আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হয়ে গেল ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল
সংসদের ভেতরে বাইরে সবার আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হয়ে গেল ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮। এই আইনের বিভিন্ন ধারায় যেসব বিধান রাখা হয়েছে তা মানুষের বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায় এমন আপত্তি উঠলেও গতকাল রাতে বিলটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন এই আইনে পুলিশকে পরোয়ানা ও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই আইনে ঢোকানো হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের সমালোচিত ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’।
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হওয়ায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হলেও এই আইনটিতেই বিতর্কিত ধারাটির বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে রাখা হয়েছে। বিলটি সংসদে তোলার আগেই এ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকরা আপত্তি তুলেছিলেন। সংসদে বিলটি উত্থাপন করার সময় এর বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদরাও তাদের আপত্তির কথা তোলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়ে যায়।
আপত্তির কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, এই আইন বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেই সাংঘর্ষিক এবং এই মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার পথে অন্তরায়। স্বাধীন সাংবাদিকতাও এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইনে যা বলা হয়েছে
আইনটির ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি মনে করেন এমন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হচ্ছে বা কোনো জায়গায় এমন অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বা অপরাধের আলামত ধ্বংস করা হতে পারে তবে তিনি ওই জায়গা বা ব্যক্তিকে তল্লাশি করতে পারবেন।
৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত করে বা অপরকে অপরাধ করতে সহায়তা করে যা অফিশিয়াল সিক্রেট এক্ট ১৯২৩ অনুযায়ী অপরাধ হয় তবে তার সর্বোচ্চ সাজা হবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা ভঙ্গ করা হলে কোনো ব্যক্ত সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ করে যা ঘৃণা ও জনগণের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষে শত্রুতা তৈরি বা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
Comments