সেই এসপি মিজান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বহুল আলোচিত এসপি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গতকাল পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই দম্পতি ঘুষ ও দুর্নীতির অন্যান্য উপায়ে অর্থ অর্জন করেছে।
দুদক

অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বহুল আলোচিত এসপি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গতকাল পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এই দম্পতি ঘুষ ও দুর্নীতির অন্যান্য উপায়ে অর্থ অর্জন করেছে।

দীর্ঘ সময় নিয়ে তদন্ত, বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন, একবার দায়মুক্তি, পুনরায় তদন্ত, নানাবিধ ঘটনা ঘটছে এসপি মিজানুর রহমানকে কেন্দ্র করে।

দুদক তদন্তে জেনেছে, ঢাকা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের এসপি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার ওরফে নিপা মিজানের ১১ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে দুজনের জ্ঞাত আয় বর্হির্ভূত সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

বেআইনি নানা কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির অভিযোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এই পুলিশ কর্মকর্তা একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় ২০১০ সালে বাগেরহাটের এসপির পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছিল।

২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়, রাজধানীর বাইরে হেমায়েতপুরে ৮৪ শতাংশ জমিতে বিলাসবহুল একটি বাগান বাড়ি নির্মাণের কাজে তিনি তার ইউনিটের ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নির্মাণসামগ্রি আনা নেওয়ার কাজেও ব্যবহার করেছেন সরকারি গাড়ি। উপ পরিদর্শক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বেগার খাটানোর অভিযোগ তোলা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২ –এ মামলা দুটি হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ১৭ লাখ টাকা। আয়ের চেয়েও তার মোট সম্পদের পরিমাণ বেশি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির অন্যান্য মাধ্যমে তিনি এই সম্পদ অর্জন করেছেন। তার স্ত্রী নিপা মিজান স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। নিপার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৩২ লাখ টাকা যা তার স্বামীর অবৈধ সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, এই পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রী ও কন্যাদের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই সার কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়েছেন। তদন্তের মাধ্যমে এই দম্পতির আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলতে পারে বলে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই দম্পতির অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে তদন্ত করছেন দুদকের সহকারী কমিশনার ফারুক আহমেদ। রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গতকাল তিনি মামলা করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের খানা জরিপ থেকে দেশের সেবাখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির একটি তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করার এক সপ্তাহ পর এই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করল দুদুক। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, সেবাদানকারী ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর আগে গত মে মাসে দুদক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তার বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। সেই সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ থাকায় তাকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

উপ-পরিদর্শক হিসেবে ১৯৮৯ সালে পুলিশে যোগদান করেন মিজান। পরে ১৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার ও পরবর্তীতে পদন্নতি পেয়ে এসপি হন তিনি।

মন্তব্যের জন্য দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago