ভারতের কাছে বিধ্বস্তই হয়ে গেল বাংলাদেশ

ছবি: এএফপি

বাজে শট সিলেকশন, অদ্ভুতুড়ে অ্যাপ্রোচ নিয়ে নেমে ব্যাটিংয়েই ম্যাচ ভারতের কাছে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। নুয়ে পড়া শরীরী ভাষায় বোলিং-ফিল্ডিং হয়েছে সাদামাটা, যেন আনুষ্ঠানিকতা সারার জন্যেই। এশিয়া কাপে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে তাই গুঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করা ১৭৩ রান ভারত তুলে নিয়েছে প্রায় ১৪ ওভার আগেই। হাতে তখনও তাদের ৭ উইকেট। দলকে জিতিয়ে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৮৩  রানে  মাঠ ছাড়েন।

রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার আর জাসপ্রিত বুমরাহ মিলে বাংলাদেশকে নাজেহাল করেছিলেন। এতে তাই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং অনুশীলন সারার চেয়ে কঠিন কোন পরিস্থিতি পাননি। 

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের কাছে ১৭৪ রানের লক্ষ্যটা খুব মামুলি। বাংলাদেশের বোলাররা অভাবনীয় কিছু করলেই কেবল একটু জমে উঠতে পারত খেলা। সেই অবস্থার কাছাকাছিও যেতে পারেননি সাকিব-মোস্তাফিজরা। ওপেনিংয়ে শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মা এনে দেন চনমনে শুরু। ৬১ রানে গিয়ে সাকিবের বলে ফেরেন ৪০ রান করা শিখর। বাকিটা ব্যাটের ভারতীয় দর্শকদের বিনোদন জুগিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত। আম্বাতি রাইডুকে রবেল উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানানোর পর ব্যাট করতে নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনী। জনপ্রিয়তম এই ক্রিকেটারের নামে তখন গ্যালারিতে তখন উল্লাস ধ্বনি।  ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচের ফলাফল তো হয়েই গেছে। দর্শকদের পয়সা উসুলের জন্য এইটুকু বিনোদনের হয়ত খুব দরকার ছিল। ধোনী অবশ্য খানিকক্ষণ ভক্তদের মন জুগিয়েছেন।

এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল করুণ দশা, উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিল। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা হাল না ধরলে চরম বিব্রতিকর পরিস্থিতিতেই পড়তে হতো দলকে।

কয়েকটি দৃশ্য বর্ণনা করলেই হয়ত পরিষ্কার হবে সব আত্মাহুতির ছবি। রবীন্দ্র জাদেজার বলে সাকিব আল হাসান টানা দুই চার মারলেন। প্রথমটি গেল কাভার দিয়ে, পরেরটি স্কয়ার লেগ দিয়ে। রোহিত শর্মার সঙ্গে আলাপ করে তখনই মিড উইকেট থেকে শিখর ধাওয়ানকে ধোনী নিয়ে এলেন স্কয়ার লেগে। জাদেজাকেও কি যেন বললেন। পরের বলে ওই স্কয়ার লেগেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২ বলে ১৭ করা সাকিব।

অথচ তার আগে খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। মিলছিল বড় কিছুর ইঙ্গিতও। পাতা ফাঁদ বুঝতে পারলেন না, বাজে শট নিজে ডুবলেন, দলকেও ডুবালেন। একইভাবে ভারতীয়দের পাতা ফাঁদ বুঝতে পারেননি নাজমুল হাসান শান্ত, ড্রাইভ করতে গিয়ে বুমরাহর বলে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বোধহয় মুশফিকের আউটই। শর্ট থার্ড ম্যান রেখে তাকে বল করছিলেন জাদেজা। মুশফিক রিভার্স সুইপ করে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ওখানেই। আগের দিনের মতো দুই ওপেনার এবারও ফিরেছেন তড়িঘড়ি। ১৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সিনিয়রা দায়িত্ব নিতে পারেননি। ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮তম ওভারেই ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে ফেলে বাংলাদেশ।

হতশ্রী ব্যাটিংয় আবুধাবি থেকে দুবাই টেনে নিয়ে আসায় এক ইনিংসের মাঝপথের আগেই তখন ম্যাচের ফলাফল অনেকটা পরিষ্কার। উইকেট ছিল না ব্যাট করার জন্য দুরূহ। তবু ব্যাটসম্যানদের এমন আত্মাহুতির মিছিল তখনই দিচ্ছিল বড় পরাজয়ের ইঙ্গিত।

বিপর্যয় সামাল দিয়ে কিছুটা লড়াইয়ের পূঁজি আনতে লড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট চালাচ্ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে থামতে হয়েছে তাকে। মোহাম্মদ মিঠুনের বেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রিভিউ তখন আফসোসের কারণ।

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে বেশ অনেকক্ষণ ক্রিজে টেকেন মোসাদ্দেক হোসেন। ১ রানে চাহালকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছিলেন। স্পিনের বিপক্ষে ভাল খেলার সুনাম আছে তার, কিন্তু এদিন যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন কাঁপাকাঁপি করেছেন স্পিন বলেই। জাদেজাকে সুইপ করার চেষ্টায় উইকেটের পেছনে ক্যান দিয়ে থামে তার ৪৩ বলে ১২ রানের সংগ্রাম।

১০১ রানে ৭ উইকেট হারানোয় তখনো দেড়শো করারও কোন আশা ছিল না। অষ্টম উইকেটে দারুণ জুটিতে সেই অবস্থা কাটান মাশরাফি ও মিরাজ। তাদের ৬৬ রানের জুটি যেন ছিল ডুবন্ত অবস্থায় বেঁচে উঠার একটুখানি চেষ্টা। মাশরাফি নিজেকে ব্যাটিংয়ে একধাপ উপরে এনে নেমেছেন, মিরাজ তারপরই। তবে মিরাজই প্রথমে নেন ব্যাটল। বোমরাহকে দুই চার,  চেহেলের বলে দারুণ দুই ছক্কায় এই উইকেটে কেমন ব্যাট করতে হয় তা দেখিয়েছেন মিরাজ। শুরুতে সময় নেওয়া মাশরাফিও  শেষ দিকে পেটাতে শুরু করেছিলেন। ভুবনেশ্বরকে টানা দুই ছয় মারার পর স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন শর্ট ফাইন লেগে। তবে তার আগে খেলেছেন ৩২ বলে ২৬ রানের দরকারি ইনিংস। ৫০ বলে ৪২ রান করে বুমরাহর বলে থামেন মিরাজ।

সাকিব, মুশফিক, মিঠুন আর মোসাদ্দেকের উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা অবশ্য জাদেজা। অক্সার প্যাটেলের চোটে ওয়ানডেতে ফেরাটা এই অলরাউন্ড স্মরণীয় করে রাখলেন। 

দুবাইর গরমে দলগুলো টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নেয়, এদিন ভারতকে দেখা গেল ভিন্ন কিছু করতে। রোহিত শর্মা টস জিতে ব্যাট করতে পাঠালেন বাংলাদেশকেই। উইকেট হয়ত ছিল কিছুটা মন্থর। তবে উইকেটের হিসাব নিকাশ তো অনেক পরে। বাংলাদেশ ম্যাচ খুইয়ে বসে তার আগেই।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ:  ১৭৩/১০ (৪৯.২) (লিটন ৭, শান্ত ৭, সাকিব ১৭, মুশফিক ২১, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মোসাদ্দেক ১২, মাশরাফি ২৬, মিরাজ ৪২, মোস্তাফিজ ৩, রুবেল ১*  ; ভুবনেশ্বর ৪/৩২, বোমরাহ ২/৩৭, চাহাল ০/৪০, জাদেজা ৪/২৯, কুলদীপ ০/৩৪ )

ভারত:  ১৭৪/৩ (৩৬.২)  ( রোহিত ৮২, শেখর ৪০, রাইডু ১৩, ধোনী ৩৩, কার্তিক ১*    ; মাশরাফি ১/৩০, মিরাজ ০/৩৮, মোস্তাফিজ ০/৪০, সাকিব ১/৪৪ , রুবেল ১/২১ )

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ:

Comments

The Daily Star  | English

Heavy damage reported at four sites in Israel after Iran missile attack

Iran and Israel continue to attack each other on Wednesday night, as Donald Trump weighs US involvement

11h ago