মাঠ থাকলেও অনুশীলন করার সুযোগটা পেতেন না তৃষ্ণা
ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে আগেই কিন্তু টি-টোয়েন্টি অভিষেকের জন্য ফারিহা তৃষ্ণার অপেক্ষা যেন ফুরচ্ছিলই না। আবুধাবিতে বিশ্বকাপ বাছাইতে বদলি হিসেবে গিয়ে সুযোগ পাননি খেলার। এশিয়া কাপেও প্রথম দুই ম্যাচ ছিলেন একাদশের বাইরে। অবশেষে সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত। বাঁহাতি এই পেসার ছোট ছোট স্যুয়িং দিয়ে কাবু করেন মালয়েশিয়ান ব্যাটারদের। অভিষেকে হ্যাটট্রিক কীর্তিকে নিজেকে করলেন উদ্ভাসিত। তবে তার উঠে আসার পথটাও সহজ নয়, পঞ্চগড়ে মাঠ থাকলেও ছেলেদের ক্রিকেটের দাপটে খুব একটা অনুশীলনের সুযোগ পেতেন না।
সিলেটে মেয়েদের এশিয়া কাপে বৃহস্পতিবার তৃষ্ণার হ্যাটট্রিকে মালয়েশিয়াকে মাত্র ৪১ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ১২৯ রান করে ম্যাচ জেতে ৮৮ রানে। ৪ ওভার বল করে ১২ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন তৃষ্ণা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে দেশের ক্রিকেটে উঠে এসেছেন তিনি। প্রান্তিক সেই অঞ্চলে মেয়েদের খেলাধুলো করার পরিবেশটা ছিল না সহজ। জানালেন মাঠ থাকলেও চেয়ে দেখে তৃষ্ণার্ত হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, 'পঞ্চগড়ে ক্রিকেটটা মেয়েদের জন্য অনেক কঠিন। ক্রিকেট বলতে ছেলেদের ছাড়া মেয়েদের কিছুই নেই। আমাদের মাঠ আছে অথচ অনুশীলন করা যাচ্ছে না। সমর্থনের কথা যদি বলেন, তাহলে বাবা-মায়ের অনেক সমর্থন পেয়েছি। ক্রিকেটে আসার পেছনে আমার স্কুলের শিক্ষক আমিনুদ্দিন স্যারের অনেক সাহায্য ছিল।'
২০২১ সালে আলোচনায় আসেন তৃষ্ণা। বাংলাদেশ গেমসে সিলেটের মাঠেই ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে হইচই ফেলে দেন। পরে জাতীয় দলে ঢুকে খেলছেন ওয়ানডে, এবার টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সেই সিলেটে বলেই ভেতরে একটা বিশ্বাস ছিল তার, 'এই উইকেটটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। কারণ যখনই আমি খেলি, ভালো কিছু চেষ্টা করি অথবা হয়। অভিষেক ম্যাচেই বিশ্বাস ছিল ভালো কিছু হবে বা করতে হবে।'
হ্যাটট্রিকের উইকেটও তার এসেছে একই কায়দায়। ডানহাতি ব্যাটারদের লেন্থে বল ফেলে ভেতরে ঢুকিয়েছেন, টপটপ পড়েছে উইকেট। জানালেন স্পটে বল ফেলাই ছিল তার লক্ষ্য, 'বল আমি নিজের জায়গায় করার চেষ্টা করেছি। কোনো ভ্যারিয়েশনের চেষ্টা করিনি। শুধু স্বাভাবিকভাবে জায়গা ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি।'
'আমার শক্তির জায়গা হচ্ছে আমার স্পট বল। সহজাতভাবে আমি আউটস্যুইং পাই, যেটা বাঁহাতিদের বেলায়। ডানহাতিদের বেলায় যেটা ইনস্যুয়িং হয়। আমি যদি আমার জায়গায় বল করার চেষ্টা করি আমার বলগুলো ভালই হয়। কাজেই আমি আমার শক্তির জায়গা মনে করি স্পট বলটাই।'
উইনফ্রেড দুরাইসিঙ্গামকে বোল্ড করে প্রথম উইকেট পাওয়ার পর মাস ইলিয়াসকে এলবিডাব্লিউ করে বসেন হ্যাটট্রিকের সামনে। তখন তাকে একই কায়দায় পরের বলটি করার পরামর্শ দেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি, 'হ্যাটট্রিক বলটাতে অধিনায়কের নির্দেশনা ছিল যেন আমি লেন্থ বলটাই করি। যেহেতু আমার লেন্থ বলে দুইটা উইকেট পড়েছে। কাজেই লেন্থ বল ওদের জন্য কঠিন হবে।'
Comments