আফগানিস্তানের কাছে বড় হার বাংলাদেশের
রশিদ খান ও গুলবাদিন নাইবের ৯৫ রানের জুটিতেই বিপদটা টের পেয়েছিল বাংলাদেশ। কারণ প্রতিপক্ষ দলে রয়েছেন ভয়ঙ্কর দুই স্পিনার। সে দুই স্পিনার তো টাইগারদের ভোগালেনই, সঙ্গে ভোগালেন অন্য বোলাররাও। ফলে আবুধাবিতে আফগানিস্তানের কাছে বড় পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৬ রানের হারে গ্রুপ পর্ব শেষ হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের।
২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকছিল বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে তারা। মাঝে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৩৬ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব আল হাসান। ওই টুকুই। এরপর আর জুটিই গড়ে ওঠেনি। শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেনের অপরাজিত ২৬ রান কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৪২.১ ওভারে ১১৯ (লিটন ৬, শান্ত ৭, সাকিব ৩২, মুমিনুল ৯, মিঠুন ২, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ২৬*, মিরাজ ৪, মাশরাফি ০, রনি ১, রুবেল ০; আফতাব ১/১১, মুজিব ২/২২, গুলবাদিন ২/৩০, নবি ১/২৪, শেনওয়ারি ০/১২, রশিদ ২/১৩, রহমত ১/৭)।
আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ২৫৫/৭ (শাহজাদ ৩৭, ইহসানুল্লাহ ৮, রহমত ১০, হাসমতুল্লাহ ৫৮, আসগর ৮, শেনওয়ারি ১৮, নবি ১০, গুলবাদিন ৪২, রশিদ ৫৭ ; রুবেল ১/৩২, রনি ২/৫০, মিরাজ ০/২১, মাশরাফি ০/৬৭, সাকিব ৪/৪২, মোসাদ্দেক ০/১৮, মুমিনুল ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৫)।
ফলাফল : আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রশিদ খান
খালি হাতে ফিরলেন মাশরাফি
দিনটা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ছিল না। বল হাতে বেদম পিটুনি খেয়েছেন। ব্যাট হাতেও ফিরলেন খালি হাতে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির বলে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েছেন আফতাব আহমেদের হাতে।
রহমতউল্লাহর প্রথম বলেই আউট মিরাজ
স্পিনারদের রাতে বল হাতে নিলেন আফগানিস্তানের পার্টটাইম স্পিনার রহমতুল্লাহ। তবে প্রথম বলেই পেলেন সাফল্য। প্রথম বলেই তার উপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ঠিকভাবে বলে সংযোগ ঘটাতে না পারায় পয়েন্টে হাসমতুল্লাহর সহজ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন।
ফিরে গেলেন মাহমুদউল্লাহও
সাকিব আল হাসানের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও গুগলি বুঝতে না পেরে শিকার হয়েছেন রশিদ খানের। রক্ষণাত্মক ভাবে খেলতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
রশিদ খানের গুগলিতে আউট সাকিব
৪৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে করছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ৩৬ রানের জুটি না গড়তেই সাজঘরমুখী হয়েছেন এ অলরাউন্ডার। রশিদ খানের গুগলি বুঝতে না পেরে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন দেশ সেরা এ খেলোয়াড়। ফলে চাপ ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশের।
চার উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে বাংলাদেশ
আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কার্যকরী একটি ইনিংস খেলেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষেও এমন কিছুরই আশা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন বলার মতো কিছুই করতে পারেননি তিনি। গুলবাদিন নাইবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। ফলে বড় চাপে পড়েছে বাংলাদেশ দল।
হতাশ করলেন মুমিনুলও
শুরুতেই দুই ওপেনারের বিদায়। বাংলাদেশ দল তাকিয়ে ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডে সংস্করণে সুযোগ পাওয়া মুমিনুলের দিকে। সাকিব আল হাসানকে সঙ্গটা হয়তো ভালোই দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন মুমিনুল। গুলবাদিন নাইবের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।
তবে শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার। পড়ে রিভিউ নেন গুলবাদিন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে ব্যাটে হাল্কা চুমু দিয়ে যায় বল।
দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে বাংলাদেশ
ভয়টা ছিল আফগানিস্তানের স্পিনারদের। বোলিংয়ে এখনও আসেননি রশিদ খান। তবে আরেক স্পিনার মুজিবুর রহমানই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন। এর মধ্যেই তুলে নিয়েছেন টাইগারদের দুই উইকেট। লিটন কুমার দাসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছেন এ স্পিনার।
মুজিবের শিকার শান্ত
ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো হলো না নাজমুল হোসেন শান্তর। দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের জায়গায় খেলার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গেলে ঠিকভাবে না লাগলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন এ ওপেনার। ফলে শুরুতেই চাপে পড়েছে বাংলাদেশ।
রশিদ খানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আফগানদের লড়াকু পুঁজি
১৬০ রানেই আফগানিস্তানের প্রথম সারির সাত ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছিল টাইগাররা। দুইশত রানের কোটাই তখন মনে হচ্ছিল বহুদূর। কিন্তু এরপরই যেন বোলিং ভুলে গেল টাইগাররা। ক্ষুরধারহীন বোলিংয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন রশিদ খানও। গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে গড়লেন দুর্দান্ত এক জুটি। তাতেই লড়াকু সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান।
নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫৫ রান করে আফগানিস্তান। শেষ দিকে শুধু ঝড়ই তোলেননি রশিদ খান, তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরিও। মাত্র ৩২ বলে খেলেছেন ৫৭ রানের ইনিংস। ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। সঙ্গী গুলবাদিনও কম যাননি। করেছেন ৩৮ বলে ৪২ রান। অষ্টম উইকেটে এ ব্যাটসম্যান যোগ করেছেন ৯৫ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন হাসমুতুল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ২৫৫/৭ (শাহজাদ ৩৭, ইহসানুল্লাহ ৮, রহমত ১০, হাসমতুল্লাহ ৫৮, আসগর ৮, শেনওয়ারি ১৮, নবি ১০, গুলবাদিন ৪২, রশিদ ৫৭ ; রুবেল ১/৩২, রনি ২/৫০, মিরাজ ০/২১, মাশরাফি ০/৬৭, সাকিব ৪/৪২, মোসাদ্দেক ০/১৮, মুমিনুল ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৫)।
সাকিবের চতুর্থ শিকার নবি
ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন মোহাম্মদ নবি। প্রতিশ্রুতিটা তেমনই ছিল। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাকে ফিরিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছেন তাকে। ফলে আফগানিস্তানের ৭ উইকেট তুলে তাদের চেপে ধরেছে টাইগাররা।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা হাসমতুল্লাহকে ফিরিয়েছেন রুবেল
এক প্রান্তে উইকেট তুলতে পারলেও আরেক প্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছিলেন হাসমতুল্লাহ শাহিদি। ৯২ বলে ৫৮ রানের ধৈর্যশীল ব্যাটিং করছিলেন তিনি। তবে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছেন রুবেল হোসেন। উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের ক্যাচে পরিণত করেছেন এ পেসার।
সাকিবের বলে বোল্ড শেনওয়ারি
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। রানের গতিটা তাই বাড়াতে চাইলেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। কিন্তু ভুল বোলারকে বেছে নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসানের বলে উচ্চবিলাসি শট খেলতে গিয়ে মিস করলেন। আর তাতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন শেনওয়ারি।
রনির পর সাকিবের জোড়া আঘাত
আফগানিস্তান ইনিংসের প্রথম দুটি উইকেট নিয়েছিলেন অভিষিক্ত আবু হায়দার রনি। এবার আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। ভয়ঙ্কর মোহাম্মদ শাহজাদকে ফেরানোর পর এবার ফেরালেন অধিনায়ক আসগর আফঘানকে। তাকে সরাসরি বোল্ড করে দিয়েছেন সাকিব।
রনির দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন শাহজাদ
ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। ২০তম ওভারে সাকিব আল হাসান যখন আক্রমণে আসলেন দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মারলেন তিনি। পরের বলে চাইলেন ছক্কা মারতে। তবে লংঅনে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নিয়েছেন আবু হায়দার রনি। আর তাতেই ভাঙে ৫১ রানের জুটি। এর আগের দুটি উইকেটই নিয়েছিলেন এ পেসার।
রনির জোড়া আঘাতে চাপে আফগানিস্তান
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছিলেন ইহসানউল্লাহকে। এবার ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান রহমত শাহকেও ফিরিয়েছেন আবু হায়দার রনি। তার প্রথম চারটি বলে কোন রান নিতে পারেননি রহমত। ভেতরে ঢোকানো পঞ্চম বলটি খেলতে গেলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।
অভিষেকেই রনির উইকেট
অভিষেকেই নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুরের জায়গা খেলতে নামা আবু হায়দার রনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে বাউন্ডারি তুলে নেওয়া ইহসানউল্লাহ আরও একটু বাউন্ডারি মারতে গিয়ে কাভারে মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি হন।
শান্ত-রনির অভিষেক
আঙুলের ইনজুরিতে পড়ে দেশে ফিরে যাওয়া তামিম ইকবালের জায়গায় কে খেলছেন তা নিয়ে বেশ গুঞ্জন ছিল। তবে লিটন কুমার দাসের সঙ্গে তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর উপরই আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এর আগে নিউজিল্যান্ডে এক টেস্ট খেলা শান্ত নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামছেন।
আছেন মুমিনুল হকও। সাড়ে তিন বছর পর আবার রঙিন পোষাকে ফিরলেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পাঁজরে চোট থাকায় প্রত্যাশিত ভাবেই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে। তার চোটেই ভাগ্য খুলেছে মুমিনুলের। তামিমের জায়গায় ওপেনিংয়ে বিবেচনায় ছিলেন তিনিও। তবে মুশফিকের মতো চার নম্বরে ব্যাট করার কথা রয়েছে তার।
পরিবর্তন আছে আরও একটি। টানা খেলার ধকল সামলাতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে দলের ইনজুরিপ্রবণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকেও। তার জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন তরুণ আবু হায়দার রনি। এর মধ্যেই ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও শান্তর মতো ওয়ানডেতে অভিষেক হচ্ছে তারও।
এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জায়গায় আরিফুল হককে একাদশের নেওয়ার ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে আসে টিম ম্যানেজমেন্ট। মোসাদ্দেককে আরও সুযোগ দেওয়ার পক্ষেই তারা।
বাংলাদেশ দল : লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আবু হায়দার রনি ও রুবেল হোসেন।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
এশিয়া কাপের নতুন সূচিতে গুরুত্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচটি। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলটির বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য সম্মানের। পাশাপাশি জয় তুলে ছন্দ ধরে রাখার মিশনও। এমন ম্যাচের শুরুতে ভাগ্যটা সঙ্গে ছিল না বাংলাদেশ। টস জিতে নিয়েছেন আফগান অধিনায়ক আসগর আফঘান। বেছে নিয়েছেন ব্যাটিং। তাই শুরুতে ফিল্ডিং করতে হবে টাইগারদের। আবুধাবিতে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়।
Comments