দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে সৌদি শ্রমবাজার

কঠোর আইনকানুনের কারণে সৌদিতে বাধ্য শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরে এসেছেন অনেকেই
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল নেটয়ার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন প্রবাসী শ্রমিক। ছবি: এএফপি

অনিবন্ধিত প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ম চালু হওয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের চাকরি থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে সৌদি আরবের স্থানীয়রা। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য অতিদ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে দেশটির শ্রমবাজার।

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিদেশি শ্রমবাজার হওয়া সত্ত্বেও, বর্তমানে অতি অল্প সংখ্যক বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছেন। কিন্তু সে তুলনায় বহু সংখ্যক শ্রমিক ইতিমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন এবং এখনও এই ধারা অব্যাহত রয়ছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিমাসে গড়ে ২০ হাজার ৮০২ জন করে মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ২২৪ জন বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরব গেছেন। যেখানে গত বছর প্রতিমাসে গড়ে ৪৬ হাজার জন করে মোট ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ জন দেশটিতে গিয়েছিলেন।

রিয়াদে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে যাওয়ায় সৌদি আরব থেকে অনেক বাংলাদেশি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার ওপর সৌদি কর্তৃপক্ষ অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করায়, অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকদের সেখানে থাকার বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য বিদেশি শ্রমিকদের চাকরির সুযোগ কমে এসেছে।

বিএমইটি’র প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৩ অক্টোবর দাম্মাম নির্বাসন কেন্দ্র থেকে তিন ধাপে ৪০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি বাড়ি ফিরে আসেন। তবে গত কয়েক মাসে সৌদি আরব থেকে ঠিক কত সংখ্যক শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন, তা জানাতে পারেননি তিনি।

সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ২৩ বছরের যুবক সজীব হোসেন জানান, দুই বছর আগে সৌদি আরবে গিয়ে তিনি সাড়ে আট লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু নিয়োগদাতা তাকে সেখানে থাকার অনুমতিপত্র বা চাকরি কোনোটাই দেয়নি।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ওই যুবক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে কাজ করতাম এবং সেখানে আকামা (বসবাসের অনুমতিপত্র) ছাড়াই আমাকে থাকতে হয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে পুলিশ আমাকে আটক করে ৩ অক্টোবর বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।’

‘আমি সৌদি আরবে দুই বছর ছিলাম কিন্তু কোনো টাকা জমাতে পারিনি। এখন আমি কি করব?’

সজীব বলেছেন, আরও অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। যারা সৌদি আরবে গিয়েছেন তাদের অনেকেই একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের কথা বলে অনেক সৌদি কোম্পানি এবং বাংলাদেশি এজেন্টরা প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সেদেশে যাওয়ার পর আর তারা শ্রমিকদের চাকরি বা থাকার অনুমতিপত্র সরবরাহের কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেনি।

এছাড়া ফিরে আসা আরও অনেকের অভিযোগ, সৌদি আরবে বৈধভাবেই কাজ করে আসছিলেন তারা। কিন্তু তারপরও পুলিশ তাদের আটক করে নির্বাসন কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে রাখে। তারপর জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

2h ago