আমিরাতের বিপক্ষে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় জিতল বাংলাদেশ
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দরকার ছিল ১১ রান। চরম উত্তেজনার সময়ে লোপ্পা ক্যাচ ছেড়ে হারের শঙ্কা জাগিয়েছিলেন এর আগে বাজে বল করা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তবে আমিরাতের টেল এন্ডাররা বাকিটা সারতে না পারায় বুকে কাঁপন ধরলেও স্বস্তির জয় পেয়েছে নুরুল হাসান সোহানের দল।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৭ রানে হারায় সফরকারীরা। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ১৫৮ রানের জবাবে ১৫১ পর্যন্ত যেতে পারে আমিরাত।
বাংলাদেশের জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান আফিফ হোসেন ধ্রুবর। আগে ব্যাটিং পেয়ে শুরুতে উইকেট হারিয়ে বেড়েছিল চাপ। বিপদে পড়া পরিস্থিতি থেকে দারুণ ব্যাট করে দলকে লড়াইয়ে ফেরান আফিফ হোসেন। তার ৫৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে আসে দেড়শো ছাড়ানো পুঁজি।
আমিরাতের জুতসই শুরুর পর বল হাতে নিয়ে জ্বলে উঠেন মেহেদী হাসান মিরাজ, দারুণ ফিল্ডিংও করেন তিনি। অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ম্যাচের মোড় ঘোরানো দুটি ক্যাচ লুফেছেন মিরাজ। ৩ ওভার বল করে ১৭ রান দিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৩ উইকেট নেন তিনি।
রান তাড়ায় শুরুটা মন্দ হয়নি আমিরাতের। দুই ওপেনারের ২৭ রানের জুটির পর দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে কাটা পড়েন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তবে চিরাগ সুরির ব্যাটে ৬ ওভারে ৪৩ নিয়ে আসে তারা।
পাওয়ার প্লের পরও বাংলাদেশের চিন্তা বাড়িয়ে ব্যাট চালাচ্ছিলেন সুরি। মিরাজের বলে রিভার্স সুইপেও বাউন্ডারি পেয়ে গিয়েছিলেন। আরও মারার নেশা কাল তার। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে হয়ে যান স্টাম্পিং। ২৪ বলে ৭ চারে ৩৯ করে যান তিনি।
৬৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট পড়লেও ম্যাচে ছিল তারা। খানিক পর আরিয়ান লারকাকেও ফেরান মিরাজ। ১৫ বলে ১৯ করে ফেরেন লারকা।
খানিক পর ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মিরাজ। মোস্তাফিজের শর্ট বলে স্কয়ার কাট করেছিলেন বলে সিপি রিজওয়ান। পয়েন্টে পাখির ছোবলে তা হাতে জমান মিরাজ।
১ উইকেটে ৬৬ থেকে ৪ উইকেটে ৮৩ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। মিডল অর্ডার ধসে যাওয়ায় ম্যাচের লাগাম ছুটে গিয়েছিল আমিরাতের। সেটা একদম বাংলাদেশের কাছে চলে যায় মিরাজের আরেক উইকেটে। ভ্রিতিয়া অরভিন্দকে নিজের বলে দারুণ ক্যাচে ফেরান মিরাজ। ৯৮ রানে পড়ে যায় তাদের ৬ উইকেট।
উইকেট পতনের মাঝে বাড়তে থাকে রানরেটের চাপও। আশা যখন একদম নিভু নিভু তখন আবার যেন দপ করে জ্বলে উঠা।
৮ম উইকেটে কার্তিক মেইয়াপ্পনকে নিয়ে ১৫ বলে ২২ তলার পর জুনায়েদ সিদ্দিকিকে নিয়ে নবম উইকেটে ১৬ বলে ২৭ যোগ করার পথে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন আয়ান খান। তাদের জুটির পথে অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের উদারতাও ছিল। মোসাদ্দেক, সাইফুদ্দিনরা ছাড়েন সহজ সুযোগ।
শেষ ৩ ওভারে জেতার জন্য ৩৬ দরকার ছিল আমিরাতের। শরিফুল ইসলামের ১৮তম ওভারে তারা নিয়ে নেন ১৪ রান। সাইফুদ্দিনের পরের ওভার থেকে চলে আসে ১০ রান। শেষ ওভারে ১১ রানের প্রয়োজনটা আর নাগাল পাননি তারা।
শরিফুলের প্রথম বলে আসে ২ রান। পরের বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন সাইফুদ্দিন। পরের দুই বলেই পড়ে যায় ২ উইকেট। যে দুজন খানিক আগে ক্যাচ ছেড়েছিলেন, সেই মোসাদ্দেক ও সাইফুদ্দিনের নিজেদের ভুল ঠিক করেন এই দফায়।
টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে শুরুটা একদম ভালো হয়নি বাংলাদেশের। পেস বলে বরবরের মতো অস্বস্তি দেখা যাচ্ছিল মিরাজের। তবে তার বেশ আগেই ফেরেন সাব্বির রহমান।
এশিয়া কাপে ফেরার ম্যাচে এক চার মেরেই আউট হয়েছিলেন। এবার আর রানের খাতা খোলা হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে সাবির আলির বলে ঠিকমতো পুল করতে পারেননি। উপরের কানায় লেগে ক্যাচ যায় মিড উইকেটে। ৩ বল খেলে খালি হাতে ফেরেন সাব্বির।
তিনে নেমে লিটন দাস শুরুতেই ছিলেন রানের খোঁজে। দ্রুত পেয়ে যান একাধিক বাউন্ডারি। বাঁহাতি স্পিনার আয়ান খানকে স্লগ সুইপে তৃতীয় বাউন্ডারি মেরে দুই অঙ্কে চলে গিয়েছিলেন দ্রুত। কিন্তু ভালো কিছুর আভাস দিতেই নিভেছেন তিনি। আয়ানের বলে স্লগ সুইপে ছক্কার চেষ্টায় লিটন সহজ ক্যাচ তুলে দেন।
ধুঁকতে থাকা মিরাজ কাট করে একটা বাউন্ডারি পেলেও পেস সামলানো মুশকিল হচ্ছিল তার। জাওয়ার ফরিদের বলে এগিয়ে এসে পুল করতে গিয়ে পুরো ব্যাটে নিতে পারেননি। টপ এজ হয়ে বোলারের হাতেই যায় ক্যাচ। ১৪ বল খুইয়ে ১২ রান করেন মিরাজ। ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের আগেই হারাতে পারত আফিফকেও। সাবিরের বলে পুল করে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ফিল্ডার সেই ক্যাচ রাখতে না পারলে ব্যক্তিগত ৬ রানে জীবন পান তিনি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলে ৪২ রান।
পাওয়ার প্লের পরও চলে ভোগান্তি। লম্বা সময় পর দলে ফেরা ইয়াসির আলি বোল্ড হয়ে যান লেগ স্পিনার কার্তিক মেইয়াপ্পনের বলে। অষ্টম ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিকহারা দলকে দিশা দেন আফিফ।
৩৮ বলে তুলেন ফিফটি। ৬৩ রানে আরেকবার জীবন পেলেও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যান তিনি। আরেক পাশে সোহান শুরুতে ধুঁকলেও পরে পুষিয়ে করেন ২৫ বলে ৩৫।
Comments