এশিয়া কাপ ২০১৮

রশিদের অলরাউন্ড নৈপুণ্যেই কাবু বাংলাদেশ

খেলার আগে বল হাতে বাংলাদেশের চিন্তার কারণ ছিলেন রশিদ খান। কিন্তু প্রথমে খেল দেখালেন ব্যাট হাতেই। তার ঝড়ো অর্ধশতকে আড়াইশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। পরে বোলিংয়েও চিরাচরিত রূপ দেখিয়েছেন তিনি। শুরু থেকে দারুণ বল করেছেন বাকিরাও। আফগানদের বিপক্ষে তাই বিধ্বস্তই হয়ে গেছে মাশরাফি মর্তুজার দল। নিজের জন্মদিনে দলকে জেতানোর নায়ক বনেছেন রশিদ খানই।

খেলার আগে বল হাতে বাংলাদেশের চিন্তার কারণ ছিলেন রশিদ খান। কিন্তু প্রথমে খেল দেখালেন ব্যাট হাতেই। তার ঝড়ো অর্ধশতকে আড়াইশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। পরে বোলিংয়েও চিরাচরিত রূপ দেখিয়েছেন তিনি। শুরু থেকে দারুণ বল করেছেন বাকিরাও। আফগানদের বিপক্ষে তাই বিধ্বস্তই হয়ে গেছে মাশরাফি মর্তুজার দল। নিজের জন্মদিনে দলকে জেতানোর নায়ক বনেছেন রশিদ খানই। 

বৃহস্পতিবার আবুধাবির শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভরা গ্যালারির সমর্থন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। খেলা দেখতে আসা প্রবাসী দর্শকদের হতাশই করেছেন সাকিব-মাশরাফিরা। আফগানিস্তান করা ২৫৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে মাত্র ১১৯  রানে।

১৩৬  রানের বড় হার দিয়ে তাই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্ব। ব্যাট হাতে ৫৭ রানের পর ১৩ রানে ২ উইকেট নেন রশিদ। করেছেন একটি রানআউটও।

দেরাদুনে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াটওয়াশ পর ওয়ানডেতেও আফগানদের সঙ্গে হারল বাংলাদেশ। এই নিয়ে এশিয়া কাপে আফগানদের সঙ্গে এটি দ্বিতীয় হার। ম্যাচের ফলাফলে অবশ্য টুর্নামেন্টের হিসেব নিকেশে অদল বদল হচ্ছে না। 

এমনিতে গুরুত্বহীন ম্যাচ। একাদশেই তাই বদল এসেছে স্বাভাবিক কারণে। তবু আন্তর্জাতিক ম্যাচ বলে কথা, র‍্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্ট হারানোর ব্যাপারও ছিল। বাংলাদেশের ম্যাচটা হালকা করে নেওয়ার সুযোগ তাই ছিল না। মনস্তাত্ত্বিক ফায়দা নেওয়ার ব্যাপার তো ছিলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পক্ষে আসেনি বাংলাদেশের।

শেষ পাঁচ ওভারে মোমেন্টাম নিজেদের কাছে নিয়েছিল আফগানিস্তান। ব্যাট হাতে সেটা বদলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।  বাজে বলে ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়েছেন। যথেষ্ট নিবেদন নিয়ে পড়ে থাকার চেষ্টাও দেখা যায়নি। আরও একবার রিস্ট স্পিনও দেখা দিয়েছে দুর্বোধ্য হয়ে।

আফগানরা এক পর্যায়ে ১৬০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়েছিল। বাংলাদেশের সুযোগ ছিল ওদের দুশোর ভেতর আটকে দেওয়ার। তখনই আসলে বদলেছে চিত্র। ব্যাট হাতে নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে ৩২ বলে ৮ চার আর ১ ছক্কায় করেন ৫৭ রান করেন রশিদ। ৩৮ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন নাইব।  শেষ পাঁচ ওভারে দুজনে মিলে তুলেন ৫৭ রান।

তবু লক্ষ্যটা ছিল না নাগালের বাইরে। কিন্তু নতুন উদ্বোধনী জুটি শুরুটা করে হতাশার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই হোঁচট,  ১৫ রানেই ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। অভিষেকটা রাঙানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মুজিব-উর রহমানকে অকারণে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়াতে চেয়ে। টার্নে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দিয়েছেন পয়েন্টে। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নতুন যাত্রা লিটন দাসের। প্রথম ম্যাচে কোন রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে দেখেশুনে শুরু করেও থাকতে পারলেন না। আফতাব আলমের বকে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে হয়েছেন এলবডব্লিও।

 ঠিক একই কথা বলা যায় মুমিনুল হকের বেলাতেও। সাড়ে তিন বছর পর ফেরার ম্যাচটা নিজের করতে পারলেন না তিনি। নাইবের লেগ স্টাম্পের বাইরের বাজে এক বলে উইকেট খুইয়েছেন। দুর্দশা থামেনি এরপরও। খানিক পরই আগের ম্যাচে ফিফটি করা মোহাম্মদ মিঠুনের স্টাম্প গেছে  নাইবের বলেই।

৪৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসা বাংলাদেশ তখন ধুঁকছে। ১৪.১ বল পর্যন্ত আসেনি কোন বাউন্ডারি। মাহমুদউল্লাহ নেমেই পেয়েছেন চার। তবে ওটা এসেছে ব্যাটের কানা গলে। আশা তখনই নিভু নিভু।  চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর বীরত্বের গাথা আছে। এবার তারচেয়ে কম কিছু করলেও চলত। কিন্তু জমল না জুটি। ৭৯ রানে গিয়ে ফিরলেন সাকিব। ২০ ওভার পর বল হাতে পাওয়া রশিদ খানের ঘূর্ণি বুঝতেই পারেননি। সোজা বলে হয়েছেন এলবিডব্লিও। ৫৫ বলে ৩২ রানের ইনিংস সাকিব মারতে পারেননি কোন বাউন্ডারি। এই পরিসংখ্যানই বলছে কতটা জড়োসড়ো হয়ে খেলতে হয়েছে তাকে।  সাকিবের ৩২ রানই ইনিংস সর্বোচ্চ। তার আউটের পরই  আসলে ম্যাচের এপিটাফ লেখা সারা। মাহমুদউল্লাহ অভাবনীয় কিছু করতে পারেননি।  ৫৪ বলে ২৭ করে রশিদের গুগলিতে কাবু হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ৩০ ওভার পর্যন্ত দলের ২ বাউন্ডারির দুটোই এসেছে তার ব্যাট থেকে। শেষ দিকে কিছুটা ব্যবধান কমিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন।

এর আগে আফগানদের শুরুটাও নড়বড়ে। ২৮ রানেই দুই উইকেট হারিয়েছিল তারা।  ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই দুই উইকেট নিয়েছিলেন রনি।

তৃতীয় উইকেটে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা আফগানদের। হাসমতুল্লাহ শহিদির সঙ্গে জুটি বেধে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মোহাম্মদ শেহজাদ। বোলিংয়ে এসে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। সাকিবের বলে লঙ অন দিয়ে তুলে মেরেছিলেন শেহজাদ। বাউন্ডারি লাইনে লাফিয়ে ওই ক্যাচ হাতে জমান রনি।

আফগান অধিনায়ককেও বেশিক্ষন টিকতে দেননি সাকিব। সাকিবের আর্মার বুঝতে না পেরে ব্যাট-প্যাডে পা গলে স্টাম্প খোয়ান ৮ রান করা আসগর।

এরপর সামিউল্লাহ শেনওয়ারিকে নিয়ে মেরামত চেষ্টা চালিয়েছেন হাসমতুল্লাহ। যথাসময়ে এসে শেনওয়ারিকেও থামান সাকিব। সাকিবের বলে আসগরের মতই একই দশা হয়েছে তারও।

আফগানদের ইনিংসের মূল চালিকাশক্তি হয়ে ছিলেন হাসমতুল্লাহ। তার ৫৮ রানের ইনিংস উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে শেষ করেছেন রুবেল। ১০ রান পরই মোহাম্মদ নবীকে এলবডব্লিওর ফাঁদে ফেলে চতুর্থ উইকেট নেন সাকিব। ২৮ ইনিংস পর ওয়ানডেতে চার উইকেট পেলেন তিনি। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চার উইকেট পেয়েছিলেন।

ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো চতুর্থ বোলার হিসেবে বল করেছেন মাশরাফি। ছোট রানআপে করা তার বোলিং শুরুতে মাপা থাকলেও শেষ দিকে হয়েছে আলগা। শেষ দিকে মার খেয়েছেন প্রায় সবাই। দারুণ ব্যাট করে তখনই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন রশিদ খান ও গোলাবদাইন নাইব। অষ্টম উইকেটের অবিচ্ছিন্ন ঝড়ো জুটিতে দুজনে মিলে তুলেন ৯৫ রান। যা পরে ঘুরিয়ে দিয়েছে ম্যাচের চেহারাও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২৫৫/৭ (৫০) ( শেহজাদ ৩৭,  ইহসানুল্লাহ ৮, রহমত  ১০,  হাসমতুল্লাহ ৫৮,  আসগর ৮, শেনওয়ারি ১৮, নবী ১০, নাইব ৪২* , রশিদ ৫৭* ; রুবেল ১/৩২, রনি ২/৫০ , মিরাজ ০/২১,   মাশরাফি ০/৬৭, সাকিব ৪/৪২, মোসদ্দেক ০/১৮, মুমিনুল ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৫ )

বাংলাদেশ: ১১৯/১০ (লিটন ৬,  শান্ত ৭, সাকিব ৩২, মুমিনুল ৯, মিঠুন ২, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৪, মাশরাফি ০, রনি, রুবেল     ; আফতাব ১/১১, মুজিব ২/২২, নাইব ২/৩০, নবী ১/২৪, শেনওয়ারি ০/১২, রশিদ ২/১৩, রহমত ১/৭)

ফল: আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রশিদ খান।

 

Comments

The Daily Star  | English
Awami League didn't nominate anyone in 2 seats

Seat-sharing for JS polls: AL keeps its allies hanging

A crucial meeting between the Awami League and its 14-party allies ended last night without any concrete decisions on seat sharing.

9h ago