ইতিহাস গড়া থাইল্যান্ডে যেভাবে হয় ক্রিকেট পাঠ
প্রবল বৃষ্টিতে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার কষ্টে বাংলাদেশ দল যখন যন্ত্রণা বিদ্ধ হয়ে মাঠ ছাড়ছে, হোটেলে তখন উৎসবে মাতোয়ারা থাইল্যান্ড দল। অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির আনন্দে উদ্বেল তারা। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছে মেয়েদের ক্রিকেটের উদীয়মান দেশটি। অথচ দেশটির বেশিরভাগ মানুষের এই খেলা সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই।
মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পরই থাইল্যান্ড পেয়ে যায় সেমির টিকেট। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দেয় তারা। বৃষ্টি না হলে আমিরাতকে যেকোনো ব্যবধানে হারালেই সেমিতে যেত বাংলাদেশ।
আপাতত স্বাগতিকদের অন্ধকার ঘিরে ধরলেও আলোর রোশনাই থাই শিবিরে। দেশটিতে ক্রিকেটের বিস্তারে ভূমিকা উপমহাদেশীয়দের। দেশটির ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা সবারই শেকড় উপমহাদেশে। তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো দলের খেলোয়াড় সবাই থাইল্যান্ডের আদি মানুষ। অন্য সহযোগী দেশগুলোর মতো অভিবাসীদের উপর ভর করতে হয়নি তাদের।
থাইল্যান্ডের নারী দলটির প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন ভারতীয় হার্শাল পাঠক। তিনি জানালেন স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেটের নিয়ম শেখানো থেকে কাজ শুরু করে সেখানকার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, 'মেয়েদের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় চুক্তি ভুক্ত। গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা চুক্তি ভুক্ত। ওখানে একটা স্কুল সিস্টেম চালু আছে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে বোর্ড থেকে ক্রিকেট শেখানো হয়। অন্য ক্রিকেট জাতির মতো নয় থাইল্যান্ড যে ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট দেখে বড় হবে। ওদের আসলে প্রথমে খেলাটা বোঝাতে হয়। কীভাবে ব্যাট ধরতে হয় বলতে হয়।'
'আমি অ্যাশোশিয়েনশনকে ধন্যবাদ দিব। তারা শুরু করেছ। স্বেচ্ছাসেবকরা গিয়ে তৃণমূলে গিয়ে ক্রিকেট শেখায়। বিশ্বাস করুন এটা সহজ না। প্রথমে খেলার নিয়ম শিখিয়ে পরে তাদের খেলতে নামানো এটা সহজ কাজ না।'
এই টুর্নামেন্টেই খেলতে আসা সংযুক্ত আরব আমিরাত দলের সবাই ভারত ও শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত। মালয়েশিয়া দলেও আছে তেমন। থাইল্যান্ড সেদিক থেকে একদম আলাদা, 'থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এখানে সবাই এথনিক খেলোয়াড়। সবাই থাইল্যান্ডের শেকড়ের মানুষ। এর মানে হচ্ছে ক্রিকেটটা বিস্তার লাভ করছে।'
মেয়েদের দল থাকলেও থাইল্যান্ডে এখনো ছেলেদের দল নেই। হার্শাল জানান সেখানকার স্থানীয়দের দিয়ে সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে, 'এই মুহূর্তে ছেলেদের দল নেই। তবে পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে কাজ করা হচ্ছে। আগামীতে হয়ত দাঁড়াবে।'
আপাতত একটি মাঠ ও ছোট এক ইনডোর দিয়ে চলছে থাইল্যান্ডের ক্রিকেট কার্যক্রম। স্কুলের মেয়েদের নিয়ম শিখিয়ে ক্রিকেটে নিয়ে আসছেন সেখানকার কর্তা ব্যক্তিরা। এই অবস্থায় এশিয়া কাপের মতো বড় আসরের সেমিতে যাওয়া তাদের ক্রিকেট বিস্তারে রাখতে পারে বড় ভূমিকা।
Comments