আজ বন্ধুত্ব উদযাপনের দিন
"আপনার বন্ধু সেই ব্যক্তি যে আপনার সম্পর্কে সব জানে এবং এখনও আপনাকে পছন্দ করে।" – এলবার্ট হুবার্ড
এই বন্ধুত্বের জন্য আলাদা কোনো দিন হয় না। বন্ধুদের দিন বছরের সব দিনগুলো। তাও একটি বিশেষ দিন রয়েছে বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য। তা হলো আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস (International Friendship day)।
আজকে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস।
ডাক্তার রামন আর্টেমিও ব্রাকোই প্রথম ১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই প্রস্তাব রাখেন ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেডে। সেদিন থেকেই ৩০ জুলাইকে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
২০১১ সালের ২৭ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে "বিশ্ব বন্ধু দিবস" হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মানুষের বন্ধুত্বের একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ঘোষণা করে।
২০১১ সালে ২৭ এপ্রিল জেনারেল অ্যাসেম্বলি অফ দ্য ইউনাইটেড নেশন ৩০ জুলাই তারিখটিকে অফিসিয়ালি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে ঘোষিত করে।
বন্ধু দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে পালন করা হয়। তবে এখনও বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববারই বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এই দিনটির উদ্দেশ্য বন্ধুত্ব উদযাপন করার পাশাপাশি নতুন বন্ধুদের আরও আপন করে নেওয়া। বন্ধু হলো আমাদের জীবনে সেই বিশেষ মানুষ, যাকে চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়, বিপদে পড়লে যার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা করা যায়, বলে ফেলা যায় এমন অনেক কথা যা অন্য কাউকেই বলা যায় না।
আমরা অনেকেই এই দিনটা খুব আনন্দে এবং মজা করে কাটাই। বন্ধুদের ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড পড়িয়ে কিংবা তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সেলিব্রেট করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই দিনটির ইতিহাস কী? কবে এবং কেন এই দিনটি উদযাপন করা হয়।
আসলে বন্ধুত্ব দিবসটির সূচনা হয়েছিল ১৯৩০ সালের ২ আগস্ট হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হলের মাধ্যমে। যখন লোকেরা তাদের বন্ধুত্ব দিবসটি ছুটির মধ্য দিয়ে উদযাপন করত।
১৯২০ সালে এই দিনটি গ্রিটিং কার্ড ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল। যেখানে অনেক গ্রাহকেরাই মনে করেছিল যে, গ্রিটিংস কার্ডের প্রচার করার জন্যই এই দিবসটি আনা হয়েছে। এটিকে সেই সময় বাণিজ্যিক কৌশল বলেই মনে করেছিল অনেকে। ১৯৪০ এর দশকে মার্কিন মুলুকে প্রচুর ফ্রেন্ডশিপ ডে কার্ড পাওয়া গিয়েছিল। যদিও ইউরোপে এরকম কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে এশিয়ান দেশগুলো এই দিনটি পালন করা শুরু করে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বন্ধুত্ব দিবসের সম্মানে, জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল কফি আনানের স্ত্রী নান আনানকে জাতিসংঘে বিশ্বের বন্ধুত্বের রাষ্ট্রদূত হিসাবে উইনি পোহকে নামকরণ করেছিলেন।
১৯৫৮ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম এই দিনটি সেলিব্রেট করা হয়। ডাক্তার রামন আর্টেমিও ব্রাকো ২০ জুলাই তার বন্ধু পুয়ার্ত পিনাস্কের সঙ্গে প্রথম ডিনার করে এই দিনটি পালন করেন। যদিও অনেক দেশে এই দিনটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালন করা হয়। যেমন- ভারতে এই দিনটি পালন করা হয় আগস্ট মাসের প্রথম রোববার। ব্রাজিল, উরুগুয়েতে ২০ জুলাই।
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ইউনেস্কো কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবের একটি উদ্যোগ। এটি শান্তির সংস্কৃতিকে মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণের একটি গোষ্ঠী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যা সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৭ সালে এটি গ্রহণ করে।
বাইবেল অনুসারে, বন্ধুত্ব হলো মানুষের বিশ্বাস, আস্থা এবং সাহচর্যের বন্ধন। 'মহাভারতে'ও বন্ধুত্বের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। ভগবান কৃষ্ণ বন্ধুত্বের বিভিন্ন ভূমিকা দেখিয়েছেন রোমান্স, ভ্রাতৃত্ব, সুরক্ষা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে।
শুধু টিনএজ বা শৈশবেই বন্ধু থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি বন্ধুরা বৃদ্ধ বয়সেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একক পরিবারে কখনও কখনও দম্পতিরা একাকী বোধ করতে পারে তাই তাদের চারপাশে বন্ধু থাকলে জীবন আনন্দময় এবং আকর্ষণীয় হয়।
অতএব, আমরা বলতে পারি যে সত্যিকারের বন্ধুরা জীবনকে আনন্দে পূর্ণ করে তোলে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, "আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।"
শুভ বন্ধুত্ব দিবস!
Comments