৯০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ছবি: পিআইবি, ভারত

বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আমি আশা করি, এই লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে একথা জানান।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি (২য় ব্লক) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়া দিল্লিতে তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কোলকাতা থেকে এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলা থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ই-সুইচ চেপে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী একযোগে প্রকল্প তিনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খরিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক আমরা সেটাই চাই। যার ফলে দুই দেশ একসঙ্গে আরও কাজ করে দুই দেশের জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় অনেক সাফল্যগাথা আগামীতে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হবে যা আমরা উদযাপন করতে পরবো। ভারত- বাংলাদেশ স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতের সকল সংসদ সদস্যদের এ জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা সকলে এক হয়ে এই স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে সব সময় যে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয় এখানে সেটিই আবার প্রমাণিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি আমরা আমাদের অন্যান্য সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আমি আশাকরি, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আমরা দুই দেশের জনগণের সামনে উপস্থিত হতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাত আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত থেকে আরও ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে মমতা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি জিতুন, তখন আমি বাংলাদেশে যাবো।

রেলওয়ে খাতেও আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা ১৯৬৫-পূর্ব রেল সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমরা শিগগিরই লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতীয় অর্থায়নে যৌথভাবে ঢাকা ও টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুরের মধ্যে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের ভিত্তিফলক স্থাপন করতে পারব।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে ১৯৬৫ সালের পূর্বে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদেরও আন্তঃদেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যে মহৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, তার লক্ষ্য সফল করার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারাটা গর্বের বিষয়।

তিনি বাংলায় উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো।’

প্রধানমন্ত্রী পরে আখাউড়া, ভেড়ামারা এবং কুলাউড়ার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ২০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে প্রাইভেট পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। এই ৫০০ মেগাওয়াট যোগ হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৬০ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ভারতের এলও সি’র আওতায় নির্মাণ ব্যয়ের ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেওয়া হবে। সেতু, প্যাসেঞ্জার প্লাটফর্ম, শেড, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago