চবি শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে ৫০ শিক্ষকের বিবৃতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় কারাগারে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের মুক্তি চেয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন।
মাইদুল ইসলাম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় কারাগারে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের মুক্তি চেয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন।

গতরাতে দেওয়া এই বিবৃতিতে তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মাইদুল ইসলামকে সোমবার কারাগারে প্রেরণ করার ঘটনায় আমরা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত।

‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করাকে অন্যায় হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে এবং তার শাস্তিস্বরূপ শিক্ষককে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু মতভিন্নতার কারণে কাউকে হুমকি দেওয়া হবে, তাকে তার কাজের জায়গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে, তার চাকুরিচ্যুতির দাবি উঠবে--এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষত, জনগণের টাকায় চলছে যে প্রতিষ্ঠান, যার সাথে যুক্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা নিজেদের জাতির বিবেক বলে মনে করেন, দাবি করেন, সেখানে এধরনের কণ্ঠরোধী চর্চা আমাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে ভিন্নমতকে দমনের, ভয়ভীতির দেখানোর, নিপীড়নমূলক যে চর্চা শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ঘটনাটি তারই অংশমাত্র। আজকের বাংলাদেশে দাগী এমনকি খুনের আসামীর জন্য রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমার আইনটি প্রয়োগ করেন, অথচ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মত প্রকাশের জন্য জেলে যেতে হয়। আমরা এই হুমকি এবং জেল-জুলুমের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’

তারা আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন এতটাই নাজুক যে, এতবড় ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে যেমনভাবে এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার, তেমন কোনো নড়াচড়া লক্ষ করছি না। ইতোপূর্বে মাইদুল এবং তাঁর প্রতি সহমর্মী শিক্ষকদের সমর্থনে ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে গেলে, সেটিও ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক সভায় মাইদুলের প্রতি সংঘটিত ঘটনাসমূহ যে অনভিপ্রেত এ মত ব্যক্ত হলেও দিন শেষে ‘ওপর মহলের’ ইংগিতে এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রকাশ হতে তারা পিছিয়ে আসেন। একদিকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাস্তানতন্ত্র, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামোর নিবর্তনমূলক প্রয়োগ এবং সার্বিকভাবে সমাজে ভয় ও তোষণের রাজনীতির সম্প্রসারণ আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে যে, ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে সাদাকে সাদা বলবার সাহসটুকুও আমরা হারাতে বসেছি। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী এবং দেশের আপামর জনসাধারণকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে আহ্বান জানাই। সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিবর্তনমূলক জেলজুলুম থেকে মাইদুল ইসলামকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া এবং তাকে হুমকি প্রদানকারীদের সনাক্ত করে অতিসত্বর বিচার এবং শাস্তির আওতায় আনা হোক। বাংলাদেশে শুভবুদ্ধির জয় হবে এই বিশ্বাস আমাদের আছে।’

 

বিবৃতিদাতারা হলেন:

আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাঈদ ফেরদৌস, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; শফিকুন্নবী সামাদী, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আব্দুল্লাহ আল মামুন, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রায়হান রাইন, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গোলাম হোসেন হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মোহম্মদ আজম, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সাদাফ নূর, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী মারুফুল আসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মাহমুদুল সুমন, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; বখতিয়ার আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; হিয়া ইসলাম, প্রভাষক, মিডিয়া স্টাডিজ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস; কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মো. আব্দুল মান্নান, সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; সেউতি সবুর, সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; নাসির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; গৌতম রায়, সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সেলিম রেজা নিউটন, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; আ-আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; মাসউদ ইমরান, সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; তাহমিনা খানম, সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;  পারভীন জলী, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; শাহিদ সুমন, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; শাতিল সিরাজ, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মুনাসির কামাল, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; মো. আমিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; হিমেল বরকত, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অতনু রব্বানী, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সুদীপ্ত শর্মা, সহকারি অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago