যেন ওদের পাকা ধানে মই দিল বাংলাদেশ

মরুর ডায়েরি

টুর্নামেন্টের সূচি দেখেই নাচানাচিটা শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না। স্পন্সরওয়ালাদেরও অনেকদিন থেকে এই নিয়ে মাথায় বাড়ি। একাউন্ট ভারি করতে উপায় খুঁজছিল এসিসিও। এশিয়া কাপের সূচিটা  তাই এমনভাবে করা হয়, যাতে ভারত-পাকিস্তানের তিনবার দেখা হতে পারে। অথচ সেখানেই বাগড়া দিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে যাওয়ায় ভারত-পাকিস্তান তিনটি ব্লকবাস্টার ম্যাচের পরিকল্পনা ভণ্ডুল। বাকি দুই ম্যাচ ছিল পানসে, একপেশে। ফাইনাল দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার তাদের আশাতেও তাই গুড়েবালি।

দুবাই শহরের প্রচুর পাকিস্তানি ট্যাক্সিচালক কাজ করেন। তারমধ্যে সেদিন একজন বলছিলেন, ভারতের সঙ্গে তারা দুই ম্যাচ হেরেছেন, ফাইনাল কিন্তু ঠিকই জিতবেন। ফাইনাল ভারতকে কোনভাবেই জিততে দেওয়া যাবে না। পাকিস্তানকে যে আগে  বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে যেতে হবে। সেটা তার ভাবনাতেই ছিল না, ভক্ত বলেই তার এমনটা ভাবার হয়ত অধিকার আছে।  কিন্তু তার মতন একই ভাবনা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত-পাকিস্তানের গণমাধ্যমের মধ্যেও। ভক্তদের মতো মুখ ফুটে না বললেও ভাবেসাবে টের পাওয়া যাচ্ছিল তা।

ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হচ্ছে ধরে নিয়ে যে হাইপ উঠেছিল, তার আরও কিছু নমুনা দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের ঠিক আগের দিন পাকিস্তানের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন শোয়েব মালিক। তার সংবাদ সম্মেলনের পুরোটা জুড়েই থাকল ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার সুযোগই পেলেন না। দেখে মনে হতে পারে ফাইনালে বুঝি পাকিস্তান চলেই গেছে, ভারত তো আগে থেকেই আছে। আগের দুই দেখায় ভারত পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ফাইনালে পাকিস্তান জিতে গেলে এক ম্যাচ জিতেই তো 'সিরিজ' তাদেরই। এসব অতি মাতামাতির মধ্যে বাংলাদেশ নাম আসল মাত্র একবার।  ছোট বাক্যে, কেবল আনুষ্ঠানিকতার জন্য।

চোটে পড়ে প্রথম ম্যাচ থেকেই নেই তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহিম খেলছেন পাঁজরের ব্যথা নিয়ে। মাশরাফি মর্তুজার তো চোট-ফোট লেগেই আছে। ঠাসা সূচি, গরমে কাহিল এক ক্লান্ত দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে ছিটকে গেলেন সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানও। আর বাংলাদেশ পারে কি করে! তবু খেলাটা যে ক্রিকেট। মাঠেই হয় ফয়সালা। দিনের প্রথমভাগে জমা হওয়া কালো মেঘ বেলা গড়াতে উবেও যায়। এই কথা হয়ত অনেকের মাথায় ছিল না।

বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়ায় বেশ খানিকটা ধাক্কা খেয়েছেন এখানকার অনেকে। আগে থেকে সাজিয়ে রাখা মঞ্চের ব্যানার যেন তড়িঘড়ি উলট পালট করতে হচ্ছে। খেলার আগেই ইতিহাস কথা বলছিল বাংলাদেশের হয়ে। আগের তেরো আসরের মধ্যে একবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে দেখা হয়নি ভারত-পাকিস্তানের। এবারও হচ্ছে না। টানা দ্বিতীয়বার এবং সর্বশেষ চার আসরের মধ্যে তিনবার ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। এশিয়ান ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা, স্পন্সরওয়ালা টাকার কুমিররা এবার একটু ভিন্নভাবে ভাবতেই পারেন।

Comments

The Daily Star  | English

Salehuddin urges all to work together to overcome challenges of economy

'We are in the midst of all sorts of challenges,' says the finance adviser

1h ago