ওমানে বসবাস করেও কুমিল্লায় গোপন বৈঠকের মামলায় হলেন আসামি

তিনটি ‘মিথ্যা মামলায়’ পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে সাড়ে চার বছর আগে বাহরাইন গিয়েছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের আহাদ খলিফা।

তিনটি ‘মিথ্যা মামলায়’ পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে সাড়ে চার বছর আগে বাহরাইন গিয়েছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের আহাদ খলিফা। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাসে দেশে এসেছিলেন তিনি। বাহরাইনেই নিজের শ্বশুর মারা যাওয়ায় দাফনের জন্য লাশ নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। তার ভ্রমণের কাগজপত্র বলছে, প্রায় সাড়ে তিন মাস দেশে থাকার পর এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বাহরাইনে ফিরে যান আহাদ।

কিন্তু দেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে বসবাস করেও আরেকটি মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করার অভিযোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর মুরাদনগর পুলিশ তাকে আরেকটি মামলায় আসামি করেছে।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, মামলার দিনই উপজেলা শাখা ছাত্র দলের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের মাদরাসাপাড়ার বাসায় একটি গোপন বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আহাদ। মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গোপন বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও মহাসড়কে যানবাহন ভাঙচুরের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। গোপন বৈঠকটিতে অংশগ্রহণকারীরা সবাই বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক।

মামলার অভিযোগপত্রে আসামিদের সম্পর্কে আরও বলা হয়, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

মামলার বাদী মুরাদনগর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল গোফরান মামলার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা পিরকাশিমপুর এলাকায় আলমগীরের বাড়িতে অভিযান চালান। সেখান থেকে তারা আলমগীর, মুরাদনগর উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আনম ইলিয়াস ও মোহাম্মদ আলম নামে শ্রমিক দলের এক কর্মীকে আটক করেন। মামলার বাকি আসামিরা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটক তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে অন্য আসামিদের সঙ্গে আহাদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আহাদ গতকাল ওমান থেকে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সুখেই ছিলাম। মুরাদনগর বাজারে আমার একটা দর্জির দোকান ছিল। শুধুমাত্র মিথ্যা মামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।’

আহাদের দাবি, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার একমাত্র ‘দোষ’ তিনি বিএনপির প্রাক্তন সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের প্রতিবেশী তিনি।

১২, ৬ ও ৪ বছর বয়সী তিন ছেলের বাবা আহাদের বক্তব্য, ‘আমি দেশের বাইরে থাকি। তাহলে কিভাবে আমি দেশে অপরাধ করলাম? আবার মামলারও আসামি হলাম।’

ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বারকা শহরে একটি খেলাধুলার সামগ্রীর দোকানে কাজ করেন আহাদ। গত বছর দেশে ফেরার পর তার বিরুদ্ধে হওয়া পুরনো মামলাগুলোয় হাজিরা দিয়ে জামিন নেন তিনি। কিন্তু অদ্ভুত ঘটনা হলো, গত বছর ২৫ অক্টোবর যেদিন আহাদের শ্বশুরের দাফন হয় সেদিনও পুলিশের একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়। সব মিলিয়ে এখন তিনি মোট পাঁচটি মামলার আসামি।

আহাদ বলেন, সজ্ঞানে আমি কোনোদিন মানুষের ক্ষতি বা এমন কোনো অপরাধ করিনি যার কারণে আমার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।

আহাদ দ্য ডেইলি স্টারের কাছে ভ্রমণের যেসব কাগজপত্র পাঠিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তবে এসব কাগজপত্রের সত্যতা বা এর পর তিনি ফের দেশে এসেছিলেন কি না সেটা দ্য ডেইলি স্টার নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Power supply may not improve anytime soon

The power supply situation has further deteriorated across the country as another power plant has completely shut and there is no sign of increasing generation in the immediate future.

6h ago