অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ে নামছে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছেন সেখানে কাগজহীন অবস্থায় থাকা প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি।
manpower malaysia
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিকের কাজের অনুমতি রয়েছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছেন সেখানে কাগজহীন অবস্থায় থাকা প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি।

গত ৩০ আগস্ট সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচি শেষ হওয়ায় মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ কাগজহীন অভিবাসীদের ধরতে দেশব্যাপী এই অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কুয়ালালামপুরের অভিবাসন গবেষক আবু হায়াত বলেন, “আমি সাইবারজায়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে দেখেছি কাগজহীন বাংলাদেশি, নেপালি এবং ইন্দোনেশীয় শ্রমিকরা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। এমনকি, তারা ঘর থেকেও বের হচ্ছেন না।”

তিনি টেলিফোনে গতকাল (৩১ আগস্ট) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যেসব শ্রমিকের কাজের অনুমতি রয়েছে তারাও আতঙ্কিত। কেননা, কাগজ রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকেও গ্রেপ্তার করার অনেক ঘটনা রয়েছে। পুরো মালয়েশিয়া জুড়েই এমনটি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এক বছর আগে শুরু হওয়া সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচিতে বলা হয়েছিলো মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ অভিবাসীরা ৩০০ রিঙ্গিত বা ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে এবং আরও ১০০ রিঙ্গিত ফি দিয়ে নিজ দেশে ফেরার বিশেষ অনুমতি লাভ করতে পারবেন।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তোফার আলি বিভাগের ফেসবুক পেজে গত ৩০ আগস্ট বলেন, “সাধারণ ক্ষমার দিন বাড়ানো হবে না। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) থেকে আমরা সাঁড়াশি অভিযানে যাবো। আমরা তাদেরকে এই কর্মসূচির সুবিধা নেওয়ার জন্যে যথেষ্ট সময় দিয়েছি।”

আবু হায়াত জানান, গতকাল (৩১ আগস্ট) ছিলো মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা দিবস। তাই আজ (১ সেপ্টেম্বর) থেকে অভিযান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভিন্ন সিন্ডিকেট বিদেশি শ্রমিকদের ‘আধুনিক দাস’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ‘অপারেশন মেগা ৩.০’ নামের এই অভিযান মাধ্যমে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে।

দেশটিতে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় রয়েছে বলে জানান যায়।

মালয়েশিয়ার জোহর বারুতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিক মোহাম্মদ জিন্নাত এই সংবাদদাতাকে গতকাল (৩১ আগস্ট) জানান, তিনি তার কাগজ নবায়নের জন্যে ৭,০০০ রিঙ্গিত এক এজেন্টকে দিয়েছেন ১০ মাস আগে। কিন্তু, এখনো সেই কাগজ হাতে পাননি।

তিনি বলেন, “আমি কয়েকদিন থেকে সেই বাংলাদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।” এ নিয়ে তার আতঙ্কের কথাও জানান জিন্নাত।

অভিবাসন মহাপরিচালক জানান, গত জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত ৯,২০০ অভিযানে অন্তত ২৮ হাজার ৬৩ জন অবৈধ অভিবাসী এবং ৭৯৯ চাকরিদাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি বাংলাদেশি হতে পারেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, অনেক শ্রমিক আদম পাচারকারীদের প্রতারণার শিকার। তারা শ্রমিকদের কোন বৈধ কাগজ দিচ্ছে না। এছাড়াও, বিভিন্ন শোষণ-বঞ্চনার কারণে অনেক বৈধ শ্রমিক কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

কুয়ালালামপুর-ভিত্তিক অভিবাসী অধিকার সংস্থা তেনাগানিতা-র পরিচালক আজিলি ফার্নান্দেজ টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, “সরকার এই শ্রমিকদের প্রতারণার শিকার হিসেবে দেখছে না। তাদেরকে দেখছে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে। এটা ঠিক হচ্ছে না।”

আজিলির প্রশ্ন- এই দেশ গঠনে যে শ্রমিকদের এতো অবদান তাদেরকে কেনো খুঁজছে সরকার? প্রকৃত অপরাধীদের কেনো খোঁজা হচ্ছে না?

তিনি জানান, কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের কখনো কারাগারে পাঠানো হয়, কখনো তাদের বেত্রাঘাত করা হয়। তাদের ওপর ‘অত্যাচার’ করা হয়। আর শেষে তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

তেনাগানিতা-র নির্বাহী পরিচালক গ্লোরিনি দাশ এক ইমেল বার্তায় এই সংবাদদাতাকে বলেন, এমন অমানবিক ধরপাকড়ে কোনো সুফল মেলে না। সবসময়ই তা ব্যর্থ হয়েছে।

তার মতে, অবৈধ শ্রমিকদের সংখ্যা যদি ৫০ লাখ হয় তাহলে তাদের থাকা-খাওয়া বাবদ যে খরচ হবে তা কল্পনাতীত। এতে আরও নির্যাতন, দুর্নীতি ও অদক্ষতার উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago