জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বামদের বিজয় বিজেপির পরাজয়

রোববার সন্ধ্যায় দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটগণনার সময় কেন্দ্রের বাইরে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়। ছবি: এনডিটিভি

নির্বাচন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের হলেও সমগ্র ভারতীয় রাজনীতির চোখ থাকে এই নির্বাচনের দিকে। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যেমন জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলত।

ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপিকে গো-হারা হারিয়ে চারটি শীর্ষ পদে চার বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের জোট প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

দেশটির স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য জগদীশ কুমারের সরকারি দলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে গত কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভারতের পার্লামেন্টে হামলার মুল অভিযুক্ত আফজাল গুরুর সমর্থনে স্লোগান, কাশ্মীর ও মনিপুরের স্বাধীনতার দাবি উঠার পরই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘সামরিক ক্যাম্প’ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

এখানে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে, ছাত্র আন্দোলন ও স্লোগানের জন্যেই সেই সময়ের বামপন্থী ছাত্রনেতা কানহাইয়ার কুমার ও উমর খালিদের নাম সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছিল এদের বিরুদ্ধে।

আর সেই আন্দোলনের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছাত্রদের কতটা সমর্থন ছিল সেটা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ থেকে পরিষ্কার হলেও ভোট বাক্স এতোটা প্রভাব পড়বে সেটা বিজেপি নেতৃত্ব কল্পনাও করেননি।

গত শুক্রবার ছিল জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের ভোট। আর রোববার ছিল ভোট গণনা।  

ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে বাম জোট প্রার্থী এন সাই বালাজি, সাধারণ সম্পাদক পদে আইয়াজ আহমেদ রাইদুর, বাম জোটের প্রার্থী সারিকা চৌধুরী সহ-সভাপতি এবং একই জোটের অমুথ জয়দীপ যুগ্ম সম্পাদকের পদে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ছাত্র সংগঠন এবিভিপি প্রার্থীদের হারিয়েছেন।

আর ভোট প্রাপ্তির নিরিখ বলছে, চার বাম সংগঠনের জোট (এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ ও এআইএসএফ) প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকেও কম ভোট পেয়েছেন এবিভিপির প্রার্থীরা। এটা বিজেপির ছাত্র সংগঠনের জন্যে তো বটেই, মূল বিজেপি নেতৃত্বের জন্যেও লজ্জাজনক।

যেমন, সভাপতি পদে এন সাই বালজি যেখানে ২ হাজার ১৫১ ভোট পেয়েছেন। সেখানে পরাজিত লালিত পাণ্ডে পেয়েছেন মাত্র ৯৭২ ভোট। সহ-সভাপতি পদে সারিকা চৌধুরী পেয়েছেন ২ হাজার ৫৯২ ভোট আর প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপির প্রার্থী গীতা শ্রী পেয়েছেন ১ হাজার ১৩ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বাম জোটের আইয়াজ আহমেদ রাইদুর যেখানে ২ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন; সেখানে এবিভিপির গণেশ মালহোত্রা পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৫ ভোট। যুগ্ম সম্পাদক পদে পরাজিত বেঙ্কট চৌবে যেখানে পেয়েছে ৮৯০ ভোট। সেখানে জয়ী বাম জোট প্রার্থী অমুথা জয়দীপ পেয়েছেন দ্বিগুণের বেশি ২ হাজার ৪৭ ভোট।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠিত গত ছয় বছরের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবার ভোট দেওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। এবার ভোট দিছেন ৫ হাজার ১৮৫ জন শিক্ষার্থী।

নতুন সভাপতি এন সাই বালাজি ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের এই জয়টা আসলে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধ প্রতীকী জয়।

সাধারণ সম্পাদক পদে আইয়াজ আহমেদ রাইদুর মনে করেন, এই জয় থেকে পরিষ্কার সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম কতটা কঠোর মানসিকতা লালন করেন।

যদিও পরাজয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেছেন পরাজিত দুই প্রার্থী গীতা শ্রী ও বেঙ্কট চৌবেরা। স্থানীয় গণমাধ্যমকে তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কুৎসা ছাড়ানোয় তাদের পরাজয় হয়েছে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবিভিপি দখল নেওয়ার পর বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল এবিভিপি। তবে সেই স্বপ্ন আর সত্যি হলো না এবার।

বিজেপি দেশব্যাপী যে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করেছে, তার বিরুদ্ধে একটা বড় প্রতিবাদ এই নির্বাচনের ফলাফল, বলছেন ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Comments

The Daily Star  | English

Committee of 3 advisers formed to probe Abdul Hamid's departure

Led by CR Abrar, Syeda Rizwana Hasan, and Brig Gen (retd) M Sakhawat Hossain are part of the committee

28m ago