্ষমতা ব্যবহার করেননি, সেটাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
Comments