‘লাল কালিতে লিখে দিতে হবে, বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির জন্য নয়’

এর একদিক মিয়ানমারেও গ্যাস পাওয়া গেছে এবং অপরদিক ভারতেও গ্যাস পাওয়া গেছে। মাঝখানে আমাদের অংশটা এতদিন বসিয়ে রাখা হলো। আমার কাছে সবসময় এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এত বড় একটা সমুদ্র থাকার পরও অকর্ম হয়ে বসে থাকা।
তেল গ্যাস অনুসন্ধান

বিশেষজ্ঞদের নিষেধ সত্ত্বেও এলএনজি আমদানির পেছনে কাড়িকাড়ি ডলার খরচ করার পর এখন নিজেদের সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে 'জোর' দিচ্ছে সরকার। এর জন্য শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া।

দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সার্বিক প্রক্রিয়া, মজুত, গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দেওয়াসহ নানা বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমামের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি সবসময় বলে এসেছেন যে আমাদের স্থল ও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া দরকার। বছর দশেক পর মনে হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম: আমার কাছে মনে হয়, আমরা অনেক দেরি করে ফেললাম। কারণ, বিগত ১০ বছরের অবস্থা যদি দেখেন, ২০১২ সালের পর সমুদ্রে তেমন কোনো অ্যাক্টিভিটি হয়নি। আমাদের এত বড় এবং খুবই উপযোগী সমুদ্র আছে। এটি খুবই সম্ভাবনাময় স্থান।

এর একদিক মিয়ানমারেও গ্যাস পাওয়া গেছে এবং অপরদিক ভারতেও গ্যাস পাওয়া গেছে। মাঝখানে আমাদের অংশটা এতদিন বসিয়ে রাখা হলো। আমার কাছে সবসময় এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এত বড় একটা সমুদ্র থাকার পরও অকর্ম হয়ে বসে থাকা।

এখন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কখনোই না করার চেয়ে দেরি করে হলেও যে শুরু হয়েছে, সেটা নিয়েই এখন সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এখন যেহেতু শুরু হয়েছে, বেশ জোরেশোরেই কাজ এগিয়ে নেওয়া উচিত।

আমরা যদি এই তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজটা আর পাঁচ বছর আগেও শুরু করতাম, তাহলে এখন গ্যাসের সরবরাহ পেতাম। এখন শুরু হলো, সহসা তো আর গ্যাস পাব না। সাগরের গ্যাস পেতে বেশ সময় লাগবে।

ডেইলি স্টার: দরপত্র দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গ্যাস পেতে কতদিন লাগতে পারে?

অধ্যাপক বদরূল: গ্যাস আসতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে। এখন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দরপত্র আহ্বানে ছয় মাস, এর রেসপন্স পেতে ছয় মাস, বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ছয় মাস—এভাবে দেড় বছর চলে যাবে। যে প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি, সবকিছু রেডি করতে আরও এক বছর চলে যাবে। এরপর তারা প্রকৃত অর্থে সাগরে নামতে পারবে।

জরিপ ও অনুসন্ধান করে খনন প্রক্রিয়া শেষ করতে নূন্যতম আরও দুই বছর লাগবে। এই সব ধাপ শেষ করার পরে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি আসবে। গ্যাস পাওয়ার পরেও আবার পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস আনতে হবে। সেটার জন্যও আবার একটা সময়ের ব্যাপার আছে।

এ কারণেই আমি বারবার বলেছি, ১০টা বছর আমরা বসে থাকলাম। ২০১২ সালে আমাদের সমুদ্র সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতে এ নিয়ে কাজ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালে। ১০টা বছর বসে থাকার খেসারত তো আমাদের দিতেই হবে।

ডেইলি স্টার: এভাবে বসে থাকার কি কোনো কারণ ছিল?

অধ্যাপক বদরূল: কোনো কারণ নেই। এটা অযৌক্তিক এবং অদূরদর্শিতা ও অকর্মণ্যতার সাক্ষ্য।

আমরা সবসময় বলে এসেছি যে এলএনজি কিনতে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এখন দেখেন, সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে আর পারছি না আমদানি করে, ডলার তো শেষ। এখন তারা নিজের গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে।

ডেইলি স্টার: সমুদ্রে মিয়ানমার ও ভারত বড় পরিমাণে গ্যাস পেয়েছে। যদি ধরে নেই আমরাও তেমন পরিমান গ্যাস পাব। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে যায়, তাদের লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব তেল-গ্যাস তুলে সেগুলো বিক্রি করে লাভ নিয়ে চলে যাওয়া। প্রয়োজনে তারা অন্য দেশে এগুলো বিক্রি করে। সেক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হবে?

অধ্যাপক বদরূল: বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির জন্য নয়—এই কথাটা লাল কালিতে সব নথিতে বড় করে লেখা থাকতে হবে। যাতে কোনো অবস্থাতেই এই গ্যাস রপ্তানির সুযোগ না থাকে।

দরপত্র যেটা আহ্বান করা হয়েছে, সেখানে অবশ্য বলা আছে যে এই গ্যাস যদি দেশে ব্যবহার করা না হয় বা বাংলাদেশ যদি এই গ্যাস না কেনে, তাহলে সেটা রপ্তানি করা যাবে। এই কথাটা না লেখাটাই ভালো। কিন্তু, তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে আবার একটা চাপ থাকে। কারণ, তারা যখন কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যাবে, তখন ব্যাংক চাইবে তাদের কর্মপরিকল্পনায় রপ্তানির সুযোগ থাক।

কিন্তু, গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, আমাদের তো আর কিছু নেই। বাংলাদেশের যতটুকু প্রয়োজন এবং যতদিন প্রয়োজন, এটা ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং যোগান কমছে। কাজেই যোগান বাড়িয়ে চাহিদার সমান কখনোই করতে পারবে না। দেশের গ্যাস উৎপাদন হলেও কিছু এলএনজি আমদানি করতেই হবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেই পরিমাণ গ্যাস আমাদের নিশ্চয়ই একবারে লাগবে না। অনেক বছর ধরে সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু, উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চয়ই চাইবে যতদ্রুত সম্ভব এগুলো উত্তোলন শেষ করে তাদের মুনাফা বাড়াতে।

অধ্যাপক বদরূল: আমাদের উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। একবারেই সব তুলে ফেলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যে গ্যাস আমি এক বছরে তুলতে পারতাম, সেটা প্রয়োজনের হিসাবে ১০ বছরে তুলব।

ডেইলি স্টার: বিদেশি প্রতিষ্ঠান সেই শর্তে রাজি হবে কেন?

অধ্যাপক বদরূল: এটা একটা যৌক্তিক প্রশ্ন। কিন্তু, এখানে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয় আছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে যদি এই স্বাধীনতা দেওয়া হয় যে তোমরা যত খুশি উঠাও এবং বিক্রি করো, সেটা একটি ব্যাপার। আর দেশের স্বার্থে তাদের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে যে দেশের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস তুলতে হবে। এখান থেকে ব্যবসা তারাই করবে, কিন্তু একটু ধীরগতিতে। এমন চুক্তি পৃথিবীর অনেক দেশেই হয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এই চুক্তির যৌক্তিকতা জানে। তাদেরকে রাজি করানো যাবে কি না, সেটা আমাদের নেগোসিয়েশনের দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে।

দেরিতে হলেও গ্যাস উত্তোলনের দিকে মনোনিবেশ করা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই গ্যাস তুলে শেষ করে ফেলা বাংলাদেশের জন্য ঠিক হবে না। দেশের চাহিদা বুঝে সেই পরিমাণে উত্তোলন করতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই এই গ্যাস রপ্তানি করা যাবে না।

ডেইলি স্টার: বিদেশি কোম্পানীর থেকে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ডলারে গ্যাস কিনবে বাংলাদেশ?

অধ্যাপক বদরূল: হ্যাঁ। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের যে দাম সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম নির্ধারিত হবে। যেমন: এখন ক্রুড ওয়েলের দাম ৮০ ডলার। সেই হিসাবে গ্যাসের ইউনিটের দাম হবে আট ডলার। ক্রুড ওয়েলের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে গ্যাসের দাম ওঠা-নামা করবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের সমুদ্রসীমার কোন ব্লকে কী পরিমাণ গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে, এমন কোনো জরিপ কি বাংলাদেশের কাছে আছে?

অধ্যাপক বদরূল: সাধারণভাবে বাংলাদেশে কয়েকটি জরিপ হয়েছে। সেখানে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের তথ্য নেই। তবে, সার্বিকভাবে বলা হয় যে পূর্ব দিকের ব্লকগুলোতে গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকার সম্ভাবনা আছে এবং পশ্চিম দিকের ব্লকগুলোতে কম। এ জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও পূর্ব দিকের ব্লকগুলোর প্রতি আগ্রহ বেশি।

পূর্ব দিকের ব্লকগুলো মিয়ানমারের ব্লক সংলগ্ন। মিয়ানমার যেহেতু অনেক গ্যাস পেয়েছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে যে একই ধরনের ফলাফল আমাদের ব্লকেও পাওয়া যাবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের কি এমন কোনো সুযোগ আছে যে আমাদের যা ব্লক আছে তার মধ্যে কিছু থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ দিলাম, আর বাকিগুলোতে দিলাম না। নাকি সবগুলোই এক সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে?

অধ্যাপক বদরূল: হ্যাঁ, কিছু ব্লকে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আছে। একবারেই যে সব ব্লক থেকে তেল-গ্যাস তুলে ফেলতে হবে, তা তো না। এটা নির্ভর করে সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে।

যারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আমাদেরকে রাস্তার মানুষ মনে করে, আমাদের কথার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। অথচ, দিন শেষে আমরা যেটা বলি সেটাই ঠিক হয়। ২০১৮ সালে সরকার যখন এলএনজি আমদানি শুরু করতে যায়, তখনই বলেছিলাম যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত। তখন তৌফিক এলাহীরা আমাদের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

ডেইলি স্টার: সরকার বারবার বলেছে, রপ্তানির সুযোগ না দিলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হয় না।

অধ্যাপক বদরূল: রপ্তানির সুযোগ না দিলে তারা আসবে কি না, সেটা নির্ভর করছে নেগোসিয়েশনের ওপর। আমাদের দেশের প্রচুর গ্যাস প্রয়োজন—এটা সরকার কেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বোঝাতে পারবে না? তারা যত গ্যাসই তুলুক, তাতে আমাদের পুরো চাহিদা মিটবে না। আমাদের তো নিজস্ব আর কোনো জ্বালানি নেই। আমাদের সবকিছুই গ্যাস দিয়ে চলে। কাজেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তো এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই যে আমরা তাদের উত্তোলন করা গ্যাস কিনব না এবং তাদের আয় করার জন্য এগুলো রপ্তানি করতে হবে।

ডেইলি স্টার: মিয়ানমার ও ভারতের ব্লকগুলোতে কি শুধু গ্যাস পেয়েছে, নাকি সেখানে তেলও আছে?

অধ্যাপক বদরূল: মিয়ানমার মূলত গ্যাস পেয়েছে, ভারতেও তাই। এই অঞ্চলটাতে তেলের চেয়ে গ্যাসের পরিমাণ বেশি। তেল কিছু আছে, কিন্তু সেটা খুবই কম।

ডেইলি স্টার: বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের ব্লকগুলোতে জরিপ করেছে। জরিপে কী পাওয়া গেছে, তা কি আমরা জানি?

অধ্যাপক বদরূল: একটি প্রতিষ্ঠান আছে টিজিএস—তারা জরিপ করে। মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে তারা এই জরিপ করেছে এবং বাংলাদেশ তাদের দিয়ে করিয়েছে। এই জরিপ প্রতিবেদন তারা এখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবে, যাতে তারা কম সময়ে গ্যাস অনুসন্ধানে যেতে পারে।

এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে।

ডেইলি স্টার: তার মানে, ব্লকগুলো কী পরিমাণ তেল-গ্যাস আছে, তা বাংলাদেশও এখনো সঠিকভাবে জানে না।

অধ্যাপক বদরূল: না, জানে না। ওই রকম জরিপ এখনো হয়নি। টিজিএস যে জরিপ করেছে সেটাও প্রাথমিক। খনন না করা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে কতটা গ্যাস আছে।

প্রাথমিক জরিপে সম্ভাবনার একটি বিষয় পাওয়া গেছে। এখন খনন করে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে হবে।

ডেইলি স্টার: স্থলভাগের গ্যাসের ওপরও আপনি একই রকম জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি সুন্দলপুরের ৩ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া গেল। এখন যে গতিতে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে সেটা কি ঠিক আছে? গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার কী পুরোপুরি জোর দিতে পারছে?

অধ্যাপক বদরূল: জোর দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বহুদিন ধরে বলছি, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল খুবই সম্ভাবনাময় এলাকা। কিন্তু, সেদিকে তেমন কিছু হচ্ছে না।

একদিক থেকে বলা যায় যে কিছুটা জোর দেওয়া হয়েছে—তিন বছরের মধ্যে কূপ খনন করার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতগুলো কূপ খননের পরিকল্পনা আগে করা হয়নি। খুব বড় আকারে এখন সেটা নেওয়া হচ্ছে।

এখন দেখতে হবে যে পরিকল্পনাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় কি না। কারণ, এর আগেও ২০১৫-১৬ সালের দিকে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু, কয়েকটা খননের পর পরিকল্পনা হাওয়া হয়ে যায়।

এখন বলা হচ্ছে, দুবছরের মধ্যে ৪৬টা কূপ খনন করা হবে। এগুলোর সবই খনন করা হয়, নাকি হাওয়া হয়ে যায়—সেটাই দেখার বিষয়। আমরা আর শুধু কথায় সন্তুষ্ট হতে চাই না।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) অনেক কম টাকা খরচ করে এবং কম কূপ খনন করে গ্যাস পায়। তারপরও কূপ খননের সময় গ্যাজপ্রম বা অন্যদের কূপ খনন করতে দেওয়া হয়। এই জায়গায় কি আমাদের কোনো পরিবর্তন এসেছে, নাকি একই জায়গায় রয়ে গেছি?

অধ্যাপক বদরূল: আমাদের এই নীতিতে পরিবর্তন হয়নি। বাপেক্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। বাপেক্সকে বাড়ির কাজের ছেলে বানিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, আসল কাজ করে বাইরের লোকজন।

বাপেক্সের যে সম্ভাবনা সেটা খুব শক্ত হাতে ধরতে হবে। তারা কিন্তু অনেক কিছু করতে পারে।

ডেইলি স্টার: বাপেক্সের কি সেই সক্ষমতা আছে?

অধ্যাপক বদরূল: আছে, অবশ্যই আছে। বাপেক্স ইতোমধ্যে অনেকগুলো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। তাহলে কোথায় তাদের সক্ষমতার অভাব? বাপেক্সে যারা কাজ করে, তারা তো আমাদের হাতে তৈরি। এই ছেলেমেয়েরাই যখন আবার অন্য কোনো নামীদামী তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে তখন তাদেরকে সুপার এক্সপার্ট ধরা হয়। কিন্তু, এরাই বাপেক্সে কাজ করার সময় দাম পায় না।

বাপেক্সের কর্মদক্ষতা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে, আমি সেখানে বাধ সাধব। হ্যাঁ, এটা হতে পারে যে তাদের অর্থায়ন, লজিস্টিকে দুর্বলতা আছে। কিন্তু, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা কেবলমাত্র সদিচ্ছার ব্যাপার। সরকার যদি মনে করে যে আমরা বড় একটা ড্রাইভ দিয়ে বাপেক্সকে এসব দিকেও শক্তিশালী করব, তাহলে সেটা সম্ভব।

ডেইলি স্টার: সেখানে তো অর্থের জোগানের প্রশ্ন আসবে।

অধ্যাপক বদরূল: আমরা তো কোথাও টাকার অভাব দেখি না। চারদিকে তো টাকার ছড়াছড়ি। শুধু দেশীয় বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ আসলেই টাকার প্রশ্ন আসবে কেন? এলএনজি কেনার সময় তো টাকার অভাব হয় না।

আমরা সবসময় বলে এসেছি যে এলএনজি কিনতে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এখন দেখেন, সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে আর পারছি না আমদানি করে, ডলার তো শেষ। এখন তারা নিজের গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে।

যারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আমাদেরকে রাস্তার মানুষ মনে করে, আমাদের কথার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। অথচ, দিন শেষে আমরা যেটা বলি সেটাই ঠিক হয়। ২০১৮ সালে সরকার যখন এলএনজি আমদানি শুরু করতে যায়, তখনই বলেছিলাম যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত। তখন তৌফিক এলাহীরা আমাদের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

Comments