‘মানসিক স্বাস্থ্যকে বাংলাদেশে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না’

Naim Sheikh

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেও পরিসংখ্যান বেশ বিবর্ণ নাঈম শেখের৷  খেলেছেন স্রেফ ১০৩.৪২ স্ট্রাইকরেটে। স্বাভাবিকভাবে কুড়ি ওভারে তার থেকে চোখ সরিয়ে নেন জাতীয় নির্বাচকরা। তবে সম্প্রতি দুটি টি-টোয়েন্টি আসরে সেরা ঝলক দেখান বাঁহাতি ওপেনার।  জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ (৩১৬) এবং  বিপিএলেও করেন সর্বোচ্চ (৫১১)  রান। স্ট্রাইকরেটও বেশ ভালো ছিলো এবার। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে নাঈম নিজের বদলে যাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। ওয়ানডেতে যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপও প্রকাশ করেন তিনি।

ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের পর আপনার প্রত্যাশা কী?

নাঈম শেখ: সত্যি কথা বলতে, জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা সব খেলোয়াড়েরই চূড়ান্ত লক্ষ্য। আমি যদি জাতীয় দলে খেলার প্রত্যাশা রাখি বা মনে করি যে আমার দলে সুযোগ পাওয়া উচিত, আর যদি তা না হয়, তাহলে আমার নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমার মনে সন্দেহ তৈরি হবে। আমি এই চিন্তাগুলো মাথায় আনতে চাই না... বর্তমানে, আমি পরের টুর্নামেন্টে [ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ] ভালো পারফর্ম করার পরিকল্পনা করছি এবং আমার জাতীয় দলে খেলতেই হবে এমন প্রত্যাশা নেই।

সুযোগ না পাওয়া আপনি নিজের দুর্ভাগ্য মনে করেন?

নাঈম শেখ: আপনি গত দুই বা তিন মৌসুমের আমার পারফরম্যান্সের কথা বলছেন, কিন্তু তখন জাতীয় দলে আমি কতগুলো সুযোগ পেয়েছিলাম?(ওয়ানডেতে) সেই সময় আমার মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞেস করেনি। যখন আমি সেরা ফর্মে ছিলাম, তখন আমি ওয়ানডেতে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। কেন পারিনি, কেউ জানতে চায়নি। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না এবং মনে করি যে আমি নিজেই মানসিকভাবে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারিনি। একটি টুর্নামেন্টে [ডিপিএল ২০২৩-এ] ৯০০-এর বেশি [৯৩২] রান করাটা সহজ কথা নয়। বাংলাদেশে, মানসিক স্বাস্থ্যকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে এটি কিছু ক্রিকেটারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সবার উপর নয়।

আমি যখন রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে খেলেছি, তখন আপনি আমার পারফরম্যান্স দেখতে পারেন। কিন্তু যখন আমি হাথুরুসিংহের অধীনে ছিলাম, তখন আমি বলতে পারিনি যে আমি জাতীয় দলে পারফর্ম করার জন্য মানসিকভাবে খুশি ছিলাম। আমি জাতীয় দলে চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারিনি। আমি সবসময় অতিরিক্ত চাপে ছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়নি যে কোচ আমাকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল করতে চেয়েছিলেন। আমি সেই ওয়ানডেগুলোতে [ছয়টি ম্যাচ] ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারিনি এবং সবসময় ভয় পেতাম যে ব্যর্থ হলে বাদ পড়ব। মনোভাবটা এক ধরনের হুমকি ছিল - পারফর্ম না করলে বাদ দেওয়া হবে।

আপনার মানসিকতার পরিবর্তন কিভাবে হয়েছে?  

নাঈম শেখ: আমি এমন একটি মানসিকতা তৈরি করেছি যে, আপনি যতই বড় কোচ হন না কেন, আপনি আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারবেন না। কিন্তু দুই বা তিন বছর আগে আমার মধ্যে এই মনোভাব ছিল না যেমনটা এখন আছে। আমি পারফর্ম করি বা না করি, আমি জানি কীভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে হয়। আমি মনে করি পেশাদার এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়ই সুসংগঠিত থাকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় দলের বাইরে থাকলে প্রস্তুতি নেওয়া কতটা কঠিন?

নাঈম শেখ: সত্যি কথা বলতে, আমার নিয়মিত কাজ হল শীর্ষ পর্যায়ে পারফর্ম করা এবং সবসময় জাতীয় দলের নজরে থাকা। যখন আমাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তখন আমার বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামে বা অন্য কোনও ক্যাম্পে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু আমাকে কোথাও বিবেচনা করা হয়নি। তাহলে আমি কী বার্তা পেলাম?

বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামে দুই ধরনের ক্রিকেটার থাকবে: একজন যারা জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছে এবং অন্যজন যারা জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর, আমি নিজেকে কোথাও খুঁজে পাইনি।

আসলে, যখন আমি শীর্ষ পর্যায়ে পারফর্ম করেছি এবং আমার পারফরম্যান্সের মূল্য দেওয়া হয়নি, তখন এটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টের মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিন্তু দেশে বিপিএল বা ডিপিএলের চেয়ে ভালো কিছু কি আপনার কাছে আছে? আমার সেই প্রশ্ন করার অধিকার নেই, তবে আমি যা করতে পারি তা হল আমার দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং আমার পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা।

আপনার স্ট্রাইক রেট নিয়ে আগে সমালোচনা হয়েছিল। আপনি কি এ নিয়ে কাজ করেছেন?

নাঈম শেখ: শুধু এই বিপিএলেই নয়, আমি এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছি। আমি গত তিন বছর ধরে মাইন্ড ট্রেনিং করছি। কিন্তু এই জিনিসগুলো আপনার খেলায় প্রয়োগ করতে সময় লাগে। এর বাইরে, আমার পরিবারও আমাকে নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করেছে। লোকেরা আমার সম্পর্কে ভালো এবং খারাপ উভয় কথাই বলবে, তবে আমি এখন তা নিয়ে বেশি ভাবি না। আমি মনে করি আমার পরিপক্কতার স্তর অনেক বেড়েছে এবং আমি সবকিছু সহজভাবে নিতে চাই।

 

Comments

The Daily Star  | English
Remittance Inflow Over A Decade

Remittance in ten months surpasses FY24 total

Remittance inflows in the first ten months of the current fiscal year have already exceeded the total receipts of FY 2023-24, providing a much-needed breather to the economy and easing a severe foreign currency crisis.

12h ago