নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা আনছে বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচনের অন্তর্বর্তী সরকার কেমন হবে আনুষ্ঠানিকভাবে তার একটি প্রস্তাব দিতে চলেছে বিএনপি। এই সরকারকে তারা বলছে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’। মতামত নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে রূপরেখার একটি খসড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের কাছে পাঠিয়েছে দলটি।
BNP logo

আগামী জাতীয় নির্বাচনের অন্তর্বর্তী সরকার কেমন হবে আনুষ্ঠানিকভাবে তার একটি প্রস্তাব দিতে চলেছে বিএনপি। এই সরকারকে তারা বলছে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’। মতামত নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে রূপরেখার একটি খসড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের কাছে পাঠিয়েছে দলটি।

নির্বাচনকালীন সরকারের যে খসড়া করেছে বিএনপি তাতে সংসদ ভেঙে দিয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ একটি সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। রূপরেখার খসড়ায় তারা বলেছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সহায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টাদের নাম প্রস্তাব করবেন। প্রধানমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা মিলে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যান্য উপদেষ্টা কারা হতে পারেন তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরা সকলেই হবেন নির্দলীয়। তাদের মধ্যে কেউই আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এই নির্বাচনকালীন সরকার শুধুমাত্র কিছু রুটিন কাজ করবেন। তারা নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না। নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার দিন থেকে সহায়ক সরকারের মেয়াদে শেষ হবে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা একটি প্রস্তাব তৈরি করেছি কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামত নিতে হবে… আগামী মাসের মধ্যেই এটি প্রকাশ করা হবে।’

মওদুদ ছাড়াও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, ড. কামাল, যুক্তফ্রন্ট সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ চলমান ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’ এর রূপরেখা প্রকাশ করবে বিএনপি।

যোগাযোগ করা হলে ড. কামাল জানান, প্রস্তাবের একটি কপি তিনি পেয়েছেন তবে তিনি তা পড়ে দেখেননি। ‘…সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।’

২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর ফলে ২০১৪ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করায় অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। একে কেন্দ্র করে তখন থেকে দেশের রাজনীতিতে একটি সংকট চলছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিরোধিতা করে এর পুনঃপ্রবর্তন চাইছে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো ধরনের সরকারের প্রস্তাব তারা মানবে না।

খসড়া প্রস্তাবনায় বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে পদত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি সংবিধানে ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক–দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত করতে পারবেন—এই বিধান প্রয়োগ করে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একজনকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে ওই ব্যক্তি দলের কেউ হতে পারবে না।

এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে দেবেন যারা কোনো দলের হবেন না। যেহেতু তারা মন্ত্রী হবেন না, তাই তাদের শপথের প্রয়োজন হবে না। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠিত হবে। তারা ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago