মরুর ডায়েরি

গরম, ট্যাক্সি ভাড়া আর হিন্দি ভাষার দাপট

দুবাই আসার আগে গরমের গপ্পো অনেক শুনে এসেছিলাম। গরম সামলানোর একটা মানসিক প্রস্তুতি তাই ছিলই। প্লেন রানওয়ে স্পর্শ করার আগে সূর্যের তাপ পড়া মরুভূমির উত্তপ্ত বালির ছবি চোখে ভাসায় শুরুতেই মিলছিল ইঙ্গিত। বিমানবন্দর আর গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের আশ্রয়ের মাঝের অংশে টের পাওয়া গেল আসল ঝাঁজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাওয়া গায়ে এসে টোকা মেরে জানান দিয়ে যায় তার দাপট। পরে এরকমই ঝাঁজ মিলল ট্যাক্সি ভাড়া আর হিন্দি ভাষারও।

দুবাই শহরটা আধুনিকতম। মেঘ ছোঁয়ার চেষ্টায় থাকা প্রকাণ্ড সব অট্টালিকা, সুন্দর মসৃণ রাস্তাঘাট, মানুষের স্বস্তির জন্য কি নেই এখানে। কিন্তু নেই গাছের ছায়া, এখানে ওখানে ছড়ানো কিছু নিঃসঙ্গ বৃক্ষ দেখে মনে হবে অন্য কোথাও থেকে টেনে এনে ফেলে রাখা হয়েছে বেচারা বৃক্ষদের। পুরো আবহতেই প্রকৃতির সামনা সামনি দাঁড়িয়ে মানুষের একটা দম্ভ প্রকাশ পেয়েছে। তপ্ত মরুর অস্বস্তি থোড়াই কেয়ার করে যেন মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে – ‘সব সিস্টেম করে দিচ্ছি আমরা’।

এখানে গরমের পাশাপাশি আরও দুটো জিনিসের দাপট চোখে পড়ার মতো। ট্যাক্সি ভাড়া আর হিন্দি ভাষা। দুবাইতে এসে সারাক্ষণ ট্যাক্সি চড়তে গেলেই বিপদ, ভাড়া গুনতে গুনতেই ফতুর হয়ে যেতে হতে পারে। বাংলাদেশের মতো কোন অনিয়মের ছিটেফোঁটাও অবশ্য নেই। মিটারের হিসাবেই এমন উত্তাপ। আইন মানার প্র্যাকটিস দেখা মিলল সবার মধ্যে। কোন সিগন্যাল কেউ অমান্য করছে না। দেখা মিলল অদ্ভুত দৃশ্যও। জেব্রা ক্রসিং-এ কোন পথচারী রাস্তা পারাপারের জন্যে আসা মাত্রই গাড়ি থেমে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। হয়ত ভিড়ভাট্টা নেই, সব ফাঁকা বলেই এমনটা সম্ভব।

বাংলাদেশি, শ্রীলঙ্কান, পাকিস্তানি আর ভারতীয় শ্রমিকদের বিপুল সংখ্যায় বসবাস দুবাইতে। তাদের সবার কমন ভাষা হিন্দি। বিমানবন্দরের সাপোর্ট স্টাফ থেকে ট্যাক্সি চালক, বিভিন্ন পেশায় যুক্ত লোকজন। সবাই দেদারছে কথা চালাচ্ছে হিন্দিতে। স্থানীয় আরবি বা আন্তর্জাতিক ইংরেজিও যেন হিন্দির কাছে ব্যাকবেঞ্চার।

দুবাই শহরের ভাষা হয়ত সামনের কদিনে জানা হবে আরও। দুনিয়ার আর সব পর্যটন নগরীর মতো উদার সাংস্কৃতিক পরিবেশ এখানেও আছে।

যে কাজে আসা সেই এশিয়া কাপ নিয়ে একদম মাতামাতি নেই। এশিয়া কাপ কাভার করতে এসেছি, ইমিগ্রেশন অফিসারকে এটা বোঝাতেই গলদঘর্ম হতে হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন কোনও কিছুই চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের আগ্রহ থাকার কারণও নেই। যাবতীয় আগ্রহ উপমহাদেশের প্রবাসীদের। প্রিয় দলের খেলা দেখতে অনেকেই মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর বাইরে আর মাতামাতির সময় কই।

এই শহরে বাংলাদেশ কখনো ক্রিকেট খেলেনি। তবে এই দেশে খেলেছে দুবার। দুবাইয়ের ঠিক গা লাগানো শহর শারজায় ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে খেলেছিল প্রথমবার। ১৯৯৫ সালে একই ভেন্যুতে সর্বশেষ নেমেছিল এশিয়া কাপে। ২৩ বছর পর খেলতে নামার আগে এখানে খুব বেশি অর্জনও নেই বাংলাদেশে। অস্ট্রেলেশিয়া কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজহার হোসেন সেন্টু দেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির মালিক হয়েছিলেন। বলার মতো সুখস্মৃতি বলতে এটুকুই। কিন্তু তখনকার বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা এই দল অনেক কিছুই যে নতুন করে লিখবে এ কথাই বলাই যায়।

দল না খেললেও বিচ্ছিন্নভাবে ক্রিকেটারদের কয়েকজনেরই খেলার অভিজ্ঞতা আছে মরুর দেশে। সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালকে তো এই কন্ডিশনে বেশ অভিজ্ঞই বলা উচিত। কিন্তু যতই অভিজ্ঞ হোন ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা খুব সহজ কিছু হবে না। প্রথমদিন এসে যে তাপমাত্রা পেয়েছি তার থেকেও ম্যাচের দিনের পূর্বাভাস ৬ ডিগ্রি বেশি!

বাংলাদেশও গরমের দেশ। কিন্তু দুবাইর গরম একটু আলাদা। প্রচুর চিটচিটে ঘাম বের হয় হাঁটলেই। খেলার মাঝে পানিশূন্যতা একটা বড় কনসার্ন, আছে ক্রাম্প হওয়ার ঝুঁকি। তবে যাই থাকুক দুদলের জন্য তো একই।

আজ ছয় দলের অধিনায়ক উন্মোচন করবেন এশিয়া কাপ। উদ্বোধনী ম্যাচে নামতে প্রস্তুত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুদলই। গরমের ঝাপটা আর প্রতিপক্ষের স্কিল সরিয়ে কে জিততে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
Ishraque Hossain demands resignation of Asif Mahmud and Mahfuj Alam

Ishraque vows to stay on streets until demands met

He also called for the resignation of two advisers — Mahfuj Alam and Asif Mahmud

2h ago