পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্য: ভাব ও ভাবনার অন্তরালে
১.
পুলিশ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। বছর জুড়ে তারা আলোচিত। কেন এই আলোচনা, তা জানা জরুরি।
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাচ্ছিলেন ইয়াসমিন। রাতে ইয়াসমিনকে দশমাইল মোড় এলাকায় এক চা দোকানির জিম্মায় নামিয়ে দেন বাসের সুপারভাইজার। কিছুক্ষণ পরই টহল পুলিশ আসে। ইয়াসমিনকে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পুলিশ নিজেদের ভ্যানে তোলে। ইয়াসমিনের ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু পুলিশ জোর করে তাকে তোলে। এক পর্যায়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
২০২০ সালের ২ নভেম্বর। 'বয়কট ফ্রান্স' আন্দোলন চলছে। ঢাকায় ফ্রান্স বিরোধী আন্দোলন করছে হেফাজতে ইসলাম। রাস্তায় হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী। পুলিশ সাধারণত এইধরনের আন্দোলন ঠেকিয়ে দেয়। দাঙ্গা পুলিশ এইসব কাজ দক্ষতার সঙ্গে করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ ছিল নিশ্চুপ। হেফাজত কর্মীরা একসময় মোনাজাত শুরু করে। পুলিশ রাস্তা থেকে হেফাজতের কর্মীদের না সরিয়ে বরং তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেয়। পুলিশের সেইসব ছবি দেখে অনেক মানুষ সমালোচনা করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল, পুলিশের কাজ কী? ক্ষেত্র বিশেষে কেন পুলিশের আচরণ পরিবর্তিত হয়?
২০২২ সালের ২ এপ্রিল। ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার, ইভটিজিং করার, হত্যা চেষ্টার যে অভিযোগ, তা সত্যিই দুঃখজনক।
লতা সমাদ্দার জিডিতে লিখেছেন, 'আমি হেঁটে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম। হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন "টিপ পরছোস কেন" বলেই বাজে গালি দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম তার গায়ে পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর বসে আছেন। প্রথম থেকে শুরু করে তিনি যে গালি দিয়েছেন, তা মুখে আনা, এমনকি স্বামীর সঙ্গে বলতে গেলেও লজ্জা লাগবে। ঘুরে ওই ব্যক্তির মোটরবাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখনো তিনি গালি দিচ্ছেন। লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। একসময় আমার পায়ের পাতার ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান।' (প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০২২)
এই ঘটনায় সরব গোটা দেশ। একপক্ষ বিচার দাবি করলেও আরেকটি পক্ষ এই ঘটনা বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে। ঠিক সেই সময় ভয়ানক নোংরা ভাষায় স্ট্যাটাস দেয় সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
২০২২ সালের ৪ এপ্রিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, লিয়াকত আলী তার ফেসবুকে লেখেন, 'প্রসঙ্গ: টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানি। ফালতু ভাবনা: (১৮+) টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানি করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ ভাবনায় শঙ্কিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোশাক পরে চলাফেরা করে তার মধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের ওপর দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারণে বাকি অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পরার কারণে কোনো নারীকে হয়রানি করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন?'
লিয়াকত আলী এই স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণ পর শুরু হয় সমালোচনা। সমালোচনার মুখে স্ট্যাটাসটি ডিলিট করে দেন তিনি। ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক আর সিলেট পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মনস্তত্ত্ব কিন্তু একই রকম। তারা ২ জন আলাদা পদে চাকরি করেন বা করতেন, কিন্তু একই দৃষ্টিতে নারীদের দেখেন।
পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিৎসা জরুরি। এটা দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়। কারণ যে মানুষটি সারাদিন অপরাধ বা অপরাধী নিয়ে থাকেন বা থাকছেন, তার মানসিক অবস্থার উন্নতি না হলে তিনি কখনো ইয়াসমিনদের তুলে নিয়ে যাবেন, কখনো লতা সমাদ্দারদের টিপ-কাপড় নিয়ে কথা বলবেন, আবার কখনো বা নারীর ব্রায়ের ফিতা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে আছে, তা খুঁজে বেড়াবেন।
২.
২০১৮ থেকে ২০২০ সাল, এই ৩ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের মোট ১৮ জন সদস্য আত্মহত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো বলছে। এটা বেশ বিস্মিত করার মতো বিষয়। পুলিশ কেন আত্মহত্যা করবে? তাদের সংকট কোথায়? এই প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরছে।
এই ১৮ জন সদস্যের সবাই কনস্টেবল ও এসআই পদমর্যাদার। তার মানে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আত্মহত্যা করছেন না, করছেন নিম্নপদস্থরা। কেন?
এই আত্মহত্যার ঘটনায় স্ব স্ব ইউনিটে তদন্ত কমিটি হয়, তদন্ত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, 'পারিবারিক কলহ'র কারণে তারা আত্মহত্যা করেছেন। কেউ ঘুমের ওষুধ খেয়েছে, কেউ নিজের রাইফেলের গুলি নিজের গলায় চালিয়েছে। প্রশ্ন হলো, যে প্রশিক্ষিত বাহিনী অপরকে রক্ষার দায়িত্বে, তাদেরকে কেন এভাবে আত্মহত্যা করতে হলো? আরও প্রশ্ন হলো, পুলিশের কেন পারিবারিক কলহ বাড়ছে? সংকট কোথায়?
চাকরিতে পুলিশ কনস্টেবলের সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সদর দপ্তরের একটি জরিপ হয়। জরিপ বলছে, ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ পুলিশ কনস্টেবল প্রয়োজনীয় সময় ছুটি না পাওয়াকে তাদের চাকরির বড় সমস্যা মনে করেন। উপপরিদর্শকদের (এসআই) ক্ষেত্রে এই হার ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ পুলিশ কনস্টেবল বলছেন, তারা পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না।
জরিপের ফলাফল আরও বলছে, থানায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খারাপ ব্যবহারকে সমস্যা হিসেবে বলেছেন ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পুলিশ সদস্য। আরআইকে ঘুষ না দিলে ছুটি হয় না বলে অভিযোগ করেছেন ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। শতভাগ পুলিশই মনে করেন, তাদের ডিউটি শিফট ৮ ঘণ্টার হওয়া উচিত।
পুলিশ নিজেই যেহেতু এই জরিপ করেছে তাই এতে পূর্ণ আস্থা রাখা যায়। এই আলোচনার শুরুতে যে সংকট বা প্রশ্ন এসেছিল তার সমাধান পাওয়া যেতে পারে পুলিশের এই জরিপ থেকে।
পুলিশের অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাদের কর্মকাণ্ড যেমন আলোচিত, পাশাপাশি সমালোচিত। সাধারণ মানুষকে পুলিশ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেগেটিভ মন্তব্যই বেশি পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, কেন সাধারণ মানুষ পুলিশের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়? কেন সাধারণ মানুষের অভিযোগ বা মন্তব্যে কেউ কর্ণপাত করছে না? এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর সেবা নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট হলেও অনেক জায়গায় বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন: ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলার সময় ৯৯৯-এ একাধিকবার কল দিয়েও কোনো সেবা পাওয়া যায়নি। এখানে ২টি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমটি হলো, রাষ্ট্র চাইলে ৯৯৯ বা পুলিশের সেবা আরও ভালো করতে পারে। দ্বিতীয়টি হলো, রাষ্ট্রের অনিচ্ছায় ৯৯৯ বা পুলিশের সেবা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে এবং পুলিশের প্রতি অনাস্থা তৈরি হতে পারে।
এই সময়ে এসে যে বিষয়টি জরুরি তা হলো, পুলিশের আধুনিকায়ন, যে আধুনিকায়নে পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই আধুনিকায়নের ওপর নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দক্ষতা। কারণ, সাধারণ জনগণ বা ভুক্তভোগী মানুষকে সরাসরি সেবা দিচ্ছে যে পুলিশ, তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি অবশ্যই জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পুলিশ সদস্যের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, জন এম. ভিওলান্টির কথা। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলোতে এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিষয়ক অধ্যাপক ও গবেষক।
তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন 'পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্য' বিষয়ে গবেষণা করে। তিনি নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশে ২৩ বছর চাকরি করেছেন। এখন তিনি পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করছেন। ১৯৯৬ সালে 'পুলিশ সুইসাইড' শিরোনামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া, তার জনপ্রিয় বইয়ের মধ্যে অন্যতম হলো, 'আন্ডার দ্য ব্লু শ্যাডো: ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ার্যাল পার্সপেক্টিভস অন পুলিশ সুইসাইড', 'অন দ্য এজ: রিসেন্ট পার্সপেক্টিভস অন পুলিশ সুইসাইড', 'পুলিশ ট্রমা: সাইকোলজিক্যাল আফটারমেথ অব সিভিলিয়ান কমব্যাট', 'পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ইন্টারভেনশান: চ্যালেঞ্জস, ইস্যুজ অ্যান্ড পার্সপেক্টিভস'।
ভিওলান্টি তার গবেষণায় বিশদভাবে লেখেন, পুলিশ কেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সেই গবেষণায় ১০টি বিষয় প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—
ক. পেশাগতভাবে ভয়ানক ব্যস্ত থাকায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা ও বৈবাহিক জীবনে টানাপড়েন।
খ. পেশাগত বিষণ্ণতা বৃদ্ধি।
গ. আইনি ঝামেলা-অভ্যন্তরীণ তদন্ত জটিলতা।
ঘ. হতাশায় অ্যালকোহল বা মাদক সেবন।
ঙ. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক সমস্যা।
চ. মানসিক সাহায্য চাওয়ার ভয়।
ছ. আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাপ্যতা।
জ. মানসিক সহায়তার অভাব।
ঝ. মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের প্রতি অবিশ্বাস।
ঞ. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই ১০টি কারণ বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের বেলায়ও একই। মূল বিষয় হলো, পুলিশের আধুনিকায়নে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
৩.
২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, মাদকাসক্তির কারণে ডিএমপির ১০৬ জন পুলিশ সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। পুলিশের নিজস্ব অনুসন্ধানে ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার ১১৩ জনকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ওই ১০৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, কেন ১১৩ জন পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত হলেন? বিষয়টা সরলভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্বভাবতই, মানুষ হতাশ হলে মাদকে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তখন তারা মনে করেন, মাদক সেবন করলে মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যেতে পারে, স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। একই ঘটনা ঘটছে পুলিশের ক্ষেত্রেও।
মাদক নিয়ে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। কিন্তু মাদক থেকে সবাইকে নিরাপত্তার দেওয়ার কথা পুলিশের, সেখানে তারাই কেন মাদকের মতো স্থূল বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন? এটাকেও সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই।
ভিওলান্টি পুলিশের মানসিক সমস্যার মধ্যে যে ১০টি বিষয় উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও অসংখ্য বিষয়। এগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন: পুলিশ সদস্যের ধর্ষণ প্রবণতা, নিজেদের মধ্যকার কোন্দল, ধর্মীয় কোন্দল, নারী পুলিশ সদস্যের নিরাপত্তা, শারীরিক শ্রম, বেতন-ভাতা ও ছুটিজনিত জটিলতাসহ অনেক বিষয়।
হুট করে এসব বিষয়ের সমাধান হবে, এইটা আশা করা যায় না। তবে পুলিশকে আরও বড় পরিসরে সক্রিয় করতে হলে এসব বিষয়ের সুরাহা করা ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই।
২০১৮-১৯ সালের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ বা ২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত এবং ১০০ জনের মধ্যে ৭ জন বিষণ্ণতায় ভুগছেন। অথচ অবাক করার বিষয় হলো, এর ৯২ শতাংশই রয়েছে চিকিৎসার বাইরে। অন্যদিকে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুও মানসিক রোগে ভুগছে বলে জরিপে উঠে এসেছে, যাদের ৯৪ শতাংশ কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে, ২০২১ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এই ১০১ জনের মধ্যে তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী।
এই যদি হয় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, তাহলে পুলিশের ক্ষেত্রে তা আরও ভয়াবহ হওয়ার কথা। কারণ যে মানুষটি দিনের বেশিরভাগ সময় অপরাধীদের নিয়ে থাকছেন, তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা পতিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জোরালোভাবে কাজ করা জরুরি।
এই বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা:
ক. পুলিশের জন্য আলাদা মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট স্থাপন।
খ. দেশ ও দেশের বাইরের সেরা মানসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা সেবা প্রদান।
গ. নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
ঘ. মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না হলে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান।
ঙ. পুলিশের অন্তঃকোন্দল দূর করা।
চ. পেশাদারি মনোভাব গঠনে আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেওয়া।
ছ. অ্যালকোহল বা মাদকসেবীদের আলাদাভাবে সেবা প্রদান।
জ. বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
ঝ. ধর্মীয় বিরোধ দূর করা বা ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান।
ঞ. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জরুরি সেবা চালু করা।
ট. ছুটির বিষয়টি সহজীকরণ।
আমাদের মন, আচরণ ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য। আমরা কী চিন্তা করছি, কী অনুভব করছি এবং জীবন সামলাতে কোন পন্থা অবলম্বন করছি, এর সবই মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত। তাই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এখন সময়ের দাবি। সার্বিকভাবে এসব বিষয়ে বিশদে কাজ করা জরুরি। এতে করে পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। পুরো বিষয়টি হয়তো একদিনে হবে না, কিন্তু ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান মিলবে।
বিনয় দত্ত; কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক; [email protected]
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments